গ্যাসের সমস্যা রোজার আগে থেকেই ছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার প্রথম রোজার দিন বিকেল থেকেই গ্যাস না থাকায় রান্নাঘরে চুলা জ্বলেনি। তাই পরিবারের জন্য ইফতারি তৈরি করতে পারেননি মিরপুর ১১ নম্বর বি ব্লকের বাসিন্দা রোকেয়া বেগম।পাশেই সাড়ে ১১ নম্বর বড় মসজিদ এলাকায় সকাল নয়টায় গ্যাস গিয়ে এসেছে রাত ১১টায়। মাঝখানে টিমটিম করে জ্বললেও সে আগুনে রান্না করা যায়নি। বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে ইফতার করেছেন বেশির ভাগ মানুষ।রোকেয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কখনো কোনো সংবাদপত্রের কাছে নিজেদের সমস্যা নিয়ে কোনো অভিযোগ করিনি। কিন্তু এমন দুর্ভোগের কথা না বলে পারা যায় না। এর প্রতিকার হওয়া উচিত।’রাজধানীর অনেক এলাকাতেই চলছে এ ধরনের গ্যাসজনিত দুর্ভোগ।সূত্রমতে, বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা উন্নত রাখার জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (পিডিবি) বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বেশি হারে গ্যাস দিতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে আবাসিক গ্যাস সরবরাহে। এমনকি সিএনজি স্টেশন ছয় ঘণ্টা বন্ধ রেখেও পরিস্থিতি উন্নত করা যাচ্ছে না।তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নওশাদ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রমজানে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা ভালো রাখার। এ জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাস দিতে হচ্ছে।পুরো রমজানে এ ধরনের আবাসিক গ্যাস সমস্যা থাকবে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে গরম কমে যাবে। গরম কমলে বিদ্যুতের ব্যবহারও কমবে। ফলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে।সূত্র জানায়, রমজানের প্রথম দিন দেশে সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এর আগে ছয় হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন হতো। আগে পিডিবিকে গড়ে প্রায় ৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হতো। এখন দেওয়া হচ্ছে প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট।
জনদুর্ভোগ: তিতাসের জরুরি নিয়ন্ত্রণকক্ষে গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অভিযোগ আসে, মুগদাপাড়ায় গ্যাসের চরম সংকট চলছে। পূর্ব রামপুরা ও বনশ্রী এলাকা থেকে অভিযোগ আসে এর কিছুক্ষণ আগে। নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়, গত দুই দিন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হারে অভিযোগ এসেছে। তাঁরা জবাব দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।তেজতুরী বাজারে কয়েক দিন ধরেই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গ্যাসের চুলা জ্বলছিল না। রমজান শুরু না হতেই গভীর রাতের আগে গ্যাস আসে না। সেখানকার বাসিন্দা আবদুন্ নূর জানান, তাঁর বাসায় গ্যাস না থাকায় নাখালপাড়ায় বড় ভাইয়ের বাসায় ইফতার করতে গিয়ে দেখেন, সেখানেও একই চিত্র।গ্যাসের সমস্যা চলছে বৃহত্তর মিরপুরের অনেক এলাকা এবং তেজগাঁও ও পুরান ঢাকা এলাকায়। পূর্ব রামপুরার গৃহিণী আকলিমা বেগম কেরোসিনের চুলা ব্যবহার করছেন বলে জানালেন। অপর দিকে নাখালপাড়ার বাসিন্দা রহমত উল্লাহ জানালেন, ছাদে কাঠ জ্বালিয়ে তাঁদের পরিবারে রান্না চলছে।
সিএনজি স্টেশনে দীর্ঘ সারি: রমজানের আগে বিকেল পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত সিএনজি স্টেশনগুলো বন্ধ রাখা হতো। এখন বিকেল তিনটা থেকে রাত নয়টা। কিন্তু গতকাল মানিকনগরে একাধিক সিএনজি স্টেশনে পৌনে তিনটার মধ্যেই গাড়ি যাতায়াতের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ, ভেতরের গাড়িগুলোকেও যথাসময়ে গ্যাস দেওয়া যাবে না।মিরপুর দারুসসালামের পূর্বাচল ও যমুনা ফিলিং স্টেশন, এসএস ফিলিং স্টেশন, কল্যাণপুরের এস এ খালেক ফিলিং স্টেশন, রহমান ফিলিং স্টেশন, মোহনা ও ডেনসো ফিলিং স্টেশন, মিরপুর-২-এর কিংসুক সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশন, কাজীপাড়ায় সিডিসিসহ অনেক স্টেশনে চাপ কম থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় প্রায় ২০০ সিএনজি স্টেশন রয়েছে। নির্ধারিত ছয় ঘণ্টার পরও প্রায় ৫০টি ফিলিং স্টেশন অতিরিক্ত তিন-চার ঘণ্টা বন্ধ থাকছে। এটা হচ্ছে চাপ কম থাকা আর লোডশেডিংয়ের কারণে। অথচ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভালো রাখার জন্য গ্যাস সরবরাহ কমানো হয়েছে।