দুই নেত্রীর সরাসরি সংলাপ চায় চীন : সংবাদ সম্মেলনে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জুন

0
171
Print Friendly, PDF & Email

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার মধ্যে সরাসরি সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছে চীন। চীন মনে করে, আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধান দুই দলকে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো জরুরি। গতকাল হোটেল র্যাডিসনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জুন এই মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে রিয়ার অ্যাডমিরাল শেন হাও বলেন, এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কারো সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত নই। এ অঞ্চলের সমুদ্র এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চীনের পক্ষ থেকে এ ধরনের খোলাখুলি মন্তব্য এই প্রথম। চীনা নৌবাহিনীর চিকিত্সা জাহাজ পিস আর্কের সাত দিনের শুভেচ্ছা সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠান নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন চীনা রাষ্ট্রদূত। তিনি মনে করেন, সঙ্কট নিরসনে দুই নেত্রীর মধ্যে সরাসরি সংলাপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
দুই দলের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সংলাপের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, কানাডাসহ গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষ থেকে অব্যাহতভাবে আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে এই আহ্বানে দৃশ্যমান তেমন কোনো সাড়া চোখে পড়েনি। সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপের ব্যাপারে অনীহাই দেখা গেছে বেশি। তবে সংলাপের ব্যাপারে চীনের এই আহবান এবং রাষ্ট্রদূতের উদ্যোগ বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ। সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত লি জুন বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর আমরা গভীর নজর রাখছি। বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ জরুরি। আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রধান দুই দলকে একটি সমঝোতায় আসতে হবে। দুই দলের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে মিল আছে। যেমন দুই দলই সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে। তাদের মধ্যে বিরোধ হলো নির্বাচনটি কোন পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে, সেই ইস্যুতে। তিনি বলেন, এই সমস্যা সমাধানে দুই দলের মধ্যে এক ধরনের আলোচনা চলছে মিডিয়ার মাধ্যমে। মিডিয়া দুই দলের বক্তব্য তুলে ধরছে। আমি মনে করি, দুই দলের মধ্যে সরাসরি সংলাপ হতে হবে। আর এখানে দুই নেত্রীর মধ্যে সরাসরি সংলাপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা তাদের প্রজ্ঞার পরিচয় দেবেন।
আপনি দুই দলের মধ্যে, বিশেষ করে দুই নেত্রীর মধ্যে সরাসরি সংলাপের কথা বলছেন। বন্ধু দেশ হিসেবে এই সরাসরি সংলাপের জন্য চীন কোনো উদ্যোগ নেবে কিনা—এমন এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি ইতোমধ্যেই কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। দুই দলের মধ্যেই আমার অনেক বন্ধু রয়েছে। আমি তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। আমার এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে চূড়ান্তভাবে এদেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যত্ নির্ধারণ করবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চীনকে অতীতে এ ধরনের প্রকাশ্য মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের ব্যাপারে চীনা নীতিতে কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা—এই প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত লি জুন বলেন, আমাদের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য আমরা আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।
চীনা নৌবাহিনীর চিকিত্সা জাহাজ আর্ক পিস যখন বাংলাদেশ সফর করছে, ঠিক তখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তারের কোনো বিষয় আছে কিনা—প্রশ্নের জবাবে রিয়ার অ্যাডমিরাল শেন হাও বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র কোনো যৌথ মহড়া চালাচ্ছে তা আমার জানা ছিল না। এখন জানতে পারলাম। আমরা কারো সঙ্গে কোনো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত নই। আমরা এই অঞ্চলে শান্তি চাই। শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।
চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন কেনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেন হাও বলেন, বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে আলোচনায় সাবমেরিন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা দু’দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আরো জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করেছি। বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তুলতে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
চট্টগ্রামে আর্ক পিসের কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, এটি আর্ক পিসের দ্বিতীয় সফর। গত ১৯ তারিখ থেকে আমরা চিকিত্সাসেবা শুরু করেছি। আগামী ২৫ তারিখ মিশন শেষ হবে।
আমরা ইতোমধ্যে প্রায় ১৫শ’ জনকে নানা ধরনের চিকিত্সাসেবা দিয়েছি। আর্ক পিসের এই সফরের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার হবে।

শেয়ার করুন