পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্রাকযোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচন ও পরামর্শক নিয়োগে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ ওঠে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি সৈয়দ আবুল হোসেন ও একই দলের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে। বিশ্বব্যাংকের চাপে দুই আবুল ছাড়া অন্যান্যের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ ঘটনায় পদ্মা সেতুর দূ�র্ভাগ্য হলেও আবুলের ভাগ্য লেখা আছে এসএনসি লাভালিনের সাবেক কর্মকর্তা রমেশ শাহার ডাইরিতে। দুদক কোন দিন এ মামলার সত্যতা প্রমাণ করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন তারা।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ পেতে মন্ত্রীকে কমিশন দেয়ার ঘটনায় এসএনসি লাভালিনকে আর্থিক জরিমানা করেছেন কানাডীয়ান আদালত। অন্য দিকে কানাডার আদালতে গত বছরের ২৫ জুন সোমবার পদ্মা সতু প্রকল্পে দুর্নীতির দায়ে এসএনসি-লাভালিনের সাবেক দুই কর্মকর্তা রমেশ শাহা (৬১) ও মোহাম্মদ ইসমাইল (৪৮) বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়। চলতি বছরের ২৯জুন ওই মামলার শুনানি হয়েছে। একই অপরাধের অপরাধি হয়েও বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমানের অভাবে বিচারের মুখোমুখি করতে পারছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরিশেষে এসব অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। দুদকের মামলায় আসামিদের দোষী প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে এর দায় কে নেবে? কমিশনের কাজ নিয়েও প্রশ্ন ওঠবে বলেও মন্তব্য করছেন অনেকে। দুর্নীতির মামলায় সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীসহ ৭জনকে আসামি করা হয়।
অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে দেশি-বিদেশী প্রায় ৪০জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। আবুলের ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে কেউ মুখ খুলেনি। সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন কানাডার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের নিকট থেকে কমিশন চাওয়াসহ প্রাসঙ্গিক কথাগুলো নোট করেন ওই প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মকর্তা রমেশ শাহা (৬১)। তার ডাইরিতে লেখা তথ্যগুলো সংগ্রহের জন্য বার বার চিঠি দেয় কমিশন। নথিপত্র না পাওয়ায় সম্প্রতি দুদকের সিনিয়র আইনজীবী মো. আনিছুল হক এবং তদন্ত কর্মকর্তা মীর্জা জাহিদুল আলম সে দেশে যান। স্বশরীরে গিয়েও তাদের ফিরে আসতে হয়েছে শূন্য হাতেই। বিশ্বব্যাংকের সাথে চুক্তি হয় ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ২৯০ কোটি ডলারে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার েেদওয়ার কথাছিল। এছাড়াও এডিবি, জাইকা এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থ দেওয়ার কথাও হয়। বিশ্বব্যাংকের করা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২ র্ফেরুয়ারি সৈয়দ আবুল হোসেন নির্দোষ দাবি করে ঘোষণা দেয় দুদক।
দুর্নীতি অভিযোগ দু’টির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে বিশ্বব্যাংক সরকার এবং দুদককে অনুরোধ জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কনসালটেন্ট নিয়োগে উৎকোচ দাবির বিষয়ে অনুসন্ধান করতে ২০১২ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর দুদক সহকারী পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলমকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। অন্যদিকে মূল সেতু নির্মাণে কমিশন দাবির বিষয়ে তথ্যতালাশ করতে গত ২৫শে অক্টোবর দুদক উপ-পরিচালক মীর মোহাম্মদ জয়নুল অবেদীন শিবলীকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়।
পদ্মা সেতু দুর্নীতির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, ওই সময়ের যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে। এ দিকে জেরা করা হয়, মূল্যায়ন কমিটির আইটি বিশেষজ্ঞ জামিলুর রেজা চৌধুরী,পানি বিশেষজ্ঞ ড.আইনুন নিশাত ও বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক সফিউল্লাসহ অন্যান্যের। এ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে গত বছরের ১১ অক্টোবর পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করে বিশ্ব ব্যাংক।