চলনবিলে অবাধে চলছে মা ও পোনা মাছ নিধন

0
270
Print Friendly, PDF & Email

সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও চলনবিল থেকে অবাধে ডিমওয়ালা, মা ও পোনা মাছ ধরা হচ্ছে। স্থানীয় জেলেরা রাতের আঁধারে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন। এতে এ বিল মাছশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলনবিলের পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মাছ নিধনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে নদী, খাল ও বিলে মা-মাছ ডিম ছাড়ে। একসময় এই বিলে প্রচুর মাছ ছিল। কিন্তু প্রতি বর্ষায় অবাধে পোনা ও মা-মাছ নিধনের কারণে এ বিল মাছশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চলনবিলপারের লোকজন জানান, বৃষ্টির পানি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির মা-মাছ চলনবিলে ডিম ছাড়তে আসে। এ বছর বৈশাখ মাস থেকে চলনবিল এলাকায় বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে। সে কারণে প্রচুর মা-মাছও বিলে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় জেলেরা অবাধে এই মা-মাছ শিকার করছে। তাঁরা রাতের বেলা মাছ শিকার করায় বিষয়টি প্রশাসনের নজরে পড়ছে না। রাতভর মাছ ধরে ভোরে তা আনা হচ্ছে আড়তে।
বিল এলাকার কয়েকজন পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী জানান, চলনবিলের পাশের নাটোরের বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়কের মহিষলুটিতে মাছের বড় বাজার বসে। চলনবিলের প্রায় সব মাছ এখানে বিক্রি হয়। পাইকারেরাও এ বাজার থেকে মাছ কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করেন।
গত রোববার চলনবিলের চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়ার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বিলের বিভিন্ন স্থানে জাল ও বাঁশ দিয়ে তৈরি ভেশাল (মাছ ধরার ফাঁদ) দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। এ ছাড়া নিষিদ্ধ বাদাই জাল, বড় জাল ও কই জালসহ বিভিন্ন জাল দিয়ে জেলেরা নৌকায় করে মাছ ধরছেন।
কয়েকজন জেলে জানান, বিলে বোয়াল, শোল, কই, মাগুর, শিং, পুঁটি, ট্যাংরা, টাকি, বাতাসি, বাইনসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে ডিমওয়ালা মাছের চাহিদা বেশি। প্রতি কেজি ডিমওয়ালা ট্যাংরা ৪০০-৫০০ টাকা, শোল ৬০০-৯৫০, পুঁটি ২৫০-৩০০, শিং ও মাগুর ৮০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাটমোহরের চিনাভাতকুর গ্রামের জেলে ফনী হালদার বলেন, ‘পোনা ও ডিমওয়ালা মা-মাছ মারতে আমাদেরও খারাপ লাগে। কিন্তু মাছ না মারলি আমাগের পেটে ভাত জোটে না। সরকার যদি আমাগের জন্যি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করত তালি আমরা মাছ ধরা বাদ দিতেম।’
চাটমোহর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘১৯৫০ সালের মৎস্য সংরক্ষণ আইনে সব ধরনের ডিমওয়ালা মা-মাছ ও ৯ ইঞ্চি পর্যন্ত পোনা মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে বিল এলাকায় মাইকিংসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছি। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কারেন্ট জাল ও বাদাই জাল জব্দ করে ধ্বংস করা হচ্ছে। তবে রাতে কেউ মাছ শিকার করলে আমাদের কিছু করার থাকে না।’

শেয়ার করুন