চলতি বছরের অক্টোবর থেকেই পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করতে যাচ্ছে। বুধবার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী অক্টোবর থেকে টানা তিন বছর প্রতি দিন ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রফতানি করবে পশ্চিমবঙ্গ।
রাজ্যের বিদ্যুৎ ভবনের একটি সূত্রের বরাতে জানানো হয়, বণ্টন সংস্থা এই বিদ্যুৎ সরাসরি বাংলাদেশ সরকারকে বিক্রি করবে না। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পাওয়ার ট্রেডিং কর্পোরেশন (পিটিসি) এর মাধ্যমে ওই বিদ্যুৎ রফতানি করা হবে।
এ ক্ষেত্রে রাজ্য পিটিসিকে বিদ্যুৎ বিক্রি করবে। তারা সেই বিদ্যুৎ পাঠাবে বাংলাদেশকে। সম্প্রতি এই বিষয়ে পিটিসির সঙ্গে বণ্টন সংস্থার বাণিজ্যিক চুক্তিও হয়েছে বলে রাজ্যের এক বিদ্যুৎ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত জানিয়েছেন, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ সেখানে মানুষের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ভাল দামে বাজারে বিক্রি করছে। তিনি বলেন, ‘রাজ্যের মানুষের চাহিদা মিটিয়েও আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চলেছি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের এটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। অন্য রাজ্য যেখানে টাকার অভাবে বিদ্যুৎ কিনতে পারছে না, আমরা সেখানে আয় বাড়াতে বাজারে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারছি।’
এদিকে রাজ্যের বিদ্যুৎ বিক্রির সিদ্ধান্তকে প্রশংসা করেও অনেকে আবার বলছেন, পশ্চিম শিল্পের ঘাটতির জন্যই বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে। ফলে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। কিন্তু উৎপাদিত হয় ৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের মতো। চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ফাঁক ভরাতে ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময়ই ঢাকার সঙ্গে দিল্লির একটি বিদ্যুৎ-চুক্তি হয়। ঠিক হয়, বাংলাদেশ ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে ভারত থেকে।
এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি) তাদের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেবে। বাকি ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের বাজার থেকে কিনবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ পর্ষদ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার সংশ্লিষ্ট কমিটি ভারতের বাজার থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়ে দেশের বিদ্যুৎ পরিষদকে ছাড়পত্রও দিয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লির বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
কোন পথে আসবে এই বিদ্যুৎ?
দুদেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক এই বিদ্যুৎ চুক্তির পর ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে নবগ্রাম ব্লকের দক্ষিণগ্রাম মৌজায় ৩০ একরের মতো জমিতে একটি ৪০০ কেভি সাবস্টেশন তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। মাঝে জমি জটে কাজ আটকে থাকলেও তা মিটিয়ে সাবস্টেশন তৈরির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের দিকে সাবস্টেশনটি গড়ে তোলা হয়েছে ভেড়ামারায়। দুদেশের এই দুটি সাবস্টেশনের মধ্যেই হাই-ভোল্টেজ লাইন টেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
কলকাতায় এই কাজের দায়িত্বে থাকা পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ট্রান্সমিশন লাইন টানার কাজ শেষ হয়ে যাবে। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা শুরু হবে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে অক্টোবর থেকেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা।
সার্ক দেশগুলির মধ্যে বিদ্যুৎ আদান-প্রদানের জন্য কয়েক বছর ধরেই সার্ক এনার্জি গ্রিড তৈরির প্রসঙ্গটি এখন কূটনৈতিক স্তরে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ সার্ক দেশগুলির মধ্যে কোনও কোনও দেশের বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত হলেও কোনও কোনও দেশে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। সার্ক এনার্জি গ্রিড তৈরি করতে পারলে একে অপরের বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে।
সম্প্রতি যেমন পাকিস্তান তাদের ঘাটতি মেটাতে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু দুদেশের মধ্যে এই মুহূর্তে কোনও গ্রিড যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। ভারতের সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের অবশ্য গ্রিড মারফত যোগাযোগ রয়েছে।
তবে পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডের সঙ্গে বাংলাদেশ গ্রিডের যে যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হল, তাতে সার্ক এনার্জি গ্রিড নির্মাণের আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার দিকে আরও এক ধাপ এগোবে বলেই মনে করছে বিদ্যুৎ শিল্প মহল।