ওয়াশিংটন টাইমসে লেখা নিবন্ধের দায় অস্বীকার করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গত ৩০ জানুয়ারি লেখা ওই নিবন্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছিলেন বিএনপি প্রধান। এ নিয়ে তখন আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করলেও অনেকটা যেন মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা।
কোনো সমালোচনার জবাবেই তখন রা করেন নি ‘আপসহীন’ খেতাবধারী খালেদা।
প্রকাশিত নিবন্ধের প্রতিবাদ না করে বরং বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দেশ ও জাতিকে মহাবিপদ থেকে উদ্ধারে তার ওই নিবন্ধ মোক্ষম দাওয়াই হিসেবে কাজ করবে। আর তার দলের নেতারা তো তখন এই নিবন্ধকে ক্ষমতাপ্রাপ্তির সিঁড়ি বলেই ধরে নিয়েছিলেন।
প্রয়োজনে এমন নিবন্ধ খালেদা জিয়া আরো লিখবেন বলেও বেশ জোর গলায় জানিয়েছিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শমসের মোবিন চৌধুরী।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) সুবিধা বাতিলের পর এখন এক ধাক্কায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অবস্থান।
এখন খালেদা জিয়া বলেছেন, এ প্রবন্ধ আমার নয়। আমার নামে অন্য কেউ ছাপিয়ে থাকতে পারে।
নবম সংসদের চলমান ১৮তম অধিবেশনে শনিবার খালেদা জিয়া এ নিবন্ধের দায় অস্বীকার করার সময়ে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিবন্ধটির অনুলিপি উঁচিয়ে দেখালে খালেদা জিয়া বলেন, এ চিঠি আমি লিখিনি।
তাহলে প্রশ্ন হলো-ওয়াশিংটন টাইমসে লেখা ওই নিবন্ধ কার? খালেদা জিয়ার নামে যদি অন্য কেউ ওই নিবন্ধ ছাপিয়ে থাকেন তাহলে তখন কেন প্রতিবাদ করলেন না ‘আপসহীন’ খেতাবের দাবিদার এই শীর্ষ নেত্রী? এখন কেন ভোল পাল্টে সব অস্বীকার করছেন?
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ অবশ্য খালেদা জিয়াকে অনেকটা ব্যাকফুটেই ঠেলে দিয়েছে। শনিবার সংসদে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর তিনি বলেছেন, এ নিবন্ধ খালেদা জিয়াই লিখেছেন। তার নিবন্ধের সঙ্গে সংসদে দেওয়া বক্তব্যেরও মিল রয়েছে হুবহু।
বস্তুত ওই নিবন্ধে বাংলাদেশে মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন খালেদা জিয়া। তুলে ধরেছিলেন পদ্মাসেতু দুর্নীতির খুঁটিনাটি। বলেছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবিচারের গল্প।
এছাড়া ৠাবের হাতে লাগাতার মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হত্যা, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা।
আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন ও গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য প্রভাব খাটানোর অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি।
তার এসব বক্তব্যের রেশ বেশ বেজেছে শনিবার সংসদে দেওয়া বক্তব্যে। জবাবে এ বিষয়টিই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া বিরোধী দলীয় নেতার শনিবারের বক্তব্যকে বেশ গোছালো উপস্থাপনা আখ্যা দিয়েছেন সংসদ নেতা। বলেছেন, একটি টিম গঠন করে এ বক্তব্য লেখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ওই বক্তব্য যারা শুনেছেন তারাও কিন্তু একমত প্রধানমন্ত্রীর এমন দাবির সঙ্গে।
তাহলে এই দক্ষ লোকগুলো কারা? যারা খালেদা জিয়াকে এমন গোছালো একটি বক্তব্য লিখে দিলেন বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কোথায় থাকেন তারা?
খালেদা জিয়াই বা ক্ষমতায় গেলে বিরোধী দলীয় নেতার এমন স্পিরিট হারিয়ে ফেলেন কি করে সে আলোচনাও চলছে সর্বমহলে।
সব মিলিয়ে জিএসপি স্থগিতের দায়ে এখন বিরোধী দলকেই দুষছে সরকার পক্ষ। আমজনতা অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সব বক্তব্যের সঙ্গে একমত না হলেও বিরোধী দলীয় নেতা এতো দিন কেন নিবন্ধের দায় অস্বীকার করেন নি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ঠিকই।