অগ্নিকাণ্ডে এবং ভবন ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যু রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে সীমাহীন গড়িমসি এবং শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তায় কর্তৃপক্ষ সঠিক উদ্যোগ না নেয়ায় ইউরোপেও আমেরিকার মত জিএসপি সুবিধা স্থগিতের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমনি অবস্থায়ও বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির গরীব মানুষদের ভাগ্য পরিবর্তনে নিরন্তরভাবে প্রয়াসরত গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে লেগেছেন। দেশের সামগ্রিক কল্যাণের পথের চেয়ে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসকে যে কোনো উপায়ে অপদস্থ-হেনস্তা এবং মানুষের কাছে থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টাকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রধান কাজ হিসেবে মনে করছেন। এ ধরনের মন্তব্য উচ্চারিত হয়েছে বিশ্বে সর্বাধিক প্রচারিত ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এবং মর্যাদাসম্পন্ন নিউইয়র্ক টাইমসে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ দুটি পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণাত্মক দুটি সম্পাদকীয় সুধীমহলেও নানা প্রশ্নের উদ্রেক ঘটিয়েছে।
১৩ আগস্ট ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল ‘ব্যাঙ্কার টু দ্য পোর নো মোর’ শিরোনামে এবং ৬ আগস্ট নিউইয়র্ক নিউইয়র্ক টাইমসে ‘বাংলাদেশ টেকস এইম এ্যাট গ্রামীণ ব্যাংক/দ্য প্রাইম মিনিস্টার শুড স্টপ হার সিনিক্যাল ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট দ্য পাইয়োনিয়ারিং লেন্ডার’ শিরোনামে। উভয় সম্পাদকীয়তেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০০৭ সালে কেয়ারটেকার সরকারের আমলে রাজনৈতিক দল গড়ার অভিপ্রায় প্রকাশের খেসারত দিতে হচ্ছে ড. মুহম্মদ ইউনূসকে। সে কারণেই রোষানলে পড়েছেন শেখ হাসিনার। বয়সের অজুহাত দেখিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তাকে সরিয়ে দিয়েই ড়্গানত্ম হননি শেখ হাসিনা এবং তার সরকার, এখন চষ্টো করা হচ্ছে গ্রামীণকে ১৯ টুকরা করার। ষড়যন্ত্র চলছে ৮৪ লড়্গাধিক গরিব (যার সিংহভাগই মহিলা) মানুষের মালিকানাধীন ব্যাংককে জাতীয়করণ করার। একইভাবে এর পরিচালকদের ড়্গমতা (যারা ঐ ঋণগ্রহিতা-শেয়ার হোল্ডারদের মধ্য থেকে নির্বাচিত) খর্ব করার নানা পন্থা অবলম্বনের চষ্টোও চলছে বলে মনত্মব্য করা হয়েছে সম্পাদকীয়তে। যে সময় জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে বাংলাদেশের উচিত গার্মেন্টস সেক্টরের সার্বিক কল্যাণে মনোযোগ দেয়ার, সেটি না করে তারা গ্রামীণকে নিশ্চিহ্ন করার কূটকেৌশলে লপ্তি রয়েছেন-এমন মতামতও ব্যক্ত করা হয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. মুহম্মদ ইউনূসকে অপসারণের পর অনেক রিপোর্ট করেছে এ দুটি পত্রিকা। নিবন্ধ এবং উপ-সম্পাদকীয়, এমনকি সম্পাদকীয়ও প্রকাশ করেছে। তবে এবারের মত সরাসরি আক্রমণাত্মক কোন বাক্য কখনোই প্রয়োগ করা হয়নি। শীর্ষস্থানীয় এবং মর্যাদাসম্পন্ন পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকার সম্পর্কে এ ধরনের মতামত প্রকাশের ফলে কমু্যনিটিতেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সকলে আশা করছেন, দেশের মর্যাদাহানিকর কোনো সংবাদ/সম্পাদকীয় প্রকাশ না পায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা সতর্ক হবেন।