মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে নিয়ে বিব্রত বিএনপি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় হলে বিএনপির অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে চিন্তিত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এ বিষয়ে আলোচনা করতে শিগগিরই স্থায়ী কমিটি বসবে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা চান বিএনপি এ ব্যাপারে ‘শক্ত’ অবস্থা নিক। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য হিসেবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে ‘শক্ত’ অবস্থান নেওয়ার পক্ষে আছেন দলীয় কয়েকজন নেতাও।তবে তাঁর বিরোধী অবস্থানে থাকা নেতারা বলছেন, নির্বাচনের ঠিক আগে এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে দলের অবস্থান জনগণের মনোভাবের সঙ্গে মিল রেখেই হওয়া উচিত। ৪১ বছর পর যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে যে জনমত সৃষ্টি হয়েছে, সেটা উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। কারও কারও মতে, বিএনপি নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষকের দল দাবি করে। এ দলে অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এমন বাস্তবতায় একজন যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে অবস্থান নেওয়া ঠিক হবে না।বুধবার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। যেকোনো দিন রায় হতে পারে।বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক ও রাজনীতিতে বিএনপির অন্যতম মিত্র জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে সাজা হওয়ার পর বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এমনকি তাদের দেওয়া কর্মসূচিতেও সমর্থন দেয়নি। ১ আগস্ট যুদ্ধাপরাধের দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হলেও বিএনপির জোরালো কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না। কৌশলী একটি বিবৃতি দিয়ে দলটি বলেছে, বিচারাধীন বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের দলের অবস্থান কী হবে, তা জানি না। শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হতে পারে। দলের অবস্থান দলই ঠিক করবে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি সব সময় যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে। তবে তা হতে হবে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে তা যেন প্রভাবিত না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।এ পরিস্থিতিতে বিষয়টিকে বিএনপি কীভাবে দেখছে, কী ভাবছে, জানতে চাইলে দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বিব্রত হয়েছেন। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তাঁদের অধিকাংশ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তাঁদের যে ধরনের অবস্থান ছিল, এখনো তা-ই থাকা উচিত। জোরালো কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে কৌশলী অবস্থান গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় দুজন নেতা বলেন, খালেদা জিয়া তাঁদের এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দেবেন। দলের নেতা হিসেবে সাকা চৌধুরীকে যেমন অবজ্ঞা করা যাবে না, তেমনি যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিপক্ষেও যাওয়া যাবে না।
এদিকে সাকা চৌধুরীর বিচার চলাকালে বিভিন্ন সময়ে তাঁর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী সার্বিক বিষয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবহিত করেছেন। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর তাঁর পরিবারের সঙ্গে বিএনপির কয়েকজন নেতা যোগাযোগ করেন। পরিবারের সদস্যরা বিএনপিকে জোরালো অবস্থান নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
আজকালের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন সাকা চৌধুরীর স্ত্রী। চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেছেন, ফরহাত কাদের কিছুদিন পরপরই মামলার বিষয়ে বেগম জিয়াকে অবহিত করেন। চেয়ারপারসন তা মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
সাকা চৌধুরীর পরিবারের একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি এত দিনেও কিছু করেনি। এই দলের কাছে বেশি প্রত্যাশা করে লাভ আছে বলে তাঁরা মনে করেন না। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় দলকে সবকিছু অবহিত করা হয়েছে। দল কী করবে তা দলের বিষয়।