দেশে প্রায় অর্ধেক মৃত্যুই খাদ্যে ভেজাল বা বিষক্রিয়াজনিত কারণে ঘটে বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক হোসেন উদ্দিন আহমেদ শেখর। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিচালিত গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে তিনি এই তথ্য তুলে ধরেন। বাণিজ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে গতকাল বুধবার রাজধানীতে একটি সেমিনারে প্রজেক্টরের সাহায্যে খাদ্যে ভেজালে মৃত্যুর এ পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে ভলান্টারি কনজ্যুমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটি (ভোক্তা) এবং বাংলাদেশ মুড়ি ও চিড়া মিল মালিক অ্যাসোসিয়েশন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক হোসেন উদ্দিন আহমেদ শেখর।
প্রজেক্টরের সাহায্যে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক শেখর বলেন, ‘দেশে বর্তমানে ৪৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যুই হচ্ছে খাদ্যে বিষক্রিয়া এবং খাদ্যজনিত অসুস্থতার কারণে। ভেজাল খাদ্য একটি মরণব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। খাদ্য নিজেই এখন রোগে পরিণত হয়েছে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের বলেন, খাদ্যে ফরমালিনের ব্যবহার প্রতিরোধে সরকার কঠোর আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। এ জন্য শাস্তির বিধান রেখে প্রস্তাবিত ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ফরমালিন আমদানির ক্ষেত্রে সরকার কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। ফলে গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে আর কোনো ফরমালিন আমদানি করা হয়নি। পর্যাপ্ত আইন থাকা সত্ত্বেও ভেজাল বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, ভেজাল খাদ্যের জন্য মৃত্যুদণ্ডের মতো বিধান থাকার পরও আইনের প্রয়োগ তেমন না হওয়ায় ভেজাল কমছে না। মন্ত্রী বলেন, শুধু আইন করে হবে না, ভেজাল বন্ধে ভোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহম্দ ব্যবসায়ীদের ভেজাল ব্যবসা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অধিকার রক্ষায় ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে, তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তা হলেই খাবারে ভেজাল কমানো সম্ভব হবে।
ভোক্তার চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হোসেন মিয়া। এ ছাড়া উপস্থাপিত প্রবন্ধের ওপর বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. খালেদা ইসলাম ও ড. লতিফুল বারী, এফবিসিসিআই সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, পুলিশের প্রাক্তন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আব্দুর রহিম খান, অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান, উন্নয়নধারার সদস্যসচিব আমিনুর রসুল বাবুল প্রমুখ।