আলোচনা-সমালোচনার মুখে অবশেষে পিছটান দিয়েছে সরকার। খুলে ফেলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সাড়ে চার বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে টানানো বিলবোর্ডগুলো। রোববার রাত থেকে খুলে ফেলা হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্র“তি দিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকারের সাড়ে চার বছরের উন্নয়ন চিত্র। প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে হঠাৎ করে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে সরকারের উন্নয়নের তথ্যসংবলিত এসব বিলবোর্ড শোভা পেতে দেখা যায়। রাজধানীর বাইরে বেশ কয়েকটি শহরেও দেখা যায় উন্নয়নের ফিরিস্ত দিয়ে তৈরি এসব বিলবোর্ড। তবে রাজধানীতে প্রায় দুই হাজার বিলবোর্ড সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচারে ব্যবহার করার বিষয়ে কেউই এতদিন আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব স্বীকার করেননি। বোর্ডগুলোর মালিক, ব্যবহারকারী ও বরাদ্দপ্রাপ্তরাও কিছু জানেন না বলে জানান। তবে বিলবোর্ডগুলো সোমবার থেকে খালি করে দেয়া শুরু হয়েছে। বিলবোর্ড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ জানান, কার নির্দেশে ভাড়া করা নানা পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ডের ওপর কারা এসব ডিজিটাল ব্যানার লাগিয়েছেন তা তাদের জানা নেই। তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই বিভিন্ন বিলবোর্ডের ওপর গায়ের জোরেই সরকারের এ প্রচারণা চালানো হয়েছে।
হঠাৎ করে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সমালোচনার ঝড় তোলে বিরোধী দল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিলবোর্ডে উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ এক অনুষ্ঠানে বলেন, ক্ষমতাসীন দল চর দখলের মতো বিলবোর্ডও দখল করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অপর এক অনুষ্ঠানে বলেন, মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আইয়ুব খানের শেষ রক্ষা হয়নি, তেমনি বিলবোর্ড দিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালালেও প্রধানমন্ত্রীর শেষ রক্ষা হবে না।
আলোচনা-সমালোচনার মুখে মঙ্গলবার এ ব্যাপারে মুখ খোলেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিরোধী দলের অপপ্রচারের কারণে অনেক সময় সরকারের ভালো কাজগুলো প্রচার হয় না। এ কারণে সরকারের নির্দেশে বিলবোর্ডের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়েছে। সাত দিনের জন্য বিলবোর্ডগুলো ভাড়া নেয়া হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য বিলবোর্ডের বরাদ্দপ্রাপ্তদের ভাড়া দিয়ে দেয়া হবে। সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এ ব্যাপারে আলোচনা হয়।
গত সপ্তাহে ‘উন্নয়নের অঙ্গীকার/ধারাবাহিকতা দরকার’ শিরোনামের বিলবোর্ড প্রচারণায় আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় পাঠাতে জনগণের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়। বিলবোর্ডগুলোতে সরকারের সাফল্যের তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দেয়া হয়। কয়েকটি বিলবোর্ডে প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ছবি ব্যবহার করা হয়। রাজধানীর বনানী, গুলশান, মহাখালী, মগবাজার রেলক্রসিং, মালিবাগ রেলক্রসিং, মৌচাক ও এর আশপাশের এলাকা, খিলগাঁও ফ্লাইওভারের পার্শ্ববর্তী এলাকা, রামপুরা, আগারগাঁও বাসস্ট্যান্ড, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্কর, মতিঝিল, শ্যামলী, কল্যাণপুর, বিশ্বরোড, শেরাটন মোড়, মগবাজার, গুলশান, পল্টন, দৈনিক বাংলা, ধানমন্ডি, আজমপুর, বিমানবন্দর সড়কসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয়।
ঈদ বাজারের পণ্য ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের এই হঠাৎ প্রচারে বেশ বিপাকেই পড়ে। এসব বিলবোর্ডে খাদ্য নিরাপত্তা, কূটনৈতিক অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তা, দারিদ্র্য বিমোচন, যুগান্তকারী পরিবর্তন, বিশুদ্ধ খাবার পানি, শিক্ষিত সমাজ, উন্নত জাতি, সবার জন্য শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাসহ সরকারের বিভিন্ন অর্জনের চিত্র তুলে ধরা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিলবোর্ড মালিক সমিতির এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, অধিকাংশ বিলবোর্ড কোনো না কোনো কোম্পানির বিজ্ঞাপনের ওপরই সাঁটিয়ে দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানগুলো বার্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে নামি কোম্পানিগুলোর কাছে যেসব বিলবোর্ড ভাড়া দিয়েছিল কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা না করেই সেগুলোর ওপর সরকারি প্রচারের ডিজিটাল ব্যানার লাগিয়ে দেয়া হয়। ফলে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানগুলো পড়ে বিপাকে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিলবোর্ডের পরের মাসের ভাড়া তারা পাবেন কি না এ নিয়ে তারা সন্দিহান।
আলোচনা-সমালোচনার মুখে সোমবার থেকে বিলবোর্ডগুলো খুলে ফেলা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি এলাকার বিলবোর্ড খালি করে দেয়া হয়েছে। আজকালের মধ্যে সব বিলবোর্ড খালি করে দেয়া হবে বলে জানা গেছে।