মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের রায় যেকোনো দিন ঘোষণা করা হবে।
আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ ৩৯ দিনের শুনানি শেষে বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এর মধ্য দিয়ে আপিল আদালতে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে।
কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ আলাদা দুটি আপিল করে। রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আরজি জানানো হয়। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আপিলে কাদের মোল্লাকে দণ্ড থেকে অব্যাহতির আরজি জানানো হয়।
গত ১ এপ্রিল আপিলের শুনানি শুরু হয়। তিন মাস ২৩ দিনের মাথায় এখন রায় ঘোষণার অপেক্ষায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আরও দুটি আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সমাপনী বক্তব্য শুরু করেন। নয়টা ৫০ মিনিটে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। এরপর আদালত বলেন, রায়টি অপেক্ষমাণ রাখা হলো।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কাদের মোল্লার পক্ষে আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক ও শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল সোমবার অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) ও আসামিপক্ষের আইনজীবী বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করেন।
গতকাল শুনানিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে আনা সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে মত দিয়েছেন অ্যামিকাস কিউরি এ এফ হাসান আরিফ। এর মধ্য দিয়ে ৮ জুলাই শুরু করে গতকাল পর্যন্ত সাতজন অ্যামিকাস কিউরিরই মতামত উপস্থাপন শেষ হয়। গত রোববার অ্যামিকাস কিউরি টি এইচ খানও মত দেন, ওই সংশোধনী কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তবে ওই সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে ইতিমধ্যে মত দিয়েছেন পাঁচজন অ্যামিকাস কিউরি। তাঁরা হলেন রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি।
আবদুল কাদের মোল্লার দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানিকালে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি প্রশ্ন ওঠায় গত ২০ জুন আপিল বিভাগ এ বিষয়ে মতামত দিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে জ্যেষ্ঠ সাত আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন।
প্রশ্ন দুটি হলো—দণ্ড ঘোষণার পর আইনে আনা সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর অধীনে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে কি না।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে দুটিতে তাঁকে যাবজ্জীবন ও তিনটিতে ১৫ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন। অন্য অভিযোগ থেকে তিনি খালাস পান। কিন্তু কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ। পরে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সমান সুযোগ রেখে ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) (সংশোধন) বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। আগে কোনো অভিযোগে আসামির সাজা হলে সে ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগ ছিল না সরকারপক্ষের।
৩ মার্চ কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরদিন ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডাদেশ বাতিল করে অব্যাহতি চেয়ে আপিল করেন কাদের মোল্লা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল আপিলের শুনানি শুরু হয়।
জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধেও আপিল হয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-১ সাঈদীর বিরুদ্ধে এবং ৯ মে ট্রাইব্যুনাল-২ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার রায় দেন।