আওয়ামী লীগ পরবর্তী সরকারে আবারো ক্ষমতায় আসলে সে সময় অটিজম নিয়ে আরো কাজ করার আশবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী কণ্যা সাময়া ওয়াজেদ হোসেন পুতুল।
সোমবার রাত ১১ টায় বেসরকারী টেলিভিশন এটিএন বাংলায় “অটিজম: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত” অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। ডা: এম এইচ মিল্লাত সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
অটিজম নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী কন্যা ও অটিজম বিশেষজ্ঞ সাময়া ওয়াজেদ হোসেন (পুতুল)।
বিশ্ব বরেণ্য এই অটিজম বিশেষজ্ঞ বলেছেন, অটিজম হলে জন্মের পর যখন শিশুর মাকে চেনার কথা তখন সে চিনবে না। ভাল মন্দ যখন বুঝার কথা তখন তা বুঝবে না। মনের কথাগুলো বলতে পারবে না।
এসময় বাচ্চাদের হাইফার সেন্টিমেন্ট থাকে। যেমন নরমাল সাউন্ড তার তাকে বেশি মনে হবে। সেনসেশন পাবে না। যেমন পড়ে গেলে ব্যাথা পাবে না। কেটে গেলে বুঝতে পারবে না।
সায়মা হোসেন বলেন, মাস্টার্স ডিগ্রি করার পর আন্তর্জাতিকভাবে অটিজম নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেখানে যাদের সাথে ইন্টার্নশীপ করেছি তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল শিশু। যাদের বয়স ছিল ৩ থেকে ৮ বছরের মধ্যে। একটি অটিজমের সাথে আরেকি অটিজমের কিন্তু অনেক পার্থক্য রয়েছে। তেমনিভাবে একজন অটিস্টিক বাচ্চার সাথে আরেক অটিস্কিক বাচ্চারও পার্থক্য রয়েছে। তাদের মাঝে মিল খুজে পাওয়া যাবে না।
প্রথমাবস্থায় এরকম বাচ্চাদের নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার ‘নো হোপ’ বলে দিতেন। কিন্তু গত ১০ বছরে অনেক নতুন মেশিন আবিস্কৃত হয়েছে। যার মাধ্যমে বর্তমানে এর চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে। ব্রেণ একটি ফিক্সট অরগান। তাই মনে করতাম কোন কিছুই ফেরত আসে না। তবে ইতিমধ্যে এ সেক্টরে অনেক ডেভেলপ্ট হয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক ট্রিটমেন্ট দিলে সঠিক আইডেন্টিফিকেশন করতে পাললে পুরো কিউর না হলেও কিন্তু কমানো যায়।
সায়মা বলেন, এ বিষয়ে যেহেতু আমি বিশেষজ্ঞ ছিলাম তাই আমার আগ্রহটা একটু বেশি ছিল। পত্রিকায় বাংলাদেশে একটি কনফারেন্স হবে এমন খবর শুনে আমি দেশে এসে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি অনেকেই অটিজম নিয়ে কথা বলছেন। বিশেষ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর অটিজম নিয়ে অনেক সুন্দর কথা বক্তব্য দিয়েছিলেন।
সেই সময় ২০০৯ সালে বাংলাদেশে অটিজমের কেমন সার্ভিস আছে তা জানার ছিল না। হিয়ারিং স্ট্যাডি বা হুইল চেয়ারে চলাফেরা করা বাচ্চারা স্কুলে যেতো না। এরকম নরমাল চিত্র আমি দেশে দেখিনি। তবে আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কিন্তু এরকম বাচ্চারা স্কুলে যাওয়া আসা করে। নরমাল্লি তাদেরকে দেখা যায়। পরে কারন খুজলাম। বুঝলাম কিছু কিছু একসেসিবিলিটি এখানে নেই। তাই এরকম অবস্থা বিরাজ করছে।
