এইচআইভি ঝুঁকিতে রাজশাহী অঞ্চল

0
166
Print Friendly, PDF & Email

রাজশাহী অঞ্চল এইচআইভি এইডস ঝুঁকিতে রয়েছে। ভারতে এইচআইভি এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের এ অঞ্চলেও এই ব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউএনএইডস’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০১২ সালে এইচআইভি আক্রান্ত ৩৩৮ জন এবং এইডস আক্রান্ত ১০৩ জন রোগী চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১৩ জন পুরুষ, ১১৮ জন নারী। অন্যান্য (হিজড়া) ৭ জন। ইউএন এইডস’র মতে, ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাবিশ্বে ২ হাজার ৮৭১ জন এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছে। এইডস রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ২০১ জন। আর এ রোগের কারণে মারা গেছে ৩৯০ জন। সংস্থাটি জানাচ্ছে, রাজধানী ঢাকায় প্রায় ২ কোটি লোকের বাস হলেও সেখানে এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন ১২৮ জন। এর বিপরীতে রাজশাহীতে ৭ লাখ লোকের বাস। এখানে এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত সনাক্ত করা হয়েছে ৬ জন। ঢাকার আনুপাতিক হিসেবে রাজশাহীতে এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা উদ্বেগজনক।-মানব জমিন
ইউএনএইডস’র সোস্যাল মোবিলাইজেশন এন্ড পার্টনারশিপ অ্যাডভাইজর ও এইচআইভি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মুনির আহমেদ বলেছেন, ভারতে এইচআইভি এইডস ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের দেশের বহু ট্রাক ড্রাইভার ও হিজড়াসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের ভারতে যাতায়াত রয়েছে। এ কারণে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভারতের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এইচআইভি ভাইরাসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। রাজশাহীতে হিজড়াদের উন্নয়নে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা লাইট হাউজ-এর ‘মধুমিতা’ প্রকল্প। লাইট হাউজের ড্রপ ইন সেন্টারের ম্যানেজার মো. সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, রাজশাহীতে ৫শ’র বেশি হিজড়া রয়েছে। এদের মধ্যে গত ৩ বছরে মধুমিতার পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ১শ’ জনের বেশি হিজড়ার এইচআইভি পরীক্ষা করানো হয়েছে। এতে ৩ জনের দেহে এইচআইভি-এইডসের জীবাণু পাওয়া গেছে। এইচআইভি-এইডস আক্রান্তদের ঢাকায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি হিজড়াদের নিয়ে তারা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে সপ্তাহে একদিন হিজড়াদের নিয়ে কাউন্সিলিং প্রোগ্রাম করা হয়। এতে এইচআইভি-এইডস বিশেষজ্ঞরা তাদের নানা ধরনের তথ্য, চিকিৎসার খোঁজ খবর ও প্রশিক্ষণ দিয়ে হিজড়াদের সচেতন করে তোলার কাজটি করে যাচ্ছেন। মো. সালাহউদ্দিন আরও জানান, ভারতে হিজড়াদের অনেক বড় সংগঠন রয়েছে। সেখানেও হিজড়াদের মধ্যে এইচআইভি-এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও কম নয়। হিজড়াদের মধ্যে মূলত সমকামিতার প্রবণতা বেশি। নানা কাজে রাজশাহীর অনেক হিজড়াই ভারতে যান। এইচআইভি এইডস আক্রান্ত সঙ্গীর সঙ্গে সমকামিতায় জড়ালে অন্যজনের শরীরেও তা ছড়িয়ে পড়ে। তাই রাজশাহী এইচআইভি এইডস’র জন্য মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে নিরাপদ যৌন সম্পর্কের জন্য কনডম ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি। অন্যান্য বিষয়েও হিজড়াদের সচেতন করা হচ্ছে। তবে রাজশাহীতে বর্তমানে এইচআইভি এইডস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, রোগীদের আমরা ঢাকায় আশার আলো সোসাইটিতে পাঠিয়ে দিই। সেখানে তারা নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে এখন বেশ ভাল আছেন। এদিকে রাজশাহীতে যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসচেতন করে তুলতে কাজ করে ‘হেলথ এন্ড এডুকেশন ফর লেসপ্রিভিলেজড পিপলস (হেলপ)’। সংস্থাটির অফিস কো-অর্ডিনেটর মামুনুর রশিদ জানান, রাজশাহীতে প্রায় ৫শ’ যৌনকর্মী রয়েছেন। এরমধ্যে ৩শ’ জনকে তাদের এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। এসব যৌনকর্মীদের এইচআইভি-এইডস সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এই যৌনকর্মীদের দেহে এইচআইভি-এইডসের জীবাণু রয়েছে কিনা তা পরীক্ষারও ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি মাসে ৪-৫ জন যৌনকর্মীর রক্ত পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু এখনও তারা পজেটিভ পাননি বলে জানান। তবে রাজশাহীতে এইচআইভি-এইডসের রোগীর সংখ্যা ৬ থেকে ৮ জন বলে জানান তিনি। আক্রান্ত সবাই হিজড়া। এইচআইভি-এইডস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সাধারণ মেলামেশা (শারীরিক বা যৌন সম্পর্ক নয়) করলে তারাও একই রোগে আক্রান্ত হবে। এইচআইভি এইডস রোগের কোন চিকিৎসা নেই। শুধু সমকামী বা যৌনকর্মীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ককারীদেরই এ রোগ হতে পারে। এইচআইভি পরীক্ষার ফলাফল পজেটিভ হলে কিছুদিনের মধ্যে মৃত্যু অনিবার্য, এ রোগ আশপাশের লোকজনকেও আক্রান্ত করবে, এইচআইভি-এইডস আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র, বিছানা, খাবার-দাবার আলাদাসহ তাকে পরিবার বা সমাজ থেকে একঘরে করে দিতে হবে- এসব ধ্যান-ধারণা একেবারেই ভুল। সমাজের এ ধরনের কুসংস্কারের কারণে অনেক আক্রান্ত ব্যক্তিকেই অবহেলায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এইচআইভি এইডস বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ সামাজিকভাবে রক্ষণশীল হওয়ায় এদেশে এইচআইভি সংক্রমণের প্রবণতা অনেক কম। এখন বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্তের হার শূন্য দশমিক এক শতাংশ। দেশে যে ক’জন এইচআইভি পজেটিভ ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে, তাদের ৬০ শতাংশ বিদেশে থাকাকালে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

শেয়ার করুন