দেশব্যাপী রাজনৈতিক নেতাকর্মী হত্যাকা- বাড়ছে। মহাজোট সরকারের শেষ সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, টাকার ভাগ-বাটোয়ারা ও দলীয় কোন্দলে এসব হত্যাকা- ঘটছে। গত ৩/৪ মাসের হত্যাকা-ের পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য উঠে আসে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে নানা ইস্যু নিয়ে এসব হত্যাকা- ঘটছে। পুলিশ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, মোট রাজনৈতিক নেতাকর্মী খুন হয়েছে ১৯ জন। এর মধ্যে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের ১৪ জন ও বিএনপির ৫ জন রয়েছে। পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার জানান, বিভিন্ন অসৎ উদ্দেশ্যে এসব হত্যাকা- হচ্ছে। পুলিশ প্রতিটি হত্যাকা-ের ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে আসামিদের গ্রেফতার করে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২১ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে শ্রমিক লীগ নেতা মোক্তার হোসেনকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। সকাল সোয়া ৯টার দিকে মালিবাগ আবুল হোটেলের পেছনে ফ্লিমি স্টাইলে সন্ত্রাসীরা তার গতিরোধ করে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে তার ভাই আবু হানিফ রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৌনে ১২টার দিকে তিনি মারা যান। নিহত মোক্তার রামপুরা ২৩ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, হত্যাকা-ের রহস্য উদ্্ঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতারে তদন্ত চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় শ্রমিক লীগ সূত্র জানায়, মোক্তার স্থানীয় শারমিন পোশাক কারখায় ঝুটের ব্যবসা করতেন। এ নিয়ে একটি পক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল। ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশ এ ঘটনার পর সন্দেভাজন কয়েকজনের নাম পেয়েছে।
রমনা থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, খুনের পেছনে কি কারণ থাকতে পারে তা তদন্ত করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে যেটি মনে হচ্ছে তা হলো ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে ঘটনাটি ঘটতে পারে। তবে মামলা দায়ের হলে তদন্ত সাপেক্ষে খুনের কারণ ও রহস্য উদ্্ঘাটন করা যাবে। ওসি বলেন, মোক্তারের সঙ্গে কার দ্বন্দ্ব ছিল এসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিবারের দেয়া কিছু তথ্য পর্যালোচনা চলছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মোক্তার খুনের আগে দুর্বৃত্তরা পরিকল্পনা করে। ধারণা করা হচ্ছে খুনিরা ২/৩ টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তার ওপর আক্রমণ চালায়। একটি গ্রুপ তার গতিবিধি লক্ষ্য করে অন্যটি খুনে অংশ নেয়। তাদেরকে চিহ্নিত করার জন্য চেষ্টা চলছে।
মিল্কি হত্যা : রাজধানীর গুলশানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল রহমান মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত ২৯ জুলাই সোমবার গভীররাতে গুলশানের ১২৩ নম্বর সড়কের শপার্স ওয়াল্ড মার্কেটের গেটের সামনে এই ঘটনা ঘটে। সিসি ক্যামরায় এই হত্যার দৃশ্য দেখা গেছে। পাঞ্জাবি পরা সশস্ত্র ক্যাডাররা পূর্ব থেকে মার্কেটের সামনে ওতপেতে থেকে এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে। হত্যার পুরো দৃশ্য সিসি ক্যমেরায় দেখা গেছে। র্যাব বলছে, দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল, টেন্ডারবাজি, টাকার ভাগ-বাটোয়ারা ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে তাকে পরিকল্পতি ভাবে হত্যা করা হয়েছে। ওই হত্যাকা-ের কয়েক ঘণ্টা পর রাজধানীর নেপচুন হাসপাতাল থেকে যুবলীগ নেতা জাহিদ সিদ্দিকি ও তারেককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার করা র্যাব। পরে র্যাবের নিকট রিয়াজুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে তারেক। স্বীরোক্তির ভিত্তিতে রাতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত সবাই যুবলীগের সঙ্গে জড়িত। দলীয় কোন্দল, ব্যবসায়িক বিরোধ ও ভাগ-বাটোয়ারা দ্বন্দ্বের কারণে এই হত্যাকা- ঘটছে বলে প্রাথমিকভাবে আটককৃতরা র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
র্যাব হেডকোয়ার্টার্সের মিডিয়া শাখার পরিচালক উইং কমন্ডার হাবিবুর রহমান বলেন, ঘটনার পর তাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম ও সিসি ক্যামরায় ধারণকৃত ফুটেজ দেখে খুনিদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হয়।
ঘটনার পরপর গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, খুনি তারেক ও তার দলবল পূর্বপরিকল্পানা আনুযায়ী তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। তবে এই ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষে থেকে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
