নির্বাচন সামনে রেখে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আয়-ব্যয়ের সঙ্গতিবিহীন বিশাল বাজেট পাস করে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার। বাজেটেই ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অন্যান্য খাত থেকে আয় বেশি হবে এমন প্রত্যাশায় সরকারের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর থেকে আদায় সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। কিন্তু সরকারের সবচেয়ে বড় আদায়ের খাতেই অর্থবছরের প্রথম মাসেই ঘাটতি হয়েছে ৭৬৯ কোট টাকা। জুলাইয়ে এনবিআরের আয়কর ও ভ্যাট উভয় অনুবিভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার বিশাল বাজেট পেশ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। এটিই এ মেয়াদে সরকারের শেষ বাজেট। নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের তুষ্টি করতে নানা খাতে বরাদ্দও বেশি দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে লোক দেখানো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে উন্নয়ন বাড়াতে বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বিশাল বাজেটের ব্যয় মেটাতে কোনো খাত আয় আসবে তা বাস্তবিক অর্থে সুস্পষ্ট করা হয়নি।
বিভিন্ন খাত থেকে আদায় বাড়বে উল্লেখ করে খাতা-কলমে আয় বাড়ানো হয়েছে। এবারের বাজেটে বিভিন্ন খাত থেকে সরকারের আয় ধরা হয় ১ লাখ ৭৪ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর থেকে মোট আয়ের ৬১.২ শতাংশ আসবে বলে প্রাক্কলন করা হয়। এছাড়া বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে সরকারের সবচেয়ে বড় আয়ের খাত এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর। এ খাতে থেকে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা আদায় হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। যদিও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান ড. গোলাম হোসেনের বিরোধ দেখা দিয়েছিল। এনবিআর চেয়ারম্যান রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা গত ২০১২-১৩ অর্থবছরের তুলনায় বাড়ানোর পক্ষপাতী ছিলেন না। কারণ, গত অর্থবছরেও এনবিআর রাজস্ব আদায়ে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। গত অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। বছর শেষে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার কোটি টাকারও উপরে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী রাজনৈতিক স্বার্থে বড় আকারের বাজেট প্রণয়নের জন্য এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেন।
বিশাল এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গিয়ে অর্থবছরের প্রথম মাসেই হোঁচট খেল এনবিআর। রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় দুটি খাত আয়কর ও ভ্যাট আদায়েই ঘাটতি হয়েছে।
এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় খাত ভ্যাট আদায়ে ঘাটতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি ৫২৮ কোটি টাকা। জুলাইয়ে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ২ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪৯ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। যা মোট আয়ের ৩৬.৭ শতাংশ। গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত আয়কর আদায়ের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু এনবিআর ওই মাসে ১ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৯৩ কোটি টাকা কম। দীর্ঘ ৪ বছর পর কোনো মাসে আয়কর আদায়ে প্রথম ঘাটতির মুখে পড়ল এনবিআর। সারাদেশের ৩১টি কর অঞ্চলের মধ্যে ৬টি কর অঞ্চল লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে, বাকি ২৫ কর অঞ্চল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। চলতি অর্থবছরে আয়কর আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪৮ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা, যা মোট আদায়ের ৩৫.৫ শতাংশ। বিগত ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
এছাড়া ভ্রমণ কর ও অন্যান খাত থেকে এনবিআরের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৩ কোটি। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে মাত্র ৩৫ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪৮ কোটি টাকা কম। এনবিআরের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক আদায়ও অনেক কম হয়েছে। এনবিআর মাসওয়ারী শুল্ক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এখনও নির্ধারণ করেনি। এ খাতে জুলাইয়ে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৯১০ কোটি টাকা।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসেই কর্মকর্তাদের দু’দফায় বদলি করা হয়েছে। আরও বড় ধরনের বদলির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই রাজস্ব প্রশাসনে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। যে কারণে সার্বিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মুহূর্তে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। যে কারণে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে।
হোম
বাংলাদেশ
ব্যবসা ও অর্থনীতি জুলাইয়ে রাজস্ব আদায় কমেছে ৭৬৯ কোটি টাকা : অর্থবছরের প্রথম মাসেই সরকারের...