চার বছর মেয়াদি মাধ্যমিকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী

0
178
Print Friendly, PDF & Email

মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর হবে নবম হতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ৪ বছর মেয়াদি। এই আইনের আওতায় বর্তমান মাধ্যমিক স্কুলে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি সংযোজন এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল বা কলেজে পর্যায়ক্রমে নবম ও দশম শ্রেণি খোলা হবে। যেসব কলেজে স্নাতক/ডিগ্রি কোর্স চালু আছে, ওইসব কলেজে কেবল স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা চালু থাকবে।
সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক-শিক্ষক পরিষদ গঠন করতে হবে। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২টির বেশি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা সদস্য হিসেবে মনোনীত বা নির্বাচিত হতে পারবেন না। নির্বাচিত সভাপতিকে নূন্যতম স্নাতক পাস হতে হবে। এসব বিধান রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম ‘শিক্ষা আইন-২০১৩’ এর খসড়া। জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই আইন প্রণয়ন করছে।
৬৫টি ধারা সংবলিত ২৫ পৃষ্ঠার খসড়া আইনে আরো বলা হয়েছে, নবম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষকতার ক্ষেত্রে স্নাতক পাস এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষকতায় অনার্সসহ স্নাতকোত্তর পাস হতে হবে। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কারিগরি বিদ্যালয়, দাখিল/আলীম মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এবতেদায়ী মাদ্রাসায় শিক্ষক নির্বাচনে একটি স্থায়ী ‘বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন’ গঠন করা হবে। বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনটিআরসিএ) বিলুপ্ত করে এর জনবল এবং সম্পদকে আত্মীকৃত করে এই কমিশন গঠিত হবে।
মাধ্যমিক স্তরে সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি ধারায় অভিন্ন শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যসূচিতে বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ স্টাডিজ, সাধারণ গণিত ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয় পড়তে হবে। এসব বিষয়ে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়া হবে। অটিস্টিক, শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হবে। প্রতিটি শ্রেণির শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যবই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণয়ন করবে। বোর্ডের অনুমতি ছাড়া শিক্ষাক্রমে অতিরিক্ত কোনো বিষয় বা পাঠ্যবই অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এই বিধান লঙ্ঘন করলে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অনধিক ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাসের কারাদ- অথবা উভয় দ- দেয়া হবে।
আইন অনুযায়ী, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিবন্ধন এবং পাঠদানের অনুমতি নিতে হবে। অন্যথায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করাসহ দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অর্থদ- অথবা ১ বছরের কারাদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে। ইংরেজি মাধ্যমে বাংলা ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইংরেজি মাধ্যমসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফি সরকার বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্ধারণ করতে হবে। এই আইন ভঙ্গকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অর্থদ- অথবা ১ বছরের কারাদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে।
ভর্তির ক্ষেত্রে পাবলিক পরীক্ষা এবং ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নেয়া হবে। নবম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষা পাসের সনদ এবং একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে এসএসসি/দাখিল পাসের সনদ বাধ্যতামূলক। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে বছরে দুটি অর্থাৎ অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। দশম শ্রেণি শেষে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি)/দাখিল/সমমানের পরীক্ষা এবং দ্বাদশ শ্রেণি শেষে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি)/আলীম/সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এই আইনে মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, শিক্ষার অন্যান্য ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে এবতেদায়ী পর্যায় হবে ৮ বছর, দাখিল ২ বছর এবং আলীম ২ বছর। দাখিল ও আলীম পর্যায়ে শিক্ষাক্রম অনুমোদন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদারকি, পরীবিক্ষণ এবং মূল্যায়নসহ পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর’ নামে একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হবে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
শিক্ষা আইনে বৃত্তিমূলক, কারিগরি ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় বলা হয়েছে, দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে মাধ্যমিক স্তরের নবম-দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তিমূলক এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হবে। দেশের সব কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীনে আনা হবে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। নতুন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হবে। ১৯৬২ সালের শিক্ষানবিস আইনকে যুগোপযোগী করে দেশে ব্যাপক ভিত্তিতে শিক্ষানবিস কার্যক্রমের প্রবর্তন করা হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক মান ও শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ব্যয়ের যৌক্তিকতা পর্যালোচনা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্রমমান প্রদানের লক্ষ্যে ‘প্রধান শিক্ষা পরিদর্শক’ কার্যালয় স্থাপন করা হবে। এই কার্যালয় জাতীয় সংসদ ও সরকারের কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রদান করবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি খসড়া শিক্ষা আইনের বিষয়ে জনমত জানার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (িি.িসড়বফঁ.মড়া.নফ) প্রকাশ করা হয়েছে। এই খসড়ার ওপর সুশীলসমাজ, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের মানুষের মতামত, সুপারিশ এবং পরামর্শ আগামী ২৫ আগস্টের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ই-মেইলে (রহভড়@সড়বফঁ.মড়া.নফ, ৎধভরয়০২১২৫৯@ুধযড়ড়.পড়স, ষধথিড়ভভরপবৎ@সড়বফঁ.মড়া.নফ) জানানোর কথা বলা হয়েছে।

শেয়ার করুন