মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি মনে করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ না নেওয়া মানে তা হবে একতরফা নির্বাচন। আর এ ধরনের নির্বাচন হলে তাতে জাপা অংশ নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পাশাপাশি সরকারের সাংবিধানিক মেয়াদকাল পর্যন্তই মহাজোটে থাকার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ বলেছেন, কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জাপা থাকবে না। প্রয়োজনে পরবর্তী নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি নেতৃত্বাধীন কোনো একটি জোটের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে তার দল। এছাড়া পার্টির দলীয় গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা কার্যক্রম নিয়ে বেগম রওশন এরশাদের তোপের মুখে পড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বেগম রওশন এরশাদ দলীয় গঠনতন্ত্রের ৩৯-এর ক ধারার সমালোচনা করে বলেন, এই ধারার একক ক্ষমতাবলে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে কাউকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করছেন। যাকে বহিষ্কার করছেন তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এটি ঠিক নয়। বৈঠকের একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। গতকাল বনানীর জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়াম বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা এবং দলের ভেতরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এতে ৩৫ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত এসব
প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বেগম রওশন এরশাদ, এসএমএম আলম, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহামুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, আহসান হাবিব লিঙ্কন প্রমুখ। কাজী জাফর আহমেদ বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও তেমন একটা কথা বলেননি। তবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পক্ষ নিলে তাদের বিতর্কের অবসান ঘটে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উপস্থিত প্রেসিডিয়াম সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা শোচনীয়। অনেক জেলায় কমিটি নেই আর যেসব জেলায় কমিটি রয়েছে, তাদের কার্যক্রম প্রায় নিষ্ক্রিয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর আগামী দেড় মাসের মধ্যে জেলা কমিটিগুলোর কার্যক্রম সক্রিয় করার সময়সীমা বেঁধে দেন পার্টির চেয়ারম্যান।
এসব তথ্যের বিষয় নিয়ে জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, জাতীয় পার্টি কোনো পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে না, যেখানে সাবেক রাষ্ট্রপতি জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। তিনি আরও বলেন, বৈঠকে এককভাবে বা আলাদা জোট করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিগগিরই জেলা ও বিভাগীয় সফরে গণসংযোগের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এসব বিষয় নিয়ে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা ও সত্তর দশকের ছাত্রনেতা মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা বলেন, সরকারের সাংবিধানিক মেয়াদকাল পর্যন্ত মহাজোটে থাকবে জাতীয় পার্টি। সাবেক ফার্স্টলেডি বেগম রওশন এরশাদের প্রস্তাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়েছে। এছাড়া পার্টির মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে প্রস্তাব করেন তিনি। এছাড়া পার্টির দলীয় ৩৯ক ধারার ক্ষমতাবলে দলের যে কাউকে চেয়ারম্যান বহিষ্কার করে থাকেন। এই সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হবে। কাউকে বহিষ্কার করার আগে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া আগামী নির্বাচনে যেসব মহিলা সরাসরি দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে চাইবেন, তাদের যোগ্যতা যাছাই করে মনোনয়ন দিতে হবে। তিনি জানান, আগামী নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে অর্থাত্ বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে জাতীয় পার্টি সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।