আমাদের দেশের মানুষ যথেষ্ট সহযোগীতা পরায়ণ। তারপরও ভিন্ন চিত্র সেসময় দেখেছি। আমাদের দেশে অনেকে পরিবারের কোন সদস্য এরকম রোগী হলে বলতে চায় না। ডিসএবল বাচ্চা যাদের রয়েছে তারা মনে করেন তাদের বাচ্চারা কিছু শিখতে পারবে না। তবে বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এসব পরিবার তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে তৈরী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমার মা সরকারে আসার পর এসব বাচ্চাদের সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। মায়ের মধ্যে এরকম সহযোগীতার মানসিতা আছে। তাই আমিও ভাবছি বাংলাদেশে এ বিষয় নিয়ে কাজ করবো। পরবর্তীতে কোথায় সমস্যা, কোথায় সহযোগীতা করা যায় এরকম পরিকল্পনা নিয়েছি। বিশেষ করে গ্লোবাল অটিজম সেন্টার থেকে অনেক কিছুই জানার সুযোগ আমার হয়েছিল। পরে ভাবলাম কোন মডেল আমরা বাংলাদেশে মেইনটেইন করতে পারবো।
সায়মা বলেন, মেডিকেল কলেজগুলোতে এ ব্যাপারে কিছু কিছু পলিসি ক্রিয়েট করা দরকার। এজন্য কিছু তথ্য জোগাড় করতে হবে। ট্রেনিং দিতে হবে। অটিজম আছে এরকম অনেকে স্কুলে যেতে পারবে অনেকে আবার স্কুলে যেতে পারবে না তাদেরকে চিহ্ণিত করতে হবে। এ বিষয়টি বুঝাতে হবে। কিভাবে কাকে হেন্ডেলিং করতে হবে তা জানাতে হবে।
প্রশিক্ষিত না হওয়ায় দেশের ডাক্তাররা এ ব্যাপারে কম জানেন। কেননা তাদেরকে শেখানো হয় না। সমস্যা হলে কিন্তু আমরা প্রথমে ডাক্তারের কাছেই যাই। তাই প্রথমে ডাক্তারদেরকে শিখাতে হবে। ডাক্তারদের বিষয়টি বুঝানো দরকার। কেননা চিকিৎসার অভাবে অনেকেই অকালে মারা যান। এসব কথা যখন শুনতে পাই তখন খুবই খারাপ লাগে।
এক প্রশ্নের জবাবে সায়মা বলেন, এ ব্যাপারে দেশে কোন পলিসি নেয়া হয়েছে কিনা বলতে পারবো না। ডিসেবিলিটি ম্যানেজম্যান্ট এর জন্য ট্রেনিং দরকার। তাই এসব পলিসি নিয়ে কাজ করছি।
জাতিসংঘে কোনদিন একটি ডিসেবিলিটি নিয়ে দুটি রেজুলেশন পাশ হয়নি। তবে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগীতায় দুটি রেজুলেশন আনতে পেরেছি। এটা কিন্তু অনেকদিন ধরে খেটে করতে হয়েছে। ওয়ারনেস এর সাথে কিন্তু সার্বিসেস দরকার। যাদের অটিজম আছে তাদের প্রোডাকটিভ কিছু করা দরকার। অটিজম দুর করতে না পারলে তারা সাধারণ সমাজে মিশার সুযোগ পায় না। তবে চিকিৎসা করলে অনেকে স্বাধীনভাবে অনেক কিছু করতে পারে বুঝতে পারে।
তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড হেল্থ অরগানাইজেশন এর রেজুলেশনে এই প্রথম ৫১ টি দেশের পোস্ট স্পনসরশিফ পাওয়া গেছে। ইতিহাসে এতজন পোস্ট মেম্বার কোথাও হয়নি।
দেশের মানুষকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা অটিজম নিয়ে কাজ করে যাবেন। তাদেরকে কিভাবে হ্যাপি, হেলথ ও প্রোডাকটিভ করা যায় তা বুঝাবেন। এ কাজটি কিন্তু পরিবার থেকে শুরু করতে হবে। যাদের ডিসিবিলিটি আর অটিজম রয়েছে তাদের নিয়ে কাজ করবো।
আওয়ামী লীগ পরবর্তী সরকারে আবারো ক্ষমতায় আসবে প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, সেসময় আরো কাছ করবো। এভাবে অটিজম নিয়ে কাজ করলে অনেকেই সুস্থ থাকবে, তাদের বিকাশ ঘটবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।