বাংলাদেশ ব্যাংকের নিদর্শেনা লংঘন করে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দিনের পর দিন সাভর্সি চাজর্রে নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অধিকাংশ ব্যাংক লাগামহীনভাবে সুদের হার নির্ধারণের পাশাপাশি ঋণ প্রক্রিয়াকরণের নাম করে নানা ধরনের ফি আরোপ করে চলেছে। এছাড়া মেয়াদ পূতর্রি আগে ঋণ সমন্বয় করতে চাইলে কোনো কোনো ব্যাংক এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আরও ৪ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ আদায় করছে। ফলে সামগ্রিকভাবে ঋণের সুদ হার ৩ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে উদ্যোক্তাদের ২০ থেকে ২৪ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হচ্ছে।
এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে নির্ধারিত সুদে আমানত সংগ্রহ করলেও ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাস পর্যন্ত ২৩টি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নিদর্শেনা অমান্য করে ঋণ বিতরণ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী অধিকাংশ ব্যাংক ১২ শতাংশের নিচে আমানত সংগ্রহ করলেও শিল্পোদ্যোক্তাদের ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে সুদ দিতে হচ্ছে ১৭ থেকে ২২ শতাংশ। এছাড়া ব্যাংকগুলো সাভর্সি চার্জ আদায় করছে মাত্রাতিরিক্ত। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সেবার নামে চার্জ ও ফি আদায় করছে। স্টেটমেন্ট, অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, এটিএম সাভর্সি, মেইনটেনেন্স চার্জ, সলভেন্সি চার্জ, আইনজীবী চার্জ, ম্যানেজমেন্ট চার্জ ইত্যাদি ছাড়াও নানা রকম নতুন নতুন কারণ দেখিয়ে অর্থ কেটে নেয়া হচ্ছে। অনেক সময় গ্রাহকদের না জানিয়েই বিভিন্ন সেবার নামে টাকা কেটে রাখা হয়। অনেক সময় গ্রাহকরা জানতেও পারেন না তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে কী পরিমাণ টাকা কাটা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, উচ্চ হারে সুদ দিয়ে আমানত নেয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যাংকগুলো নামলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিকবার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ বিষয়টি অবহিত করেও কোনো সুফল পাচ্ছে না শিল্প উদ্যোক্তারা।
তাদের অভিযোগ, সুদের হার কমানো, সাভর্সি চার্জ সহনীয় পর্যায়ে রাখার বিষয়ে বারবার প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। তারপরও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নতুন বিনিয়োগে কোনো শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে না।
এছাড়া ব্যাংক ঋণে সুদের হার কমানোর জন্য শিল্প উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একাধিকবার বঠৈক করেও এই সমস্যার কোনো সুরাহা করতে পারেনি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ব্যাংকগুলো গতানুগতিক কিছু বিষয়ে তাদের সাভর্সি চার্জ কত তা তাদের সিডিউল অব চাজর্সে তালিকায় প্রদর্শন করছে। এছাড়া অনেক চার্জ তারা প্রকাশ করছে না। গ্রাহক থেকে লেনদেনের সময় ওইসব লুকায়িত সাভর্সি চার্জ কেটে নিচ্ছে। গ্রাহক এর প্রতিবাদ করেও কোনো ফল পাচ্ছে না। ফলে অনেক গ্রাহক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অভিযোগ করছেন। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলো সাভর্সি চাজর্রে যে তালিকা পাঠাচ্ছে তাতে সব চার্জ বিষয়ে উল্লেখ থাকছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি এ ধরনের অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে। এ বিষয়ে বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত বলেন, ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত সাভর্সি চার্জ নেয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ বেড়ে যায়। এর প্রভাবে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়। তিনি উল্লেখ করেন, এর আগে একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ বিষয়ে নিদর্শেনা দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। অ্যাকাউন্ট পরিচালনার জন্য ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে বাষর্কি একটি চার্জ নিয়ে থাকে। ই-ব্যাংকিং, এসএমএস ব্যাংকিংসহ এ ধরনের সেবা দেয়া স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রমের অংশ। অথচ অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এসব ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা চার্জ আরোপ করছে বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন। এ বিষয়ে বিকেএমএইএ’র সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, কথা বলা ছাড়া বাকি প্রায় সব ক্ষেত্রেই চার্জ আরোপ করে ব্যাংক।
