ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের দুই সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় সরকারি দলের সাংসদ গোলাম মাওলা রনিকে ‘গণমাধ্যমের শত্রু’ বলে আখ্যা দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। গতকাল সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গোলাম মাওলাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে তাঁরা এ ঘোষণা দেন। সাত দিনের মধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
‘ইনডিপেনডেন্ট পরিবার’-এর ব্যানারে আয়োজিত ওই মানববন্ধনে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের বক্তব্যে এ ঘটনার প্রতিবাদের পাশাপাশি উঠে আসে আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধের প্রসঙ্গও। প্রায় সব বক্তাই সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন।
ঢাকার বাইরে রাজশাহী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, রাঙামাটিসহ বিভিন্ন জেলায় সাংসদ গোলাম মাওলাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘আমরা বিএনপি-আওয়ামী লীগ কিংবা ভবিষ্যতের কোনো সরকার বুঝি না। জনসমক্ষে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করাই আমাদের কাজ। কিন্তু আমাদের যাঁরা আঘাত করবেন, আমরা প্রত্যাঘাতও করতে পারি।’ তিনি বলেন, সাত দিনের মধ্যে যদি গোলাম মাওলাকে গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে সাংবাদিক সমাজ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন সম্প্রচার মাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা গোলাম মাওলাকে টেলিভিশনে কোনো অনুষ্ঠানে না ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। অথচ এখনো কিছু সম্প্রচার মাধ্যমের টক শোতে তাঁকে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে তিনি বিভিন্ন কথা বলে দোষ লুকানোর চেষ্টা করছেন। তাঁকে এ সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি শাহেদ চৌধুরী বলেন, ‘ফুটেজে দেখা গেল, কী নির্মমভাবে গোলাম মাওলা সাংবাদিকের গায়ে হাত তুলেছেন। আমরা তাঁকে গণমাধ্যমের শত্রু ঘোষণা করছি। তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।’
ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান সাংসদ গোলাম মাওলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে বলেন, তিনি যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা বিরল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ডিআরইউর যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াছ হোসেনের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক মহিদুল ইসলাম ও উপ-বার্তা সম্পাদক মোস্তফা আকমল, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিকদের ওপর সাংসদ গোলাম মাওলার হামলার প্রতিবাদে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিকেরা। এতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।
ঢাকার বাইরে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
রাজশাহী: দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে আয়োজিত মানববন্ধনে আগামীবার গোলাম মাওলাকে দল থেকে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি জানানো হয়। সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে এ মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সাংবাদিক হাসান মিল্লাত, মামুন অর রশিদ, আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, সরদার আবদুর রহমান, সরদার আনিছুর রহমান প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান।
নোয়াখালী: বেলা ১১টায় নোয়াখালী প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ক্লাবের সামনের সড়কে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকেরা অংশ নেন। ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। পরে এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সাংবাদিক আনোয়ারুল হক, মনিরুজ্জামান চৌধুরী, মেজবাহ-উল হক প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা সাংসদ গোলাম মাওলার হাতে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
রাঙামাটি: বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দক্ষিণ গেটে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে মানববন্ধন করা হয়। সাংবাদিকদের এ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও সংহতি প্রকাশ করেন। মানববন্ধনে বক্তারা সাংসদ গোলাম মাওলাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানান। এতে বক্তব্য দেন সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে, এ কে এম মকছুদ আহমেঞ্চদ, চৌধুরী হারুনুর রশীদ, মনসুর আহমেদ, বিএনপির নেতা দীপেন দেওয়ান ও কমিউনিস্ট পার্টির মো. বখতিয়ার হোসেন।
চাঁদপুর: চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সামনে বিকেলে চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এতে বক্তারা সাংবাদিকের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা এবং সাংসদ গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সাংবাদিক শরীফ চৌধুরী, রহিম বাদশা, ইকরাম চৌধুরী, কাজী শাহাদাত প্রমুখ।