কাঠগড়ায় আশরাফুলসহ ৯

0
174
Print Friendly, PDF & Email

বলতে পারছি না’, ‘বলা নিষেধ’, ‘নিয়ম নেই বলার’—ডেভ রিচার্ডসন যেন এই বাক্যগুলোর বাইরে আর কিছু জানেন না! অনেক প্রশ্ন করা হলো তাঁকে, অনেক কথা বললেন আইসিসির প্রধান নির্বাহীও। কিন্তু সব কথাই ঘুরেফিরে ওই বাক্যগুলোতে গিয়ে শেষ হচ্ছে অথবা কথার মানেটা ওরকম দাঁড়াচ্ছে। রিচার্ডসনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের দিকে। কী লাভ? তিনিও দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালার দোহাই দিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রইলেন! ফলাফল, অনেক অপেক্ষা আর জল্পনাকল্পনার সংবাদ সম্মেলন শেষেও র‌্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের দোতলায় সাংবাদিকদের অতৃপ্ত চাহনি।

এটা হয়তো অনেকটাই অনুমিত ছিল। তবে আকসুর তদন্ত নিয়ে আইসিসি ও বিসিবির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একটা জিনিস পরিষ্কার হলো, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) গত আসরে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার দায়ে নয়জনকে অভিযুক্ত করেছে আকসু। নয়জনের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। আর এসব ঘটনা জেনেও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করায় অভিযুক্ত হয়েছেন বাকি দুজন। তবে নয়জনের কারও নামধাম কিংবা এর মধ্যে কতজন ক্রিকেটার, তাঁদের সবাই বাংলাদেশি কি না, আনুষ্ঠানিকভাবে সেসবের কিছুই বলেননি আইসিসির প্রধান নির্বাহী কিংবা বিসিবি সভাপতি। শুধু জানালেন, এই নয়জনকে তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিক অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া আকসুর তদন্তে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে সুনির্দিষ্টভাবে উঠে এসেছে দুবারের বিপিএল চ্যাম্পিয়ন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের নাম। এমনকি সংবাদ সম্মেলনে একজন তো প্রশ্নই করলেন, এ দেশের ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করা গ্ল্যাডিয়েটরসের শিরোপা কেড়ে নেওয়া হবে কি না। সরাসরি জবাব না দিয়ে এটিও পাশ কাটিয়ে গেছেন বিসিবি সভাপতি।

বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে ফিক্সিংয়ের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে রিচার্ডসনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে পরশু সন্ধ্যায়। এর পর থেকে কী আছে সেই প্রতিবেদনে, সেটাই ‘টক অব দ্য টাউন’। গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায় সংবাদ সম্মেলন, কিন্তু আগ্রহটা এতই বেশি যে ঘণ্টা খানেক আগেই দোতলায় সংবাদ সম্মেলনকক্ষ কানায় কানায় পূর্ণ। তবে লিখিত বক্তব্য পড়ে যাওয়ার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে ডেভ রিচার্ডসন আর নাজমুল হাসান দুজনেই বারবার দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালার কথা বলে সে উৎসাহ নিভিয়ে দিয়েছেন অনেকটাই।

নয়জনের নাম এসেছে, এটা জানা গিয়েছিল রিচার্ডসনের লিখিত বক্তব্যেই। পরে বিসিবি সভাপতি জানালেন, তাঁদের সবাইকে গতকাল সকালেই অভিযোগ সম্পর্কে অবহিতও করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মোহাম্মদ আশরাফুল আর মোহাম্মদ রফিক র‌্যাডিসন হোটেলেই এসে নিয়েছেন তাঁদের চিঠি। আশরাফুল সংবাদমাধ্যমের কাছে সেটি পরে স্বীকারও করেছেন। বাকিদের চিঠিও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের ঠিকানায়। এরই মধ্যে দোষ স্বীকার করে বিবৃতি দেওয়ায় সংবাদ সম্মেলনেও ঘুরেফিরে এসেছে আশরাফুলের নাম। তবে রিচার্ডসন স্পষ্ট করেই বলেছেন, সংবাদমাধ্যমে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করাটা একান্তই আশরাফুলের সিদ্ধান্ত ছিল। আকসু বা আইসিসি তাঁকে এ বিষয়ে কিছু বলেনি।

আকসুর তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কয়েক দিনের মধ্যেই একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে চেয়ারম্যান করে একটি প্যানেল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। ১০ সদস্যের সেই প্যানেলে থাকবেন তিনজন বিচার বিভাগের প্রতিনিধি, তিনজন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট আরও চারজন। তাঁদের মধ্য থেকে তিনজনকে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করবেন চেয়ারম্যান। সেই ট্রাইব্যুনালের সামনে দাঁড়াতে হবে অভিযুক্ত নয়জনকে।

যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাঁরা গতকাল চিঠি পাওয়ার পর থেকে ১৪ দিনের মধ্যে নিজেদের অপরাধ স্বীকার অথবা আত্মপক্ষ সমর্থনের সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে দুই ক্ষেত্রেই তাঁদের ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি হতে হবে। ফিক্সিংয়ে জড়িত প্রমাণিত হলে ট্রাইব্যুনাল নির্ধারণ করবেন তাঁদের শাস্তির মেয়াদ, আর নির্দোষ হলে বেরিয়ে আসবেন সসম্মানে। এ প্রক্রিয়াটি শেষ করতে মাস দুয়েক সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। যাঁরা অপরাধী প্রমাণিত হবেন, তাঁদের শাস্তিটা কী হবে, তা লিখিত বক্তব্যেই স্পষ্ট করেছেন ডেভ রিচার্ডসন। সরাসরি ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অপরাধের শাস্তি কমপক্ষে পাঁচ বছর থেকে সর্বোচ্চ আজীবন নিষিদ্ধ। আর ফিক্সিং সম্পর্কে জানার পরেও সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে না জানানোর শাস্তি এক থেকে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা।

শেয়ার করুন