তিনি বলেন, এমনিতেই উচ্চ সুদ হার বিনিয়োগের জন্য প্রধান অন্তরায় হিসেবে দেখা দিয়েছে। আমানতে সুদের হার কমালেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাংকই ঋণে সুদের হার কমায় নি। বরং এর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সাভর্সি চার্জ আরোপ করছে। ব্যাংকগুলো নামে-বেনামে চার্জ ও ফি নিচ্ছে। এলসি খোলা থেকে শুরু করে মালামাল পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রত্যেক ঘাটে ঘাটে চার্জ দিতে হচ্ছে। ফলে অনেক ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এদিকে বেড়ে যাচ্ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণও।
বিজিএমইএ’র অভিযোগ : বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নির্ধারিত চাজর্রে চেয়ে অধিক চার্জ নিচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছে পোশাক রফতানিকারক সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনের নেতারা গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে সম্প্রতি এক বৈঠকে ব্যাংকগুলোর সাভর্সি চার্জ কমানোর জন্য লিখিতভাবে প্রস্তাব করেন।
বাড়তি চার্জ আরোপ না করার আহ্বান: বাড়তি চার্জ আরোপ না করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান মন্দা আক্রান্ত বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের রফতানিতে এমনিতেই নেতিবাচক ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তার ওপর বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব স্থানীয় বাজারে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক আরোপ করছে বাড়তি চার্জ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি : বিধিবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত অর্থ কাটায় সম্প্রতি কয়েকটি ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকদের কাছ থেকে কেটে নেয়া অতিরিক্ত সব টাকা ফেরত দিতে নিদর্শে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রাহকরা সেবা গ্রহণ না করলেও তাদের অনুমোদন ছাড়া প্রস্তাবিত চাজর্রে অজুহাতে এ ধরনের টাকা কাটা আমানতকারীদের স্বাথর্রে পরিপন্থী। ব্যাংকের এমন অনৈতিক ও অযাচিত চার্জ কাটার ফলে ব্যাংকিং খাতের প্রতি গ্রাহকদের বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রাইম ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহক এবং শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সব ধরনের হিসাব থেকে (সঞ্চয়ী, চলতি ও এসএনডি হিসাব) ‘অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট জেনারেশন চার্জ’ হিসেবে ২০০ টাকা এবং এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাবদ আরও ৩০ টাকা করে মোট ২৩০ টাকা কেটে নিয়েছে। যদিও ব্যাংকটির ওয়েবসাইটে দেয়া তালিকায় এ ধরনের কোনো সেবা সূচক বা এই সেবার বিপরীতে কোনো মাশুলের কথা উলেখ নেই। নিয়ম অনুযায়ী, ষান্মাসিক ভিত্তিতে বছরে দুইবার ব্যাংক তার গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট ফ দেবে, এই ধরনের নিদর্শেনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
এসএমই ঋণে অতিরিক্ত ফি আদায় নিষিদ্ধ : ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগক্তাদের দেয়া ঋণে সুদ বা মুনাফার বাইরে অতিরিক্ত সাভিজ চার্জ আদায় নিষিদ্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোতে পাঠানো এক চিঠিতে এ নিদর্শেনা দেয়া হয়েছে। সেই নিদর্শেনায় বলা হয়েছে, এসএমই খাতে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ডকুমেন্টেশন চার্জ এবং আলস্টেটমেন্ট ফি বাবদ ঋণের বকেয়া স্থিতি ওপর সর্বচ্চো দুই শতাংশ চার্জ ছাড়া কোনো প্রকার সাভর্সি চার্জ ব্যাংকের সিডিউল অব চাজর্সে-এর অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা যাবে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রাম বিভাগের মহাব্যবস্থাপক সুকোমল সিংহ চৌধুরী বলেন, সাভর্সি চার্জ, ম্যানেজমেন্ট ফি, রিস্ক প্রিমিয়ামসহ বিভিন্ন নামে সুদ বা মুনাফার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে কয়েকটি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ঋণ তদারকি কার্যক্রমে এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো চার্জ বা ফি আদায় থেকে বিরত থাকতে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সাভর্সি চার্জ তদারকিতে ২০ পরিদর্শক টিম মাঠে : এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সাভর্সি চার্জ তদারকিতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০ পরিদর্শক টিম। গত সপ্তাহ থেকে এসব টিম রাজধানীর মধ্যকার ব্যাংকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কিছু