আওয়ামী লীগের কাঠগড়ায় এখন দুই এমপি আ ক ম মোজাম্মেল হক ও জাহিদ আহসান রাসেল এবং বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম৷ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উলস্না খানের পরাজয়ের জন্য এই তিন নেতাকে দুষছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা৷ রোববার উত্তরার বস্ন্যাক রোজ হোটেলে বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রাথমিক মূল্যায়ন রিপোর্টে এই চিত্র ফুটে উঠেছে৷ বৈঠকে গাজীপুর নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উলস্না খানসহ কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন৷ একপর্যায়ে অ্যাডভোকেট আজমত উলস্না খান বেশ কিছু সময় একান্তে কথা বলেছেন ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে৷ এ সময় তিনি পরাজয়ের কারণ বিশেস্নষণ করেছেন৷
জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার ও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মনির হোসেন চৌধুরী বৈঠক শুরুর আগেই চলে যান৷ এ হোটেলে বসেই গাজীপুর নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা৷
বৈঠকে বলা হয়েছে, গত সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর স্থানীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখেননি আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি৷ এমন কী চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন কর্মকা-ও হয়নি তার নির্বাচনী এলাকায়৷ বিশেষ করে নির্বাচনী এলাকাভুক্ত কোনাবাড়ি, বাসন ও কাশিমপুরের উন্নয়ন কর্মকা-ে এমপির উদাসীনতার চিত্র দৃশ্যমান থাকায় ভোটাররা নাখোশ হয়েছেন৷
অন্যদিকে ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপড়েন থাকায় প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উলস্না খানের ওপর কিছুটা অসন্তুষ্ট ছিলেন জাহিদ আহসান রাসেল এমপি৷ তিনি নির্বাচনে সক্রিয় থাকলেও তার সমর্থক নেতাকর্মীদের অনেকেই নিষ্ক্রিয় ছিলেন৷ বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচন থেকে সরে গেলেও তার ভূমিকা ছিল সন্দেহজনক৷ তার আত্মীয়স্বজন ও কর্মীদের অনেকেই প্রকাশ্যে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন৷
এই তিন নেতার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দেননি বলে বৈঠকে বলা হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার পর এ বিষয়গুলো তার কাছে উপস্থাপন করার কথাও বৈঠকে জানানো হয়েছে৷ আগামী ১১ জুলাই শেখ হাসিনা ফিরবেন৷
ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন অ্যাডভোকেট আজমত উলস্না খান৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, নির্বাচনী মাঠে কারা বিরোধিতা করেছেন তা অবহিত করা হয়েছে৷ বিশেষ করে নির্বাচন চলাকালে জাহাঙ্গীর নাটকের কারণে তিনি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন বলেও জানিয়েছেন৷ তার ভাষায়, জাহাঙ্গীর আলম তার পক্ষে ছিলেন না৷ জাহাঙ্গীরের লোকজনও নিষ্ক্রিয় ছিল৷
অ্যাডভোকেট আজমত উলস্না খান বলেছেন, ত্রিমুখী লড়াই হলে তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হতেন৷ এ বিষয়টি নেতাদের জানানো হয়েছিল৷ তার যুক্তি, জাহাঙ্গীর আলম সব সময়ই হেফাজতে ইসলাম ও বিএনপিকে লালন করেছেন৷ তাই জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচনে থাকলে এক লাখ ভোট পেতেন৷ এর বেশিরভাগই হেফাজতে ইসলাম ও বিএনপির ভোট হতো৷ এই হিসাবে তার (আজমত) নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকত৷
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, নিজের পরাজয়ের গ্গ্নানি অন্যের ওপর চাপানো ঠিক না৷ নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে লাভ নেই৷ আমার লোক কাজ করেনি এমন একজনের নাম বলুক৷ পারবেন না৷ তিনি (আজমত) তো কেন্দ্র কমিটির আহ্বায়কের নামই জানেন না৷ ভোট পাবেন কীভাবে৷ আমি ছাড় না দিলে তিনি ৪০ হাজার ভোটও পেতেন না৷ তিনি তো নিজ কেন্দ্র ও ওয়ার্ডে কম ভোট পেয়েছেন৷
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বৈঠকের আলোচনা বিষয় তার জানা নেই৷ তবে তার বিরুদ্ধে উন্নয়নমূলক কর্মকা- না করার অভিযোগ ভিত্তিহীন তথ্য৷ তিনি বলেছেন, উন্নয়নের কারণে কোনাবাড়ি, বাসন ও কাশিমপুরে ভোট না পেয়ে থাকলে টঙ্গীতে কেন ভোট পেলেন না আজমত উলস্না খান৷ আসলে বাস্তবতা ভিন্ন৷ চক্রান্তের কাছে হেরেছে আওয়ামী লীগ৷
জাহিদ আহসান রাসেল বলেছেন, বৈঠকের কথা তিনি জানেন না৷ তবে অ্যাডভোকেট আজমত উলস্না খানের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক চমত্কার৷ তাই অকারণে কারোর ওপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই৷ তার নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার কার্যক্রম চালিয়েছে৷ তিনি দিন-রাত প্রচার চালিয়েছেন৷
তিন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছাড়াও রোববারের বৈঠকে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজনীতির প্রভাব এবং ধর্মীয় অপপ্রচারের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী গাজীপুর নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন৷ বিশেষ করে নির্বাচনের দিনেও উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক স্থানীয় নেতাকর্মীর নিষ্ক্রিয় থাকার বিষয়টি বেশ লক্ষণীয়৷ প্রগতিশীল ঘরানার নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে না আসাটাও পরাজয়ের কারণ৷
এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির দোটানা অবস্থান আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বেশ ভুগিয়েছে৷ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী এজেন্ট না থাকার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে৷ প্রতিটি ওয়ার্ডে দলের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী সংকট তৈরি করেছে৷ কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয়ের চেষ্টা হলেও তা কার্যকর হয়নি৷ যে কারণে ঢাকার কর্মীরা সক্রিয় থাকলেও স্থানীয় কর্মীরা ছিলেন নিষ্ক্রিয়৷