লালবাগে ছাত্রলীগ হত্যা : রাজধানীর লালবাগ এলাকায় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুল হক রতন ওরফে সেলিমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। গত ২৮ মে দুপুরে তাকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়। জানা গেছে, টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের কারণে তাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত সেলিমের মা রাশিদা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সরাসরি কারো নাম উল্লেখ করা না হলেও স্থানীয় সন্ত্রাসী মনিরসহ কয়েকজন হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করে এজাহার দায়ের করেন সেলিমের মা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মিজানসহ কয়েকজন লালবাগ এলাকার ফুটপাতসহ বিভিন্ন স্থলে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিদিন তোলা এ চাঁদার পরিমাণ ১ লাখ টাকারও বেশি। মিজানের সঙ্গেই থাকত সেলিম। মিজানের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধ ছিল মনিরের। এ বিরোধেই খুন হতে হয় সেলিম। মনির লালবাগের আরেক ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ শিকদার হত্যা মামলারও আসামি। ক্ষমতাসীন দলের হলেও মনিরের দলীয় কোন পদ নেই। পুলিশের চোখেও সে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।
সূত্রটি আরও জানায়, লালবাগের ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পাশে ৩৬ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে বিকল্প পরিবহন ও সেফটি পরিবহন নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের গাড়ির স্ট্যান্ড। এ স্ট্যান্ড ঘিরে প্রতিদিন লাখ টাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে একটি চক্র। মিজান ও সেলিম একই দলের হলেও মনির ছিল তাদের বাইরে। লালবাগ থানার ওসি মো. নুরুল মোক্তাকিন জানান, সেলিমকে হত্যায় অংশও নেয়া সন্ত্রাসী গ্রুপটিকে তারা সনাক্ত করেছে। হত্যাকান্ডের পর ঘটনাস্থলে সন্ত্রাসীরা রক্ত মাখা ছুড়ি ও জামা ফেলে যান। সেগুলো উদ্ধারের পর তার সূত্র ধরে খুনিদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাদের গ্রেফতারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে। গ্রুপটিকে গ্রেফতার করতে পারলেই হত্যার মূল কারণ ও নেপথ্যের নায়ক কে বা কারা তা বের হয়ে আসবে।
রংপুরে ছাত্রদল নেতা হত্যাকা- : গত ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় রংপুর শহরের মেডিকেল পূর্ব গেটে এলাকায় জেলা ছাত্রদলের আইন বিষয়ক সম্পাদক শাহিন আলমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে রংপুর ছাত্রদল আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ হত্যাকা- ঘটেছে বলে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে।
ধানমন্ডিতে হত্যা : গত ৫ জুলাই, ধানমন্ডিতে কথা কাটাকাটির জের ধরে বন্ধুর হামলায় শামীম শিকদার (১৮) নামে এক ছাত্র নিহত হয়। নিহত শামীম ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তড়িত কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। পুলিশ এ ঘটনায় তার বন্ধু শুভকে গ্রেফতার করলেও মূল আসামিরা বাইরে রয়ে গেছে। সে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানা গেছে।
পল্টনে ছাত্রলীগ নেতা হত্যা : গত ১১ জুলাই রোজার প্রথম দিনে রাজধানীর পল্টনের দৈনিক বাংলার মোড়ে একটি নোহা গাড়ি থেকে ফেলে আমির হোসেন কাঞ্চন (৪২) নামে এক ফার্নিচার ব্যাবসায়ীকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ধারণা করা হচ্ছে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বলছে, পূর্বশত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। জানা গেছে নিহত আমির পল্লবী থানার ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন।
রামপুরা ছাত্রলীগ সদস্য খুন : গত ২১ জুলাই রামপুরা এলাকায় চাঁদা না দেয়ায় সন্ত্রাসীরা গুলি করে উজ্জ্বল (২৫) নামে লেগুনা স্ট্যান্ডের এক লাইনম্যানকে হত্যা করে। ইফতারির পর রামপুরা ব্রিজের পাশে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, উজ্জ্বল মধ্যবাড্ডা মডেল কলেজের ইন্টার মিডিয়েটের ছাত্র। এছাড়া সে ৯৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সদস্য।
হাজারিবাগে বিএনপি নেতা খুন : রাজধানীর হাজারিবাগ এলাকায় বিএনপি নেতাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। নিহতের নাম জসিম উদ্দিন (৫৫)। গত ২৯ জুলাই সোমবার ইফতারীর পর হাজারীবাগ বেড়িবাঁধের ১৩৩/বি নম্বর বাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
মিরপুরে যুবলীগ কর্মী হত্যা ঃ রাজধানীর মিরপুরে জহিরুল ইসলাম বাবু (৩৫) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। গত ২৪ জুলাই বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মধ্য মনিপুরী পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। জানা গেছে, জহিরুল ইসলাম ১৩ নং ওয়ার্ড যু্বলীগের সদস্য ছিলেন।
