নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘যারা গ্রামীণ ব্যাংক ভাঙতে বা ধ্বংস করতে চায়, দেশের মানুষ ও গরিবের প্রতি তাদের মমত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাদের হাতে কি দেশ তুলে দেয়া যায়?’
গতকাল বিকেলে মিরপুরে ইউনূস সেন্টারে ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতারা ড. ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘দুনিয়ায় এমন কোনো ব্যাংক নেই যে ব্যাংকটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকই এই গৌরব অর্জন করেছে। এটা অনন্য দৃষ্টান্ত। কোথায় আমরা এটা রক্ষা করব, আদর করব, সম্মান করব, তা না করে ভাঙার চেষ্টা করছি।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. সৈয়দ শফিউল্ল্যাহ, জাফরুল্লাহ চৌধুরী লাহোরী, প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ হোসেন, ফোরকান আহমেদ প্রমুখ।
ড. ইউনূস বলেন, ‘৮৪ লাখ পরিবার গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য। আমরা তাদের জমি দিতে না পারলেও টাকা দিতে পেরেছি। গ্রামীণ ব্যাংকে আট হাজার কোটি টাকা রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যরাই গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক। তারা তাদের প্রতিষ্ঠান কেড়ে নিতে দেবে না। তারা প্রতিবাদ জানাবে। তারা এই প্রতিষ্ঠানে একটি আঁচড়ও লাগতে দেবে না।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে ১৯ টুকরো করতে চেয়েছে। এর মালিকরা এটা মানবে না। সারা দেশের মানুষ তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। আপনারা এসেছেন, আমাদের শক্তি বেড়েছে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের ধ্বংস সারা দুনিয়ার মানুষ চায় না। পৃথিবীর বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিবৃতি দিয়েছেন যে এই প্রতিষ্ঠান নষ্ট করবেন না।’
নোবেল বিজয়ী আক্ষেপ করে বলেন, ‘আজ প্রতিটি কাজ ঘুষ দিয়ে করতে হয়। আমরা কি এ রকম একটি দেশ চেয়েছিলাম? যারা দুর্নীতি করতে চায়, আমরা তাদের নিবৃত্ত করব। আমাদের পরিবর্তন করতেই হবে। ইনশাল্লাহ আমরা পরিবর্তন করব। পরিবর্তন হবে।’
মাওলানা ভাসানীর স্মৃতিচারণ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘১৯৭৬ সালে আমি একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রাম থেকে টাঙ্গাইল গিয়েছিলাম। অনেকে আমার সফলতার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছিল। আমি বলেছিলাম, সফল হলে সফল, না হলে দোষ স্বীকার করে নেব। আমি দুই বছর ছুটি নিয়ে টাঙ্গাইল থেকেছি। সেখানে আমি মওলানা ভাসানীর অনুসারীদের দেখেছি, বুঝেছি। মওলানা ভাসানী গরিব মানুষের মনে যেভাবে স্থান করে নিয়েছেন, অন্য নেতাদের পক্ষে সেখানে স্থান পাওয়া কষ্টকর হবে।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতারা ড. ইউনূসকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন চেয়ার থেকে উঠতে না পারায় ড. ইউনূস নিজেই তার কাছে গিয়ে ফুল নেন। ইউনূস সেন্টারে আসার জন্য আবদুল মতিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। এ সময় ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনার মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি আমার প্রতিষ্ঠানে আসায় আমি গর্বিত, আমার প্রতিষ্ঠান গর্বিত।’
অনুষ্ঠানে ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতারা বলেন, মওলানা ভাসানীর মতো সরকার ড. ইউনূসকেও মুছে ফেলতে চায়। তারা তার সঙ্গে আছেন এবং থাকবেন।







