জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় মোট ৯টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এতে প্রায় দশ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ব্যয়ের মধ্যে পাঁচ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এবং অবশিষ্ট ৫ হাজার ২৩২ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য থেকে মেটানো হবে।
আজ মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা ।
ভূমিহীন ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের আবাসন সুবিধা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে “আশ্রয়ণ-২” শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন একনেক। সভায় প্রকল্পটির মেয়াদ জুন ২০১৭ পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রাক্কলিত ব্যয় দুই হাজার ২০৪ টাকা নির্ধারণ করে এর ১ম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়। সংশোধিত প্রকল্পের অধীনে পূর্বের চেয়ে ৩৬ হাজার বেশি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সভা শেষে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ভূইয়া শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ডিজাইনের ঘর-বাড়ীসহ অন্যান্য ভূমিহীনদের জন্য বহুতল পাকা ও আধাপাকা ভবন নির্মাণ করা হবে। ৭০০টি কমিউনিটি সেন্টারসহ বিভাগীয় সদর দপ্তর, সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভায় বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া, নিজস্ব জমি আছে অথচ বাড়ী নেই এমন সুবিধাভোগীদের জন্য তাদের জমিতে বাড়ি নির্মাণ করা হবে। একইসাথে সুবিধাভোগী পরিবারবর্গকে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সুবিধা দিয়ে অত্ম-কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। কক্সবাজার এয়ারপোর্ট সমপ্রসারণের কাজে যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তাদের পুনর্বাসনের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণের কাজও প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তিনি আরো জানান, ‘আশ্রয়ণ-২’ প্রকল্পটি ইতিপূর্বে ১৯৯৭ সালে বাস্তবায়িত ‘আশ্রয়ণ’ এবং জুলাই ২০০২ থেকে ডিসেম্বর ২০১০ মেয়াদে বাস্তবায়িত “আবাসন” প্রকল্পের সফলতার ধারাবাহিকতায় প্রণীত হয়েছে। শুরুতে এটি এক হাজার ১৬৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০১০ থেকে জুন ২০১৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির মাধ্যমে ৫০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষমাত্রার বিপরীতে ইতিমধ্যে ১৪ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
সভায় ‘চামড়া শিল্প নগরী, ঢাকা (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। এর আওতায় সাভারের চামড়া শিল্প পার্কে বেসরকারি চামড়া শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য উপযোগী শিল্প প্লটসহ অবকাঠামোগত সুবিধা প্রদান করা হবে। ঢাকার হাজারীবাগের চামড়া শিল্প ইউনিটগুলি এখানে স্থানান্তরিত হবে। কারখানাসমূহের উপজাত বর্জ্য পরিবেশসম্মতভাবে প্রক্রিয়াকরণের জন্য এখানে সিইটিপি ও ডাম্পিং ইয়ার্ড স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ লোকের সরাসরি কর্মসংস্থান হবে। প্রকল্পটির ব্যয় ধারা হয়েছে এক হাজার ৭৯ কোটি টাকা।
সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, ১৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে লবণাক্ত পানি পরিশোধনাগার স্থাপন প্রকল্প, ১০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ কমপ্লেক্স স্থাপনের (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, ১৪১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত আউটার রিং রোড (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ৪৪৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলি ওয়াটার সাপ্লই প্রকেল্প (ফেজ-২), ৯০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভেড়ামারা-খুলনা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্প (সংশোধিত), ৪৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে মনোহরদী-ধনুয়া এবং এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড় পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্প, এবং ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সীমান্তে ২৯টি বিওপিতে বিদ্যুত্ সংযোগ এবং সৌর শক্তির মাধ্যমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর ১৬৮টি বিওপিতে বিদ্যুতায়ন প্রকল্প।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পরিকল্পণামন্ত্রী এ কে খন্দকার, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ একনেক এর অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রণালয়ের সচিববৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।