শাখায় তদন্ত শুরু করেছে। গভর্নর ড. আতিউর রহমানের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পরিদর্শন দলের কর্মকর্তারা আগামী সপ্তাহে বিভাগীয় শহরে পরিদর্শন শুরু করবেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অতিরিক্ত সাভর্সি চার্জ আদায়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিদর্শন শেষে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশিষ্ট ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার : বিভিন্ন সেবার বিপরীতে ব্যাংকগুলোর চার্জ, ফি ও কমিশন যুক্তিসঙ্গতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করে। অতীতের সব সার্কুলারকে একীভূত করে এবং দু-একটি বিষয়ে নতুন নিদর্শেনা দিয়ে ওই মাস্টার সার্কুলার জারি করা হয়। যা পরের বছর ২০১০ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করার নিদর্শেনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবের জন্য কোনো সাভর্সি চার্জ নিতে পারবে না ব্যাংক। বছরে দু’বার বিনা ফিতে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে হবে।
এছাড়া হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ এবং আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সেবার বিপরীতেও চার্জ, ফি ও কমিশনও যৌক্তিকীকরণ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবে ন্যূনতম ব্যালান্স ফি, ইনসিডেন্টাল চার্জ, লেজার ফি, সাভর্সি চার্জ আদায় করতে পারবে না। তবে এসব হিসাবে অ্যাকাউন্ট মেইনটেইন ফি প্রযোজ্য হবে। ষান্মাসিক ভিত্তিতে সঞ্চয়ী হিসাবে ৩০০ টাকা এবং চলতি হিসাবে ৫০০ টাকা ফি আদায় করতে পারবে ব্যাংক। গ্রাহক ষন্মাসিক ও বাৎসরিক ভিত্তিতে বছরে দু’বার বিনা ফিতে ব্যাংক স্টেটমেন্ট (হিসাবের স্থিতি নিশ্চিতকরণ সনদ) নিতে পারবে। তবে দু’বারের বেশি সনদ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারে ব্যাংক ২০০ টাকা চার্জ নিতে পারবে। বিভিন্ন মাসিক সঞ্চয়ী হিসাব বা স্কীম মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়নের ক্ষেত্রে নগদায়ন ফি বা অনুরূপ অন্য কোনো ফি আদায় করা যাবে না। চলতি হিসাব বন্ধের ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা এবং সঞ্চয়ী হিসাব বন্ধের ক্ষেত্রে ২০০ টাকা চার্জ আরোপ করতে পারবে ব্যাংক। ব্যাংকগুলো কাউন্টার ট্রানজেকশন ফি আদায় করতে পারবে না। সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, সাইট এলসি খোলার কমিশন প্রতি ত্রৈমাসিকে সর্বাধিক দশমিক ৪০ শতাংশ, ডেফার্ড এলসি খোলার কমিশন প্রতি ত্রৈমাসিকে সর্বাধিক দশমিক ৫০ শতাংশ, নগদ মার্জিন এলসি খোলার কমিশন প্রতি ত্রৈমাসিকে সর্বাধিক দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার চার্জ প্রতি ত্রৈমাসিকে সর্বাধিক দশমিক ৪০ শতাংশ নির্ধারিত হবে।
এছাড়া এলসি ট্রান্সমিশন, এলসি অ্যামেন্ডমেন্ট, কনফারমেশন, ক্যানসেলেশন, ফরেন করসপন্ডেন্ট চাজর্রে ক্ষেত্রে মেইলিং, কুরিয়ার, টেলেক্স, সুইফট ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যয়ের ভিত্তিতে চার্জ নির্ধারিত হবে। এলসি অ্যাডভাইজিং চার্জ, এলসি অ্যামেন্ডমেন্ট ও এলসি ট্রান্সফার চার্জ সর্বাধিক ৭৫০ টাকা নেয়া যাবে। এলসি অ্যাকসেপ্টটেন্স চার্জ প্রতি ত্রৈমাসিকে সর্বাধিক হার দশমিক ৪০ শতাংশ এবং স্থানীয় কনফারমেশনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক হার দশমিক ২০ শতাংশ নির্ধারিত হবে। ফরেন করেসপন্ডেন্ট চার্জ (স্থানীয় অংশ), ডাটা ম্যাক্স, হ্যান্ডেলিং চার্জ, কপি ডকুমেন্ট এনডোর্সমেন্ট চার্জ, এলসি বাতিল কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ অব্যবহত এলসি চার্জ আদায় করা যাবে না। রফতানি বিল নেগোশিয়েশন কমিশন ও রফতানি বিল কালেকশন কমিশন সর্বাধিক দশমিক ১৫ শতাংশ নির্ধারিত হবে। ব্যাক টু ব্যাক এলসি সার্টিফিকেট চার্জ, সিএন্ডএফ সার্টিফিকেট ইস্যুর চার্জ, রফতানি মূল্য আদায়ের সার্টিফিকেট ইস্যুর চার্জ ৫০০ টাকা বেশি আদায় করা যাবে না। বিও অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে বিও সনদ প্রদানের চার্জ ১০০ টাকার বেশি নেয়া যাবে না। ঋণ নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বো পরিশোধের ক্ষেত্রে বকেয়া ঋণের ২ শতাংশের বেশি বা অনুরূপ ফি হিসাবে আদায় করা যাবে না। গ্রাহকের সুবিধার্থে এই নতুন সিডিউল অব চাজর্সে-এর পূর্ণ তালিকা স্ব স্ব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখাসমূহে দর্শনীয় স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। ঘোষিত বা প্রকাশিত তালিকার বাইরে কোনো চার্জ বা ফি আদায় করতে পারবে না ব্যাংক। ছয় মাস ভিত্তিতে চার্জ, ফি ও কমিশনের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে। কিন্তু ব্যাংকগুলো এসব নিদর্শেনার অধিকাংশই মানছে না।