আন্দোলন ও নির্বাচন প্রস্তুতি পাশাপাশি চালাবে বিএনপি

0
106
Print Friendly, PDF & Email

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চালিয়ে যাবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ইতিমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে দলটি।
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল না হলে তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ঈদুল ফিতরের পর আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ের পর বিএনপি নিজেদের ‘অনেক শক্তিশালী’ মনে করছে। করপোরেশনের নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়েছে মনে করলেও এখন পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে বিএনপি।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, তারা মনে করছে, এ বছরের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকার ‘বাধ্য’ হবে। অথবা শেষ পর্যন্ত বড় দুই দলের মধ্যে একটি সমঝোতা হবে। এ বছরের মধ্যে বা আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন হবে—এমনটি ধরে নিয়েই প্রাথমিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপি। যাতে হঠাত্ নির্বাচনের ঘোষণায় কোনো ধরনের অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়।
এ জন্য প্রার্থী যাচাইবাছাই প্রক্রিয়া, তৃণমূলের মতামত নেওয়া শুরু হয়েছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক সাত-আটটি কমিটি শিগগির গঠন করবে বিএনপি। এটি এখন পর্যন্ত প্রক্রিয়াধীন। নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা বা তহবিল কীভাবে সংগ্রহ করা হবে, তা-ও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
ওই সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৫০টির মতো আসনে কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করছে দলটি। বাকি ৫০টি আসনে কিছু সমস্যা আছে। এ সমস্যা কীভাবে সমাধান করা হবে এবং জোটের শরিকদের কয়টি আসন ছাড়া হবে, এসব বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা শুরু হয়েছে। রমজান মাসে তেমন কোনো কর্মসূচি থাকবে না। এ সময় এসব বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।
গত সোমবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিন। ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন করুন। তাহলে সরকার তত্ত্বাবধায়কের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে।’ নির্বাচনে কোথায় কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তা বড় করে না দেখে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য তিনি আহ্বান জানান। ঈদের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও তিনি জানান।
জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে যাবে না। এ দাবিতে ঈদের পর নতুন কর্মসূচি আসবে। আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলবে। নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। প্রার্থী যাচাইবাছাই, প্রচারণার কৌশল নির্ধারণ, সরকারের ব্যর্থতা কীভাবে তুলে ধরা হবে, প্রয়োজনীয় গবেষণা, নির্বাচনী ইশতেহারে কী কী থাকবে, দায়দায়িত্ব বণ্টন, প্রয়োজনীয় কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে বলে তিনি জানান।
আন্দোলন চলবে: বিএনপি মনে করছে, পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে হারের পর আওয়ামী লীগ বুঝেছে জাতীয় নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হবে। এ কারণে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ জয় নিশ্চিত করতে সম্ভব সবকিছুই করবে।
অন্যদিকে পাঁচ সিটিতে জয়ের পর বিএনপি এখন নিজেদের অনেক শক্তিশালী মনে করছে। তারা মনে করছে, জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। তাই তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে কোনো ছাড় দেবে না। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের একটি কৌশল। দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক করে তোলার জন্যই তারা এটি করেছে। এটিকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের একটি ‘ফাঁদ’ হিসেবেই দেখছে বিএনপি। সে ফাঁদে তারা পা দেবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দলটি অনড় থাকবে।
দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল না হলে তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ঈদের পর বড় আকারের আন্দোলন গড়ে তুলবে বিএনপি। আর তফসিল হলে তারা নির্বাচনেই দিকেই ঝুঁকবে। তবে বিএনপি মনে করে, পাঁচ সিটি করপোরেশনে সরকার-সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের পর সরকার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দেবে না।
বিএনপির সূত্র জানায়, ঈদের পর আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে রমজান মাসকে সাংগঠনিক মাস হিসেবে পালন করবে দলটি। এ সময়ের মধ্যে দেশজুড়ে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক অবস্থা আরও ভালো ও অন্তর্কোন্দল নিরসনে কাজ করা হবে। কেন্দ্রীয় নেতাদের তৃণমূলে পাঠানো হবে। পাশাপাশি ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে গণসম্পৃক্ততা বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনসমর্থন হারিয়েছে, এটি পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সুস্পষ্ট হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন এক নয়। আওয়ামী লীগ এখন জেনেশুনে হারতে চাইবে কেন? তাই তারা নিজেদের মতো করে সব কিছু করতে চাইবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে মাহবুবুর রহমান বলেন, পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনই স্বচ্ছ হয়েছে। কিন্তু এটি আওয়ামী লীগের একটি কৌশল। তারা তাদের পরিকল্পনা যৌক্তিক করার জন্য এখানে ইচ্ছা করে ছাড় দিয়েছে। বিএনপি তাদের এই ফাঁদে পা দেবে না।
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ঐতিহাসিকভাবে নির্বাচন কমিশন দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘কোনো স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। যদি ধরেও নিই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, তাহলেও স্থানীয় নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আকাশ-পাতাল তফাত।’ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের শঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশ, র্যাব, ডিসি, ইউএনও, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা—যাঁরা নির্বাচন পরিচালনা করবেন, তাঁরা সবাই থাকবেন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। চাকরি বাঁচানোর জন্যই তাঁরা সরকারের আদেশ মানতে বাধ্য থাকবেন।

শেয়ার করুন