হাঁসের বাচ্চা ফোটানো আর গাভী পালনে সাফল্য

0
191
Print Friendly, PDF & Email

তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফোটানো, গাভী পালনের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। তবে এজন্য প্রথমেই প্রয়োজন দরিদ্রদের এ ব্যাপারে উত্সাহিত করে ঋণ দেয়া। বিশেষ করে কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঋণ প্রদান কর্মসূচির পাশাপাশি সরকারের পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা, গাঁও-গেরামে।
কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার দামিয়া গ্রামের আবুল হোসেন ও তার স্ত্রী নুরুন নাহারের তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর খামার দেখে যে কেউ এ কাজে আগ্রহী হতে পারেন। সরেজমিনে এ খামারটিতে গিয়ে দেখা হলো মালিক আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের এ এলাকাকে কেউ বলে ভাটি এলাকা, আবার কেউবা বলেন হাওর এলাকা। জানেন, জন্ম আমার অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে। বাবা মারা যাওয়ার পর পৈতৃক ভিটা ছাড়া কিছুই পাইনি। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার দিনগুলো কাটত অত্যন্ত কষ্টে। কোনো বেলা খেয়েছি, কোনো বেলা না খেয়ে থেকেছি। দশ কি পনেরো বছর আগের কথা। তখন পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের এক কর্মী আমাকে বললেন, ঋণ নিন কিছু একটা করুন। সহজেই দারিদ্র্য দূর করতে পারবেন। পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের ঋণ নিয়ে শুরু করলাম ডিম কিনে তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উত্পাদন। দু-চার বছর যেতেই দেখি এটা তো বেশ লাভজনক ব্যবসা। ধীরে ধীরে নিজের পায়ে দাঁড়ালাম। ২০০৪ সালের পর থেকেই আমার ভাগ্য পরিবর্তন হতে লাগল।’
গত বছর কী রকম লাভ করেছিলেন—এ প্রশ্নের উত্তরে আবুল হোসেন জানান, ৩ লাখ ২০ হাজার হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে তা বিক্রি করে আয় হয়েছিল ১১ লাখ টাকা। ডিম কেনা, ঋণের কিস্তি পরিশোধ, কর্মচারীর বেতন-ভাতা ও অন্যসব মিলে খরচ হয়েছিল প্রায় ৬ লাখ টাকা। তাই নিট লাভ থাকল ৫ লাখ টাকা।
সমস্যার কথাও জানালেন আবুল হোসেন। বললেন, আমাদের এ দামিয়া গ্রামে বিদ্যুত্ নেই। যদি থাকত তাহলে হাঁসের বাচ্চা ফোটাতে আরও সহজ হতো। বিদ্যুত্ না থাকলেও নিজে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে নিয়েছি। ডাক প্লেগ আরেকটা সমস্যা। এ রোগ প্রতিরোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সচেতনতা নিয়ে আমরা চিন্তিত। এ রোগ তো আজকের নয়, কেন প্রতিরোধ করতে পারছেন না তারা—তা আমাদের বোধগম্য নয়। এটুকুই বলব, ডাক প্লেগ রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় হাঁসের বাচ্চা সাপ্লাই দেয়ার পরে দেখা যায় একসঙ্গে কয়েকশ’ বাচ্চা মারা গেল। তখন কিন্তু আমার গুডউইলটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আবুল হোসেন আরও জানান, হাঁসের বাচ্চা বিক্রির জন্য বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতে এখন কোনো সমস্যা নেই। কেননা নিজেই একটি পিকআপ ভ্যানও কিনে নিয়েছি। ফার্মে চারজন লোক রেখে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছি।
তিনি জানান, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের ঋণ নিয়ে আজ শুধু তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফোটানো নয়; নিজ পুকুরে মাছ চাষ, সবজি চাষ আর ক্ষেতখামার করেও বছরের পর বছর যা লাভ হয়েছে, তা দিয়ে জায়গাজমিও বাড়িয়েছি।
গাভী পালন যে বাড়তি আয় দিতে পারে, এটা প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের সহকারী রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ বোরহান উদ্দিন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটু দক্ষিণে এগোলেই রাস্তার পাশে তার দুগ্ধ খামার। নাম দিয়েছেন নাহার ডেইরি ফার্ম। বোরহান উদ্দিন জানান, অবসর সময়ে এ খামারটি দেখাশোনা করে বেশ আনন্দ পাই। বাড়তি আয় এখান থেকেই হচ্ছে। বর্তমানে রয়েছে চারটি দুধেল গাভী। প্রতিদিন ৪০ লিটার করে দুধ পাচ্ছি। ৬০ টাকা দরে দুধ বিক্রি করে দৈনিক আয় ২৪০০ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে লাভ থাকে কম করে হলেও ২৫ হাজার টাকা। এটা ক’জনইবা পারে।
তিনি আরও জানান, গাভী পালনের জন্য পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নিয়েছি। সেজন্য গাভী পালনের সুযোগ হয়েছে। ঋণের টাকা যথাসময়ে পূরণও করে দিচ্ছি। ষাঁড়-বাছুর কিছু দিন লালন-পালনের পরে বিক্রি করে দেই। ওদিকে দুধেল গাভীর দুধ দেয়া কমে গেলে তা-ও বিক্রি করি। এই তো ক’দিন আগে দুটি গাভী বিক্রি করে পেলাম ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
বোরহান উদ্দিন জানান, গাভীর দুধ মানেই খাঁটি দুধ। তাই প্রচুর চাহিদা এখানে। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপার থেকেও প্রচুর দুধ আসে এ ময়মনসিংহ শহরে। তবু পূরণ করা যাচ্ছে না দুধের চাহিদা। সে জন্য অসংখ্য মানুষ কৌটার দুধ কিনেত বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থায় ঘরে ঘরে গাভী পালন শুরু হলে খাঁটি দুধের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। তাছাড়া গাভী পালনের মাধ্যমে যে কেউ বাড়তি আয় কিংবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে নিতে পারেন। গুঁড়ো দুধ আমদানি কমলেই বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমে আসবে। কৃষিবিদ বোরহান উদ্দিন কথাপ্রসঙ্গে বললেন, গাভীর খাদ্য ভুসি, খৈল। এসবের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। ভুসির বস্তা হঠাত্ করে ১৫০০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকা হয়ে গেছে।
খৈলের দামও বেড়েছে। কাঁচা ঘাস আগে কিনতে হতো। নিজের জমিতে ঘাসের চাষ করায় এখন আর তা কিনতে হচ্ছে না।

শেয়ার করুন