অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালিয়েছে মিরসরাইয়ের শাহাদাত

0
201
Print Friendly, PDF & Email

মেধা-অধ্যবসায় আর অধম্য সাহস সফলতা এনে দিয়েছে মিরসরাইয়ের শাহাদাত হোসেনকে। বাবা আবুল বশর থেকেও নেই। ৫ বছর আগে অন্যত্র বিয়ে করে স্ত্রী ছেলে-সন্তানদের ফেলে চলে গেছে। সে থেকে মা নূরজাহান বেগম মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এখন পাগল প্রায়। প্রাইভেট টিউশন করে পুরো সংসারের সবকিছুর যোগান তাকেই করতে হয়। ছোট্ট চার ভাইয়ের দেখা-শুনা,রান্না-বান্না থেকে শুরু করে সবকিছু।
শাহাদাত হোসেনর বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ৯ নম্বর সদর ইউনিয়নের পশ্চিম কিসমত জাফরাবাদ গ্রামে। সে মিরসরাই ডিগ্রী কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এসএসসিতেও সে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল।
জাফরাবাদ গ্রামে শাহাদাতের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, চারপাশ ডোবা-নালা আর নদ্দমা, মাঝখানে দুই কামরার একটি ঝুঁবড়ি ঘর। এক ঘরে ছোট চার ভাই আর নিজের পড়াশুনা আর থাকার জায়গা। একই কামরায় গ্রামের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সে প্রাইভেট পড়ায়।অন্য কামরায় মানসিক ভারসাম্যহীন মা নূরজাহানের থাকা-খাওয়া সবকিছু। তাঁর পাশেই খোলা জায়গায় একটি মাটির উনুন। তাতে সবার রান্না করে শাহাদাত নিজেই। অনেক সময় অভাবের কারণে ক্ষধার্ত ছোট ভাইদের মুখেও খাওয়ার তুলে দিতে পারেনি সে। এসময় গ্রামের অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে থাকার ঘরটি গত বছর গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে তৈরি করে দিয়েছে।
এতকিছু সামাল দিয়ে পড়াশুনা ঠিক-ঠাক চলছে কিভাবে জানতে চাইলে সে জানায়, ‘আমার ছোট্ট চারটি ভাই মায়ের আদর, বাবার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত। তাদের মলিন মুখ আমাকে আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলেছে। দারিদ্রতাকে আমি ভয় পাই না। আমি ভাইদেরকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলে স্বার্থপর বাবার বঞ্চনার প্রতিবাদ করতে চাই। আমার অসুস্থ মাকে সুস্থ করতে চাই।’
এসময় দেখা মেলে গ্রামের শিক্ষক জামশেদ আলমের সাথে। তিনি জানান, ‘মেধাবী শিক্ষার্থীদের দারিদ্র জয়ের অনেক গল্প পত্র-পত্রিকায় পড়েছি। আমার শিক্ষকতা জীবনেও অনেক দেখেছি। কিন্তু শাহাদাতের মত এমন কাউকে দেখিনি। তাকে নিয়ে আমরা গ্রামবাসী গর্ব করি।’ এসময় জামশেদ আরো জানান, শাহাদাতের পড়াশুনা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যেতো। তার নানা রফিউজ্জামান একটি মাদরাসায় দফতরীর কাজ করে তাদেরকে কিছুটা সাহায্য করে।
এসএসসিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে বিনাবেতনে পড়ালেখার সুযোগসহ আর্থিকভাবে সহযেগিতা করতেন  মিরসরাই ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক নাসির উদ্দিন। এ প্রসঙ্গে প্রভাষক নাসির উদ্দিন বলেন, শাহাদাত খুবই মেধাবী। প্রতিভাবান ছেলেটি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে সহায়তা ও নিয়মিত পাঠচর্চা অব্যাহত থাকলে সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
প্রতিবেশীরা জানায়, ‘এতটুকু ছেলে সংসারের রান্না-বান্না, মায়ের পরিচর্চা, ছোট চার ভাইয়ের গোসল, খাওয়া-দাওয়া, তাদের স্কুলে পাঠানো, সংসারের অর্থ জোগাড় করতে প্রাইভেট টিউশন, আবার নিজের পড়াশুনা সবকিছু কি করে সামলায় তা দেখে আমরা হতবাক।’
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে শাহাদাত জানায়, ‘দেশের ভাল কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করবো। পড়াশুনা শেষ করে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই। আমার ছোট ভাইগুলোকে নিয়েও আমার অনেক স্বপ্ন আছে।’
শাহাদাত আরো জানায়, তাঁর ছোট্ট চার ভাই পারভেজ হোসেন গত বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমাপনী পরীক্ষায় বৃত্তি নিয়ে পাশ করেছে। তার পরেরজন ফারহান হোসেন ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। সেও মেধাবী ছাত্র। ক্লাসে তার রোল নম্বর ৩। চতুর্থজন ফরহাদ হোসেন পড়ে চতুর্থ শ্রেণীতে। সে ক্লাসের ক্যাপ্টেন। সবার ছোটজন রফিকুল ইসলাম মাত্র শিশু শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে।

শেয়ার করুন