নির্বাচনের ফল ঘোষণা নিয়ে উৎকণ্ঠা জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া দুই নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন। শনিবার রাতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল ঘোষণা চলাকালে তিনি কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন তিনি।
একইভাবে গত ১৫ জুন রাতে চার সিটির নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সময় খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। কমিশনার আবু হাফিজ ও বিএনপির নেতা বরকত উল্লা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বরকত উল্লা প্রথম আলোকে বলেন, গাজীপুরের নির্বাচনের খবর নিতে বিএনপির চেয়ারপারসন ব্যক্তিগতভাবে কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজের সঙ্গে কথা বলেছেন। রাত ১০টার দিকে তখনো অনেক কেন্দ্রে ফল ঘোষণায় বিলম্ব হচ্ছিল। চেয়ারপারসন সে বিষয়ে কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি দ্রুত ফল ঘোষণার অনুরোধ জানান। কমিশনার তাঁকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
১৫ জুনের কথোপকথনের বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল রোববার নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনের খবরাখবর নিতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আমার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন। তিনি নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। ফল ঘোষণায় বিলম্ব হচ্ছিল কি না, হলে কারণ কী সেটাও জানতে চেয়েছেন। আমি তাঁকে আশ্বস্ত করেছি।’
কমিশনের সঙ্গে কথোপকথনে খালেদা জিয়া নির্বাচন-প্রক্রিয়া ও ভোট গ্রহণ নিয়ে সন্তোষ বা অসন্তোষ জানিয়েছেন কি না জানতে চাইলে বরকত উল্লা বলেন, তিনি যখন কথা বলেছিলেন, তখনো ভোট গণনা চলছিল। তাই সন্তোষ-অসন্তোষ জানানোর বিষয় ছিল না। তিনি নির্বাচনের সার্বিক খোঁজখবর নিয়েছিলেন।
বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট এবং সর্বশেষ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করেন। কমিশন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করার ফলেই এই পাঁচ সিটিতে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা সহজে জয় পেয়েছেন বলেও বিএনপি মনে করে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে নমনীয় নীতি অনুসরণ করার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। একাধিক বিএনপি নেতা বলেছেন, তাঁরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার কথা ভাবছেন।
জানতে চাইলে বিএপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিশনকে আমরা কখনোই গ্রহণ করিনি, এটা ঠিক না। তাদের আস্থায় বা অনাস্থায় নেওয়ার প্রশ্নটিও বড় নয়। বরং কমিশনকে বিচার করতে হবে তার কাজ দিয়ে। সেই মানদণ্ডে যে পাঁচটি নির্বাচন হয়েছে, সেটা তারা সুষ্ঠুভাবে করেছে। সে জন্য তারা প্রশংসার দাবিদার।’
রাষ্ট্রপতির মনোনীত অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ এবং কমিশনার আবু হাফিজ, আবদুল মোবারক, জাবেদ আলী ও মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ নিয়োগ পান। এই নিয়োগের পর থেকেই বিএনপি বর্তমান কমিশনের প্রতি প্রকাশ্যে তাদের অনাস্থা জানিয়ে আসছিল। তাদের অভিযোগ, সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় এই নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিএনপি গত বছরের নভেম্বরে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপ বর্জন করে। গত ২৯ নভেম্বর সংলাপ বর্জনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া চিঠি কমিশনে পৌঁছে দিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘কমিশনের মনোভাব দেখে মনে হয়, তারাও নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে পারছে না। সে জন্য বিএনপি সংলাপ বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবির সঙ্গে এই কমিশন পুনর্গঠনও বিএনপির অন্যতম দাবি ছিল।
বরকত উল্লা বলেন, সিটি নির্বাচনে বিএনপি থেকে যখনই কোনো অভিযোগ করা হয়েছে, কমিশন সঙ্গে সঙ্গে তা আমলে নিয়েছে। বিএনপি কমিশনের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো বিতর্কে যাবে না। কারণ কমিশন বিতর্কের চেয়ে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা বিএনপির কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।