ফিক্সিংয়ে জড়িত ৯ জন শাস্তি দেবে বিসিবি

0
156
Print Friendly, PDF & Email

সোমবার বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় ’৯৭ আইসিসি ট্রফি নিয়ে ঢাকায় আসে আইসিসির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। আলোর নিচে যেমন অন্ধকার, তেমনি ট্রফির সঙ্গে বিপিএলে ম্যাচ-ফিক্সিং কেলেংকারির তদন্ত প্রতিবেদনও নিয়ে আসে প্রতিনিধি দলটি। তবে কোনো শাস্তি ঘোষণা হয়নি। প্রতীক্ষা বাড়ল মোহাম্মদ আশরাফুলদের।
মঙ্গলবার ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ ছিল বিপিএলে ম্যাচ-ফিক্সিং কাণ্ডে কী শাস্তি জুটতে যাচ্ছে আশরাফুলের ভাগ্যে। আগের দিন সন্ধ্যায় ঢাকায় ঝটিকা সফরে আসা পাঁচ সদস্যের আইসিসি প্রতিনিধি দল ফিক্সিং-কাণ্ডের শাস্তির ব্যাপারে কোনো উপসংহার টানতে পারেনি। শুধু বিপিএলে (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ) ‘দুর্নীতির’ দায়ে অভিযুক্ত করেছে নয়জনকে। বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, নয়জনের মধ্যে আশরাফুল ছাড়াও রয়েছেন পেসার মাহবুবুল আলম রবিন, স্পিনার মোশাররফ হোসেন রুবেল, পেসার মিঠুন আলী, তরুণ ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয় ও দুই সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিক ও সানোয়ার হোসেন এবং ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের মালিক সেলিম চৌধুরী। তাদের বিরুদ্ধে ম্যাচ-ফিক্সিং বা স্পট-ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনেছে আইসিসির দুর্নীতি দমন ও নিরাপত্তা ইউনিট (আকসু)। আইসিসির নির্দেশনা অনুযায়ী, বিসিবি শিগগিরই একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করবে। ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য ১০ সদস্যের প্যানেল দু-একদিনের মধ্যে গঠন করা হবে। জানা গেছে, তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। অভিযুক্তরা আÍপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৪ দিন সময় পাবেন। এরই মধ্যে আকসুর তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় র‌্যাডিসন ব্ল– ওয়াটার গার্ডেনের গ্র্যান্ড বলরুমে আইসিসি ও বিসিবির এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসন একথা বলেন। এ সময় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। সোমবার রাতে আইসিসি প্রতিনিধি দল বিসিবির কাছে আকসুর তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়। কয়টা ফ্র্যাঞ্চাইজি এবং কয়টা ম্যাচে ফিক্সিং হয়েছে সে ব্যাপারে কিছু বলেনি তারা। তবে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি দোষী প্রমাণিত হলে আগামী আসরে তাদের বাদ দেয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ‘ক্রিকেটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময় অবস্থান নিয়েছে বিসিবি। তার প্রমাণ, স্পট-ফিক্সিং কাণ্ডের পর আমরা দ্রুত আইসিসি ও আকসুকে অভিহিত করে তাদের সাহায্য নিয়েছি।’ তবে অভিযুক্ত নয়জনের নাম প্রকাশ করেনি আইসিসি। তাদের ব্যাখ্যা, যেহেতু বিচার প্রক্রিয়াধীন, তাই তাদের নাম বলা যাচ্ছে না। নয়জনের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে ফিক্সিং সংক্রান্ত অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকি দু’জনের অপরাধ, তারা ঘুষ নেয়ার প্রস্তাব পাওয়ার পর বোর্ডকে জানাননি। গত মে মাসে বিপিএলে ফিক্সিং-কাণ্ড প্রথম জানাজানি হওয়ার পর বিসিবি তাৎক্ষণিকভাবে আশরাফুলকে সাময়িকভাবে সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করেছে। এদিকে মঙ্গলবার সকালে হোটেল র‌্যাডিসনে আইসিসি প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আশরাফুল। তিনি তাদের বলেন, ‘আমি দোষ স্বীকার করেছি। আমাকে যে শাস্তি দেবেন, আমি তা মেনে নেব। তবে আমি ক্রিকেটে আবার ফিরতে চাই।’ এদিন রাতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া আইসিসি প্রতিনিধি দলের পাঁচ সদস্য হলেন, আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসন, আইসিসির আইন বিভাগের প্রধান ইয়ান হিগিন্স, আকসু প্রধান ওয়াই পি সিং, তদন্ত কর্মকর্তা অ্যালান পিকক এবং আইসিসির প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা সামিউল হাসান।
সংবাদ সম্মেলনে রিচার্ডসন জানান, ‘নয়জনের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে সরাসরি ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে আকসু। তবে বিসিবির দুর্নীতিবিরোধী আচরণবিধি অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আগ পর্যন্ত নয়জনের নাম প্রকাশ করা হবে না।’ ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে মাহবুবুল আলম রবিন এবং স্পিনার মোশাররফ হোসেন রুবেলের নাম রয়েছে।
আইসিসির প্রধান নির্বাহী জানান, নয়জনের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে ম্যাচ বা স্পট-ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার সরাসরি অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের ওপরে বিসিবির নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৬ অনুযায়ী পাঁচ বছর থেকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। বাকি দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ম্যাচ-ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়া বা জানার পরও তারা নিয়মানুযায়ী কর্তৃপক্ষকে জানাননি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তারা এক থেকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন। সংবাদ সম্মেলনে বিমর্ষ বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘এই ঘটনায় দেশবাসীর মতো আমিও ব্যথিত, হতাশ। আজ (মঙ্গলবার) আমাদের ক্রিকেটের একটি কালো দিন। যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে আমাদের প্রিয় তারকারাও আছেন। তাদের আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। সেই বিশ্বাস ভেঙে যাওয়ায় আমি ভীষণ হতাশ। তবে আমি একদিক দিয়ে আনন্দিতও। আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। নইলে ক্রিকেটে দুর্নীতি আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যেত। এটা প্রত্যেকের জন্যই একটা বার্তা। দুর্নীতি করলে কেউই ছাড় পাবে না।’
বিপিএলের দ্বিতীয় আসরকে বাজিকরদের কালো থাবা থেকে বাঁচাতে আকসুকে তলব করে বিসিবি। ফাইনালের পরদিনই কয়েকটি ম্যাচ এবং ক্রিকেটারসহ কয়েকজনের আচরণ সন্দেহজনক বলে প্রতিবেদন জমা দেয় তারা। সেই প্রতিবেদন পাওয়ার পর দুই কোটি টাকায় তদন্তের জন্য আকসুর সঙ্গে চুক্তি করে বিসিবি। আকসুর প্রতিবেদন দেয়ার সময়সীমা বেশ কয়েকবার বাড়ানো হয়। নতুন নাম যোগ হওয়ায় বাড়ে তদন্তের ব্যাপ্তিও। তদন্তের জন্য অন্তত ছয়বার বাংলাদেশ সফর করে আকসুর প্রতিনিধি দল। আইসিসির বোর্ড সভায়ও ভালোভাবে তদন্তের পরামর্শ দেয়া হয়। বিসিবি তদন্ত অব্যাহত রাখার কথা জানালে কাজ চালিয়ে যেতে থাকে আকসু। দ্বিতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। স্বীকারোক্তি দেয়ার পর গত ৪ জুন সব ধরনের ক্রিকেট থেকে আশরাফুলকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে বিসিবি। সেদিনই ম্যাচ পাতানোয় জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চান টেস্ট ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক করা আশরাফুল।

শেয়ার করুন