নিহতের বড় ভাই কাজী তাজুল ইসলাম জানান, এনামুল নামে স্থানীয় এক ছেলের সঙ্গে বাবুর দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিল। গত মঙ্গলবার তার কাছে দশ হাজার টাকা চায়। এই টাকা না দিতে পেরে আমার ভাইয়ের ওদের সঙ্গে কথাকাটি হয়। ওই কথা কাটাকাটির জের ধরে পৃর্বপরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, এনামুল ও মনিসহ এরা সবাই স্থানীয় সন্ত্রাসী। এদের মধ্যে এই হত্যাকা-টি ঘটেছে।
মিরপুর মডেল থানার ওসি সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, পূর্ব পরিকল্পানা আনুযায়ী তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
খিলক্ষেতে তারেকসহ ২ জন নিহত : গত ৩০ জুলাই রাজধানীর খিলক্ষেত কাওলা এলাকায় র্যাবের সঙ্গে যুবলীগের খুনী তারেক বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জাহিদ সিদ্দিকী তারেক ও তার ঘনিষ্ঠ শাহ আলম নিহত হয়েছে। আর র্যাবের একজন ডিএডিসহ ২জন আহত হয়েছে। র্যাব হেডকোয়ার্টার্স থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
র্যাব হেডকোয়ার্টার্স থেকে জানানো হয়- রাতে নিহত যুবলীগের নেতা রিয়াজুল হক মিল্কি হত্যার অন্যতম আসামি তারেকসহ ২জনকে থানায় নেয়ার সময় খিলক্ষেতের কাওলা এলাকায় তারেক বাহিনীর ক্যাডাররা র্যাবের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুলি করে। র্যাব পাল্টা গুলি চালায়। গুলিতে তারেকসহ ২ জন নিহত হয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, তারেক ও শাহ আলমকে হাসপাতাল থেকে গুলশান থানায় কড়া নিরাপত্তায় নেয়ার সময় র্যাবের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে এই ঘটনা ঘটে।
রাউজানে যুবলীগ কর্মী হত্যা ; গত ১৭ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান এলাকায় সন্ত্রাসীরা যুবলীগের কর্মী মোবারক হোসেনকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার পর থেকে পুলিশ খুনিদেরকে ধরার জন্য চেষ্টা করছে।
ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বন্দুকযুদ্ধ : গত ২৪ জুন চট্টগ্রামে বিআরবিতে রেলওয়ের টেন্ডার জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ, যুবলীগের মধ্যে প্রকাশ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির শিকার হয়ে এক শিশুসহ ২ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অনেকেই। আসামিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। আহতদের মধ্যে একজন যুবলীগের সঙ্গে জড়িত।
লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা খুন : গত ২৩ জুন দিবাগত রাতে সন্ত্রাসের জনপদ লক্ষ্মীপুর জেলার সদর থানার কাশিপুর গ্রামে বিএনপি নেতা সেলিমকে অপহরণ করে নিয়ে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা-ের ঘটনায় রতন বাহিনীর প্রধান রতনকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করে। এর আগে লক্ষ্মীপুর সদর থানার দত্তপাড়াসহ আশপাশে আর একাধিক রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ঘটেছে। প্রতিহিংসার কারণে এইসব হত্যাকান্ড ঘটছে বলে জানা গেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে একাধিক রাজনৈতিক নেতকর্মী খুন হয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নরসিংদীতে বিএনপি নেতা হত্যা : গত ১৭ আগস্ট নরসিংদীতে দেলোয়ার হোসেন দেলু নামে হাজিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক খুন হয়েছেন। চাপাতি নিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এ হত্যাকা-ের তদন্ত চলছে।
বগুড়ায় যুবলীগ নেতাসহ ২জন খুন : গত আড়াই মাস আগে বগুড়ার শহরতলী এলাকার বন্ধ গ্রামে সন্ত্রাসীরা যুবলীগ নেতা মঞ্জু ও তার দেহরক্ষী নাহিদকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। টাকা ও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের কারণে এই হত্যাকা- ঘটেছে বলে স্থানীয় রিপোর্টার জানান।
পিরোজপুরের কাউখালীতে যুবলীগ নেতা হত্যা : গত ২০ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে কাউখালী এলাকায় যুবলীগ নেতা এনামুল হক ইনুকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি যুবলীগের সাব্কে যুগ্ম আহবায়ক ও একটি হত্যা মামলার তার সাজা হলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
পাবনায় বিএনপি কর্মী হত্যা : গত ১৯ আগস্ট রাতে পাবনার সদর উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামে সন্ত্রাসীদের চুরিকাঘাতে বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছে জানা গেছে।
পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের শেষ মুহূর্তে টাকা পয়সার ভাগ-বাটোয়ারা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রভাব বিস্তারসহ নির্বাচন সামনে রেখে এইসব কিলিং হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন।
হত্যার তদন্ত সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি মিডিয়া মাসুদুর রহমান সংবাদকে জানান, প্রত্যেকটি হত্যাকা-ের ঘটনাকে আলাদা আলাদাভাবে গুরত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অপরাধী যেই হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।