জিয়া খানের আত্মহত্যার জন্য যখন সবাই দায়ী করছেন তাঁর প্রেমিক সুরজ পাঞ্চোলিকে, ঠিক তখন সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিলেন সুরজের বাবা আদিত্যের একদা প্রেমিকা বলিউডের অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত।
জিয়ার মৃত্যুর জন্য কোনো ব্যক্তিকে নয়, বিষণ্নতাকেই দায়ী করেছেন কঙ্গনা। এ ছাড়া, অতীতে সুরজের বাবা আদিত্য পাঞ্চোলির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল বলে স্বীকার করলেও এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই বলে জানিয়েছেন কঙ্গনা।
একটা সময় বলিউডের অভিনেতা আদিত্য পাঞ্চোলির সঙ্গে কঙ্গনার প্রেমের খবরে শোরগোল উঠেছিল বলিউডে। স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে কঙ্গনার সঙ্গে থিতু হওয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন আদিত্য। পরে অবশ্য তাঁদের সম্পর্ক টেকেনি। আদিত্যর বিরুদ্ধে প্রতারণার পাশাপাশি তাঁর গায়ে হাত তোলার অভিযোগও তুলেছিলেন কঙ্গনা।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আদিত্যর সঙ্গে সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে কঙ্গনা বলেন, ‘এখন আমাদের মধ্যে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। হ্যাঁ, একটা সময় আমি আদিত্য পাঞ্চোলিকে খুব ভালোভাবে জানতাম। কিন্তু এখন আর আমাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। আমরা একে-অন্যের সঙ্গে কথাও বলি না।’ এক খবরে এমনটিই জানিয়েছে পিটিআই।
পশ্চিম মুম্বাইয়ের জুহু বিচসংলগ্ন নিজ বাসায় ৩ জুন রাতে গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন বলিউডের উঠতি অভিনেত্রী জিয়া খান। ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশার পাশাপাশি প্রেমিক সুরজের কাছ থেকে প্রতারিত হওয়ার পর জিয়া কঠিন এ পথ বেছে নেন। সুইসাইড নোটেও নিজের মৃত্যুর জন্য প্রেমিক সুরজকে দায়ী করে গেছেন জিয়া। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ভারতীয় পেনাল কোডের ৩০৬ ধারায় গ্রেপ্তারও করা হয়েছে সুরজকে।
জিয়ার আত্মহত্যা সম্পর্কে মতামত জানতে চাইলে কঙ্গনা বলেন, ‘বিষণ্নতা থেকেই আত্মহত্যা করেছেন জিয়া খান। বিষণ্নতা থেকে যখন কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, তখন কী কারণে তিনি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা আমি অপ্রাসঙ্গিক বলেই মনে করি। এটি এমন একটি রোগ, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর একজন মানুষের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা ঘটনাকে দায়ী করা মোটেও যুক্তিযুক্ত হতে পারে না।’
কঙ্গনা সুরজের কোনো দোষ খুঁজে না পেলেও জিয়া খানের আত্মহত্যার জন্য সবাই সুরজকেই দায়ী করছেন। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও ফোনে সুরজের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে জিয়ার। এমনকি জীবনের শেষ চিঠিতে প্রেমিক সুরজের বিষয়ে নানা গুরুতর অভিযোগ করে গেছেন তিনি। সেগুলোর মধ্যে ধর্ষণ ও গর্ভপাতের মতো বিষয়ও আছে। জিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও বয়সে ২০ বছরের বড় এক নারীর সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন সুরজ। পাঞ্চোলি পরিবারে গয়না সরবরাহ করতেন ওই নারী। সুরজের অনেক অত্যাচার মুখ বুজে সইলেও প্রেমিকের কাছ থেকে প্রতারণার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি জিয়া। মাত্র ২৫ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন তিনি। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনায় কেবল ব্যক্তি জিয়ারই মৃত্যু হয়নি, একটি সম্ভাবনারও অকালমৃত্যু ঘটেছে।
এমনকি জিয়ার আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি সুরজের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন মুম্বাই সেশন কোর্ট। সুরজকে ১১ জুলাই পর্যন্ত কারাগারে বন্দী রাখার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই আদেশ দেওয়ার সময় বিচারক বলেন, ‘সুরজের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র এবং অন্যান্য কাগজপত্র থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, তিনি ক্রমাগতভাবে জিয়া খানের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছেন। বিশেষ করে গর্ভপাতে বাধ্য করানোয় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন জিয়া। সুরজের কাছ থেকে দিনের পর দিন মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতিত হওয়ার কারণেই আত্মহত্যার মতো কঠিন পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন জিয়া।’