অবৈধভাবে সাগরে পথে মালয়েশিয়ায় মানুষ পৌঁছে দিতে একটি বিশাল জাহাজ এখন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিনের অদূরে মিয়ানমারের নিকটবর্তী সাগরে অপেক্ষা করছে।
ইতোমধ্যে ওই জাহাজে দফায় দফায় পৌঁছানো হয়েছে প্রায় চারশ’ যাত্রী। আরও আটশ’ যাত্রী জাহাজে পৌঁছালে গন্তব্যে যাত্রা দেবে জাহাজটি।
থাইল্যান্ড থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য নিয়ে আসা এ জাহাজটি মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের উদ্দেশে ওখানে নোঙর করেছে। আর টেকনাফের মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা টার্গেটের যাত্রী জাহাজে পৌঁছাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
গত ১০ দিন ধরে সাগরে অপেক্ষমাণ জাহাজে যাত্রী পৌঁছাতে গিয়ে কক্সবাজার শহর ও টেকনাফ থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আটক হয়েছে প্রায় তিনশ’ যাত্রী। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে ফাঁকি দিয়ে জাহাজে পৌঁছানো হয়েছে চার শতাধিক যাত্রী।
সবশেষ মঙ্গলবার সকালে সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাত্রার চেষ্টাকালে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা এলাকা থেকে কোস্টগার্ড সদস্যরা এক দালালসহ সাতজনকে আটক করেছে। জাদিমুরা এলাকার দালালের বাড়ি ঘেরাও করে তাদের আটক করা হয়।
এতে আটক মালয়েশিয়াগামী ছয়জনের মধ্যে কিশোরগঞ্জের ২, নারায়ণগঞ্জের, কুমিল্লার, মাদারীপুরের ও বরিশালের ১ জন করে রয়েছে। আর এদের দালাল হলো- টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদীমুরা গ্রামের আলী জোহরের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ।
কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লে. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, দালালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আটক ৬ মালয়েশিয়াগামীসহ ৭ জনকে টেকনাফ থানায় সোর্পদ করা হয়েছে।
এর আগে গত ৪ জুলাই ২৩ জন, ৬ জুলাই ২৩, ৮ জুলাই ২২০, ১৪ জুলাই ৯ এবং ১৫ জুলাই ১৪ জনকে আটক করে বিজিবি, র্যাব ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা। এসব ঘটনায় ৬০ দালালকে আসামি করে মামলা হলেও থামছে না মানবপাচার।
পাচারকারী দালালের প্রলোভনে মালয়েশিয়া যাত্রা দেওয়া লোকজন এবং বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, গভীর সাগরে থাইল্যান্ড ভিত্তিক একটি বড় জাহাজ সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে মিয়ানমারের কাছে অবস্থান করছে গত ৩ জুলাই থেকে। জুনের মাঝামাঝি সময়ে এ জাহাজটি থাইল্যান্ড থেকে পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ওখানে পণ্য খালাস করে থাইল্যান্ড ভিত্তিক পাচারকারীরা জাহাজটি মিয়ানমারের উপকূলে এনে কক্সবাজার কেন্দ্রিক দালালদের খবর জানায়। ৩ জুলাই রাত থেকে ট্রলার যোগে ওই জাহাজে যাত্রী পৌঁছে দেওয়া শুরু হয়।
চিহ্নিত দালালরা কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া, মাঝেরঘাট, মহেশখালী উপজেলার ঘড়িভাঙ্গা, সোনাদিয়া, চকরিয়া উপজেলার বদরখালী, মাতামুহুরী, উখিয়ার সোনাপাড়া, ইনানী, মনখালী, টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মাছ ধরার ট্রলার যোগে মালয়েশিয়াগামীদের ওই জাহাজে পৌঁছে দিচ্ছে। এসব কাজে সাড়ে ৩ শতাধিক দালাল ব্যাপক তৎপর হয়ে উঠেছে।
সোমবার রাত পর্যন্ত ওই জাহাজে ৪ শতাধিক যাত্রী অবস্থান নিয়েছে। সূত্রটি জানিয়েছে, ১২শ’ যাত্রী হলে জাহাজটি মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হবে। আর এর শেষ সময় ১৯ জুলাই রাত পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বাংলানিউজের অনুসন্ধানী দল মানবপাচারের মূল পয়েন্ট কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন সরেজমিনে ঘুরে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ সংবাদ প্রকাশের সূত্র ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক তৎপরতা শুরু করলেও পাচারকারী গডফাদাররা থামছে না।