ঢাকা-চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারে কৃষিপণ্যের দাম কেন অস্বাভাবিক রকমের বেশি, তার কিছু ব্যাখ্যা মিলবে শনিবারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে। পথে পথে পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগ সরেজমিনে যাচাই করে দেখতে প্রথম আলোর প্রতিবেদক কৃষিপণ্যবাহী ১০ টনি এক ট্রাকে চালকের পাশে বসে বগুড়ার মহাস্থান হাট থেকে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার পর্যন্ত যাওয়ার পথে দেখেছেন, কোথায় কোথায় পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়েছে।
মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো থেকে চাঁদার টাকা আদায়ের কিছু নির্ধারিত স্থান আছে। ট্রাক সেখানে পৌঁছার আগেই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পুলিশের সদস্য বা তাঁদের দালালদের হাতে দিতে হয়। না দিলে পুলিশ নানা অজুহাতে ট্রাক আটকায়, হয়রানি করে। কৃষিপণ্য পচনশীল, ট্রাক অনির্দিষ্ট সময় ধরে আটকে থাকলে তা পচে যাবে—এই ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পুলিশকে চাঁদা দিতেই হয়। এটা যে কোনো কোনো স্থানে ঘটনাক্রমে ঘটে, বিষয়টি মোটেও তা নয়। বরং পুলিশের এই চাঁদাবাজি এক নিয়মিত ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। চাঁদার পরিমাণ, চাঁদার টাকা গ্রহণের স্থান—সবই নির্ধারণ করা আছে।
অথচ হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে চোর-ডাকাতদের উপদ্রব ও সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের হাত থেকে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোর সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। চাঁদাবাজি রোধে যারা নিয়োজিত, তারাই চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হলে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের শাস্তির কয়েক গুণ বেশি। কিন্তু শাস্তির কোনো বালাই নেই; বরং হাইওয়ে পুলিশের এই সংগঠিত ও নিয়মিত চাঁদাবাজি চলছেই। পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘সার্বিক বিবেচনায় চাঁদাবাজি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ আর আমাদের কাছে মহাসড়কের যে বাস্তব চিত্র পরস্ফুিট হয়েছে, তাতে সুস্পষ্ট যে হাইওয়ে পুলিশ নিজেরাই চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। পশ্চিমাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট ইসরাইল হাওলাদার স্বীকার করেছেন, সবজির ট্রাকে চাঁদাবাজি হয়, কিন্তু এর দায় তাঁর নয়, অন্যের। কারণ, তাঁর মতে, মহাসড়কে চাঁদাবাজি শুরু হয় তাঁর দায়িত্বের এলাকার বাইরে গিয়ে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক প্রথম আলোকে বলেছেন, দুর্বৃত্তদের চাঁদাবাজির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ভুক্তভোগীরা যেন জেলা পুলিশ বা পুলিশ সদর দপ্তরে যোগাযোগ করেন। আমাদের শনিবারের প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়েছে, মহাসড়কে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত ‘দুর্বৃত্তদের’ ভূমিকায় খোদ হাইওয়ে পুলিশ। তাদের এই সংগঠিত ও নিয়মিত চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে কে? জনগণের অর্থে পরিচালিত, জনগণের সেবক বলে বিবেচিত পুলিশ বিভাগ যদি নিজেই নিজের একটা অংশের চাঁদাবাজি শক্ত হাতে দমনের দায়িত্ব অনুভব না করে, তাহলে এই পুলিশ জনগণ কেন পুষবে?
হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধের উদ্যোগ অবিলম্বে নিতে হবে। দায়িত্বটা পুলিশ বিভাগেরই। সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তদের চাঁদাবাজি বন্ধ করে পুলিশের সদস্যরা নিজেরাই চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হবেন আর পুলিশ বিভাগ কোনো পদক্ষেপ নেবে না—তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
প্রথম আলো