নির্বাচনী রাজনীতিতে একের পর এক পরাজয়। চারদিকে নানা প্রশ্ন। দলের সাধারণ সম্পাদক কোথায়? তিনি কি রাজনৈতিক ছুটিতে আছেন? নানা গুঞ্জনের মধ্যে নেতৃত্বে পরিবর্তনের চিন্তা চলছে আওয়ামী লীগে। রমজানের পরই হতে পারে বিশেষ কাউন্সিল। সে কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বিদায় নিতে হতে পারে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে। নির্বাচনকে সামনে রেখে মহাগুরুত্বপূর্ণ সাধারণ সম্পাদকের পদে আলোচিত হচ্ছে দু’টি নাম- মোহাম্মদ নাসিম ও ওবায়দুল কাদের। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের দু’জনই এখন পুরোদমে সক্রিয় আওয়ামী লীগে।
একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। জরুরি জমানায় আবদুল জলিলের গ্রেপ্তারের পর এ দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। একটি জবানবন্দি ভাগ্য বিপর্যয় ডেকে নিয়ে এসেছিল আবদুল জলিলের জন্য। শেষ পর্যন্ত তিনি আর সাধারণ সম্পাদকের পদে ফিরতে পারেননি। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ভারমুক্ত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। গত বছর ডিসেম্বরে সর্বশেষ কাউন্সিলেও সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন তিনি। যদিও শুরুর দিন থেকেই তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের এন্তার অভিযোগ। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা দেখা পাচ্ছিলেন না তার। এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাও অনেক ক্ষেত্রে তার দেখা পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও সচিবলায়ে তাকে দেখা গেছে খুব কম সময়েই। তবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের দূরত্ব সৃষ্টি হয় বিরোধীদলের সঙ্গে সংলাপকে কেন্দ্র করে। সংলাপের মাধ্যমেই সঙ্কটের সমাধানের পক্ষে ছিলেন তিনি। বিরোধী দলকে চিঠি দেয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বের সাড়া না পাওয়ায় সে চিঠি আর দেয়া হয়নি। চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তার মতভেদ আরও বেড়ে যায়। রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট আর খুলনাতে এখনই নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে শীর্ষ নেতৃত্বের ইচ্ছাতেই এসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর নিজেকে দলীয় কার্যক্রম থেকে একেবারেই গুটিয়ে নেন সৈয়দ আশরাফ। সর্বশেষ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও কোন ভূমিকায় দেখা যায়নি তাকে। অথচ সেখানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশির ভাগেরই অস্থায়ী ঠিকানা হয়ে উঠেছিল গাজীপুর। এই যখন অবস্থা তখন নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবতর্নের চিন্তা জোরেশোরেই চলছে আওয়ামী লীগে।
পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনই ভূমিকা ছিল না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের। তারপরও তিনি ক্লান্ত। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। শোচনীয় পরাজয়ে দলের কেন্দ্র থেকে নিয়ে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের হতাশা গ্রাস করেছে। তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে দলটির দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি সৈয়দ আশরাফ দেশের বাইরে যাচ্ছেন। ১৬ই জুলাই তিনি যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন। স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে কাটাবেন অন্তত দু’ সপ্তাহ।
খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে থেকেই সৈয়দ আশরাফ নির্বিকার। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী হিসেবে তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলীয় কার্যালয়ে, সরকারি বাসভবনে বসেও নগরগুলোর নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা দিতে আপত্তির কিছু ছিল না। চার সিটি করপোরেশনে ভরাডুবির পরও তার টনক নড়েনি। দল সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহর সঙ্গে একদিন টেলিফোনেও কথা বলেননি দলের সাধারণ সম্পাদক। তারপরও দলের শোচনীয় পরাজয়ে তিনি ব্যথিত। মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে এখন লন্ডন যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রবীণ কর্মী বলেন, সৈয়দ আশরাফই প্রথম এবং একমাত্র সাধারণ সম্পাদক তিনি পার্টি কার্যালয়ে সবচেয়ে বেশি অনিয়মিত। কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সরকারি দপ্তরে তাকে দুই তিন মাসেও একদিন পাওয়া যায় না।