আগামী মেয়াদেও ক্ষমতায় আসার জন্যে এবং বিরোধী দলের আন্দোলন ও অপপ্রচার মোকাবেলায় সারাদেশে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি মহাজোট সম্প্রসারণেরও উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু শরিকরা তাতে সাড়া দিচ্ছে না। ফলে চিন্তায় আছে আওয়ামী লীগ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এমন বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে সিনিয়র নেতারা আলোচনা করলেও তেমন একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
তরিকত ফেডারেশন ও জাকের পার্টি ছাড়া অন্য দলগুলোর কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। তরিকত ফেডারেশন ও জাকের পার্টি খুব শিগগিরই মহাজোটে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেবে বলে আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুত্তাকিন বিল্লাহ রাব্বানি বলেন, ‘আমরা সব সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনকে মহাজোটে যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই যোগদানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।’ এছাড়া জাকের পার্টি আবার মহাজোটে সক্রিয় হবে বলে জানিয়েছেন পার্টির মহাসচিব মুন্সী আবদুল লতিফ।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), সিপিবি, জাতীয় পার্টি (জেপি), গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ মহাজোটে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও ওবায়দুল কাদের এবং মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি গত মাসে মহাজোট সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সমমনা বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করেন।
ইতোমধ্যে সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি), জাকের পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন মহাজোট নেতারা। তবে এরা জোটভুক্ত নয়।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিকে (জেপি) মহাজোটের অন্যতম শরিক দাবি করে মহাজোটে আবার সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম জানান, ‘আমরা আগে থেকেই মহাজোটের অংশ ছিলাম। মহাজোট নির্বাচনকালীন জোট ছিল, তাই নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আমরা জোটের কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় ছিলাম। ১৪ দলের পক্ষ থেকে জেপির সঙ্গে মতবিনিময়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মতবিনিময়ের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামী নির্বাচনে মহাজোটে জেপি সক্রিয় হবে কি না।
আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলা ও নির্বাচনে জয়ী হতে হলে জোটের কলেবর বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিও ইতিবাচক হবে। এ কারণে জোট থেকে এরশাদের জাতীয় পার্টিসহ কোনো দল যাতে বের হয়ে না যায় সেদিকে নজর দেওয়ার পাশাপাশি মহাজোটকে শক্তিশালী করতে এর কলেবর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। বিশেষ করে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভরাডুবির পর জোটের ঐক্য অটুট রাখতে এবং এর পরিসর বাড়ানোর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছেন সবাই।
গত ২৪ জুলাই গণভবনে ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে মহাজোটকে আরও সম্প্রসারিত করার ব্যাপারে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতির ধারাবাহিকতায় বা অন্য যেকোনো উপায়ে বিএনপি-জামায়াত শাসন ক্ষমতায় আবার প্রতিষ্ঠিত হলে দেশে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাই তাদের প্রতিহত করতে মহাজোট সম্প্রসারণ করা উচিত। কারণ মহাজোট যদি আবারও ক্ষমতায় না আসে তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ হবে। দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীরা মুক্তি পাবে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো বিনাশ হবে। তাই মহাজোটকে আরও শক্তিশালী করতে হবে নির্বাচনে জয়ী হয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্ত রুখে দেওয়ার জন্য।
আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মহাজোট সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটকে মোকাবেলায় নিজেদের জোটের সম্প্রসারণের জন্য দলের নীতিনির্ধারকদের তাগিদ দিয়েছেন তিনি। সুরঞ্জিত বলেন, সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলকে সঙ্গে নিয়ে মহাজোটকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সম্প্রসারিত করতে হবে। তাহলেই স্বাধীনতাবিরোধী জোট পরাজিত হবে।
তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মহাজোট সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সমমনা দলগুলোর কাছ থেকে তেমন একটা ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব দলের সঙ্গে জোটভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে শিগগিরই আবার আলোচনা শুরু করা হবে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব সামাজিক সংগঠনকেও ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামানো হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেছেন, রাজনীতিতে জোট একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকের সঙ্গেই মহাজোটের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এখনও নেই। তিনি জানান, জোট সম্প্রসারণের উদ্যোগের পাশাপাশি আমরা এখন দল গোছানোর কাজে বেশি মনোযোগী। আগে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করার পর জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে কাজ করা হবে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সঙ্গে যেকোনো সময় জোট হতে পারে। তিনি জানান, সুনির্দিষ্ট দিন ঠিক করা না হলেও শিগগিরই কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা সফর করবেন। এ সফরে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদেরকেও সম্পৃক্ত করা হবে।