সরকারের মেয়াদ যত ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক সংকট তত জটিল আকার ধারণ করছে। আগামী নির্বাচনকালীন সরকার কোন পদ্ধতির হবে মূলত এই প্রশ্নে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক জটিলতা চলছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে, কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতির প্রশ্নের সুরাহা হয়নি। এই প্রশ্নের সুরাহা করার জন্য যে আলাপ-আলোচনা বা সংলাপের প্রয়োজন সেই সংলাপে বসার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে রাজনৈতিক সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছেন, সংবিধান থেকে একচুলও নড়বেন না। এ কথার মধ্য দিয়ে তিনি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের সম্ভাবনাকে নাকচ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাপারে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, আন্দোলন করে সরকারের অবস্থান পরিবর্তন করা হবে। প্রধান দুই দলের কঠোর অবস্থান দেখে বিশেষজ্ঞরা যেমন, সাধারণ মানুষও তেমন সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন। নির্বাচন কোন পদ্ধতির সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে সেটার চেয়েও জরুরি বিষয় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে। নির্বাচন না হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় এমনকি গণতন্ত্র বিপন্নও হয়ে পড়ে। দেশের প্রধান দুই দল নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে পরস্পরবিরোধী যে অবস্থান নিয়েছে তা থেকে শেষ পর্যন্ত কেউ সরে না এলে বা দুই দলই ছাড় না দিলে দেশে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে মূলত দুই দিক থেকে। প্রথম দিকটি স্পষ্টতই রাজনৈতিক। বিরোধীদল বারবারই বলছে, নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি ইস্যুর সুরাহা না হলে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তাদের বক্তব্যে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা উঁকি দেয়। যদিও সরকারের দৃঢ় বিশ্বাস বিরোধীদল শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে। তাদের এ বিশ্বাসের ভিত্তি কী সেটা আদৌ পরিষ্কার নয়। তবে সরকারের ‘দৃঢ় বিশ্বাসে’ জনগণ আশ্বস্ত হতে পারছে না। নির্বাচন না হওয়ার দ্বিতীয় আশঙ্কা হচ্ছে তৃতীয় কোন শক্তির উত্থান। তৃতীয় শক্তির উত্থানের আশঙ্কা এমনকি সরকারপ্রধান ও বিরোধীদলীয় নেতার মনেও আছে। তারা এই মনোভাব গোপন করেননি। কেন তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটবে সে সম্পর্কেও প্রধান দুই নেত্রীর পরিষ্কার ধারণা আছে। কিন্তু হচ্ছে, সবকিছু জেনে-বুঝেও তারা তৃতীয় শক্তির উত্থানের পথ বন্ধ করতে প্রকৃত উদ্যোগ নিচ্ছেন না। দুজনের মতের একটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়_ আমার মত মানলে সব ঠিক।
এমন নয় যে, রাজনৈতিক সংকট বোঝার মতো বিচক্ষণতা রাজনীতিবিদদের নেই। সমস্যা হচ্ছে, রাজনীতিবিদরা দলীয় সংকীর্ণতায় আবদ্ধ। দলীয় সংকীর্ণতার ঊধর্ে্ব উঠতে না পারার কারণে সেই বিচক্ষণতা সঠিক দিশা পায় না। রাজনীতিবিদরা যদি জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেন তবে দলীয় সংকীর্ণতাকে অতিক্রম করা সম্ভব। দেশের মানুষ বহু বছর ধরে দলীয় রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে বন্দী হয়ে আছে। এ কারণে দেশের গণতন্ত্রও পূর্ণাঙ্গ রূপ পাচ্ছে না। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে সুযোগ এসেছে জাতীয় স্বার্থে ভূমিকা রাখার। আর এর জন্য দরকার সংলাপ। দুই দলকেই সংলাপে বসতে হবে এবং সমঝোতা করতে হবে নির্বাচনকারীন সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে। প্রধান দুই দলের কাছেই আমাদের আহ্বান ন্যায় পথে চলবেন তো মুখ কালো কেন…?