দিন বদলের অঙ্গীকার পূরণের ব্যর্থতায় ভরাডুবি

0
154
Print Friendly, PDF & Email

বিশিষ্ট আইনজীবী গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ২০০৮ সালে দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এলেও তারা প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। বরং জনগণের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। সাড়ে চার বছরে রাষ্ট্র পরিচালনায় নানা কারণে জনগণ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট। তাই সর্বশেষ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। দেশবাসী পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে। এই ফলাফল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

ড. কামাল তার মতিঝিলের চেম্বারে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সাড়ে চার বছরে সরকারের দেশ পরিচালনার ব্যর্থতার নানা দিক তুলে ধরেন। গণফোরাম সভাপতি বলেন, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, শেয়ারবাজার, হলমার্ক ও ডেসটিনি কেলেঙ্কারির পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পোশাকশিল্পের কোনো নিরাপত্তা দিতে পারেনি। সর্বশেষ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির সঙ্গে জড়িতদের যথাযথভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে পারেনি। সরকার হতাহত শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিতেও ব্যর্থ হয়েছে। সামগ্রিক বিষয় প্রভাব পড়েছে সিটি নির্বাচনে। এর আগে চার সিটি নির্বাচনেও সরকারকে দেশবাসী একই বার্তা দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. কামাল বলেন, তিনি সত্যিটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তিনি বাস্তবতা বুঝতে পেরেছেন। গাজীপুর থেকে সরকারকে শিক্ষা নিতে হবে। কিন্তু সরকার সাড়ে চার বছরে নিজেদের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে পারেনি। বাকি পাঁচ মাস সময়ে কতটুকু পারবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কিছু মন্ত্রী ও নেতাদের অতিকথনেও ভোটের রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন তিনি। প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, দেশে আজ আইনের শাসন নেই। বিচারবিভাগ স্বাধীন নয়। পদে পদে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। এসব নিয়ে সরকার কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দলীয়ভাবে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। মানুষ বিচার বিভাগের ওপর কোনো আস্থা রাখতে পারছে না। নির্যাতিত কলেজ ছাত্র লিমনের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন হলেও সরকার তারই বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। নিহত শ্রমিক নেতা আমিনুলের বিষয়ে তারা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিদিনই গুম, খুনসহ নানা অপরাধ বেড়েই চলছে। মানুষ যে আশা নিয়ে এ সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল তা তারা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশবাসী আজ নাখোশ। তাই তারা পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নিয়ে কোনো আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেই আশঙ্কা তো আছেই। তারপরও আমার বিশ্বাস, সংলাপ সমঝোতার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য পন্থায় সবার অংশহগ্রহণে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে দলীয় কোনো সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হবে না, তা ৯০ ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের জরিপে তা এসেছে। এ বাস্তবতাও সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে।

শেয়ার করুন