হেফাজতের তালিকায় ‘নিহতের’ সংখ্যা কমছে

0
119
Print Friendly, PDF & Email

সময়ের সঙ্গে ছোট হচ্ছে হেফাজতে ইসলামের ‘নিহত তালিকা’। গত ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে অভিযানের পরপরই হেফাজত নিহতের সংখ্যা দেড় হাজার বলে দাবি করে। তবে এর পক্ষে প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।হেফাজতের তালিকায় ‘নিহতের’ সংখ্যা কমছে
৫ মে রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পর শাপলা চত্বর। ছবি: সমকাল

দাবি প্রতিষ্ঠায় সাংগঠনিকভাবে অনুসন্ধান চালায়। তিন মাসের অনুসন্ধানে ‘নিহতের’ সংখ্যা এখন একশ’র নিচে। কোনো নেতা জানান ৭৩, আবার কেউ জানান ৮৯। হেফাজতও আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংখ্যাগুলো স্বীকৃতি দেয়নি।

সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনার পর বলা হয়, নিহতের সংখ্যা ১১। তবে ৬ মে সন্ধ্যায় হেফাজত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিহতের সংখ্যা দেড় হাজার বলে দাবি করে। ৯ মে নিহতের সংখ্যা তারা আড়াই হাজার দাবি করে।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলও নিহতের সংখ্যা আড়াই হাজার বলে প্রচার চালিয়ে আসছে।

গত জুনে নিহত ও নিখোঁজের তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই সময় সংগঠনটির নায়েবে আমির মাওলানা নিজামউদ্দিন ইসলামপুরী দাবি করেন, তারা ৭৩ জন নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করতে পেরেছেন। তবে তিনিও নিহতের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেননি।

গত জুলাই মাসে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ উচ্ছেদ অভিযানে মৃতের সংখ্যা ৫৯ জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দেশীয় মানবাধিকার সংগঠন অধিকার তাদের প্রতিবেদনে জানায়, নিহতের সংখ্যা ৬১। এই সংখ্যাগুলোও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি হেফাজত।

সরকার এ সংখ্যাগুলো মিথ্যা ও বিকৃত বলে অভিযোগ করে আসছে। এ অভিযোগে ১০ আগস্ট অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে হেফাজতের সরবরাহ করা তালিকা অনুসারে অধিকার নিহতের সংখ্যা ৬১ বলে জানিয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ তথ্যকে অস্বীকার করেন হেফাজতের প্রচার সেলের প্রধান মাওলানা আহালুল্লাহ ওয়াসেল। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, “নিহতের সংখ্যা যেখানে শত শত, সেখানে আমরা ৬১ জন দাবি করে তালিক দেব কেন?”

এই নেতা দাবি করেন, শুধু ৫ মের অভিযানে নিহত অন্তত ২০০ জনের নাম-ঠিকানা পেয়েছেন তারা। তবে কৌশলগত কারণে এখন তা প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।

নিহত ও নিখোঁজের তালিকা প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা সুলতান মহিউদ্দিন সমকালকে জানান, সাংগঠনিকভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে ৮৯ জন নিহতের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, “স্থায়ী কবর ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমরা এ সংখ্যা নিশ্চিত করেছি গত জুলাই মাসে। তবে এরা নিহত হয়েছেন আন্দোলন চলাকালে বেশ কয়েক দিনে। এরা সবাই শাপলা চত্বরে রাতের অভিযানে মারা যাননি। এ তালিকা চট্টগ্রামে আহমদ শফীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকায় তালিকা প্রণয়নের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা হেফাজতের মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা জাফরুল্লাহ খানও স্বীকার করেন, তারা এখন পর্যন্ত ৮৯ জনের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছেন।

তবে এ সংখ্যার পক্ষেও কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি হেফাজত।

আগামী মাসেই তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে দাবি করেন সুলতান মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, “এখন কওমি মাদ্রাসায় ভর্তির মৌসুম। ভর্তি শেষ হলে আগামী মাসে হাটহাজারীতে হেফাজতের বৈঠক হবে। সেখান থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বড় আকারে সংবাদ সম্মেলন করে নিহতদের নাম-পরিচয় ও পরিবারের সদস্যদের হাজির করে তালিকা প্রকাশ করা হবে।”

শেয়ার করুন