মিসরে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির সমর্থকেরা বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে এবং বড় ধরনের বিক্ষোভ-সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজপথে আছে মুরসির বিরোধীরাও। উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতিতে আরেক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিরোধী নেতা মোহাম্মদ এল বারাদির নিয়োগ নিয়ে। মুরসির উৎখাতকে সমর্থনকারী একটি পক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, এল বারাদিকে প্রধানমন্ত্রী করা হলে তারা তা মানবে না এবং নতুন সরকারকে ত্যাগ করবে।
কয়েক দিনের বিক্ষোভের মুখে গত বুধবার মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় দেশটির সেনাবাহিনী। পরদিন বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালতের প্রধান বিচারপতি আদলি মানসুর।
এরপর গত শনিবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উদারপন্থী ও বামপন্থী দলগুলোর জোটের নেতা মোহাম্মদ এল বারাদিকে প্রধানমন্ত্রী করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট মানসুরের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এল বারাদি।
কিন্তু গতকাল ইসলামপন্থী সালাফিরা জানিয়ে দেয়, তাদের দল আল নূর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এল বারাদির নিয়োগ মেনে নেবে না। গত পার্লামেন্ট নির্বাচনে এক-চতুর্থাংশ ভোট পাওয়া এই দল মুরসির অপসারণে সমর্থন দিয়েছিল।
সালাফিদের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা নাদের বক্কর বলেন, ‘আমাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। দুটি কারণে আমরা এল বারাদিকে প্রত্যাখ্যান করছি। প্রথমত, অর্থনীতি ভালো বোঝেন এমন একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে আমরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাই। দ্বিতীয়ত, আমরা চাই রাজপথে ভেদাভেদের অবসান হোক।’
নাদের বক্কর আরও বলেন, ‘আমরা জাতীয় মতৈক্যের আলোচনায় যোগ দিতে পারি না (এল বারাদিকে প্রধানমন্ত্রী করা হলে) এবং আমরা এমন একজন মানুষকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসাতে পারি না, যিনি মুরসির অন্যতম কট্টর বিরোধী ছিলেন।’
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাবেক প্রধান এল বারাদির রাজনৈতিক জোটও সেনাবাহিনীর হাতে প্রেসিডেন্ট মুরসির ক্ষমতাচ্যুতিকে সমর্থন করেছে। তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা গতকাল স্বীকার করেছেন, এল বারাদিকে প্রধানমন্ত্রী করা হলে আল নূর বেঁকে বসতে পারে এবং তখন তারা মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে যোগ দিতে পারে।
এ অবস্থায় গতকাল সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এল বারাদির নিয়োগ নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে মাত্র।
অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আদলি মানসুরের উপদেষ্টা আহমেদ আল-মুসলিমানি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, প্রেসিডেন্ট মানসুরের সঙ্গে শনিবার বৈঠক করেছেন এল বারাদি। অন্যান্য দলের নেতারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে এল বারাদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তাঁর সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষে গত কয়েক দিনে অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছে। গতকাল তেমন কোনো সংঘাতের ঘটনা না ঘটলেও রাজপথে ছিল দুই পক্ষই। মুরসিবিরোধীরা যথারীতি ব্যাপক সংখ্যায় অবস্থান করছে বিখ্যাত তাহরির স্কয়ারে। আর মুরসির দলের লোকজন রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় অবস্থান নিয়ে আরও বড়সড় বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মস্কোর প্রতিক্রিয়া: মিসরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ায় দেশটি গৃহযুদ্ধের কবলে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গতকাল তিনি বলেছেন, ‘এখন সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে…এবং মিসরও একই দিকে ধাবিত হচ্ছে।’ এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি।