আমরা অনেকে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে কতগুলো সাধারণ ভুল করে থাকি। অনেক আগে থেকে দেখে আসছি এই সাধারণ ভুলগুলো।
দীর্ঘদিন ধরে যারা নামাজ পড়েন তাদেরও অনেকে অবলীলায় এ ভুল করে থাকেন। ভুল করতে করতে এমন অবস্থা হয়েছে যে এখন এ ভুলগুলোই তাদের কাছে নিয়মে পরিণত হয়েছে।
যদিও এগুলো শোধরানো সংশ্লিষ্ট ঈমামের দায়িত্ব। এই ভুলগুলো প্রতিটি সরাসরি আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নতের খেলাফ।
এর আগে ৮ ও ২৩ মার্চ এবং ১১ এপ্রিল এ ব্যাপারে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি প্রকাশিত হয়। এটি পঞ্চম কিস্তি।
দৃশ্য-৯
অজ্ঞতার কারণে আমরা অনেকে মসজিদে নিজের নামাজ শেষ হলে অবলীলায় অন্যজনের নামাজের সামনে দিয়ে হেঁটে চলি। এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যে দেখে বা না দেখে, খেয়ালে বা বেখেয়ালে নামাজের সামনে দিয়ে হাঁটে সে শয়তান। আল্লাহ’র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বাধা দিতে বলেছেন। সে বাধা দেওয়ার ভাষা এতো কঠোর যে ন্যূনতম ঈমান থাকলে নামাজের সামনে দিয়ে হাঁটার মতো ধৃষ্টতা কেউ দেখাতে পারবে না।
হযরত আবু সাইয়িদ আল-খুদরি (র.) হতে বর্ণিত, আল্লাহ’র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজরত কারো সামনে দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে যথাসাধ্য বাধা দিতে বলেছেন। (দাউদ শরিফ, হাদিস নম্বর-৬৯৭)।
আল্লাহ্ রহমানুর রহিম, তাই তিনি এতোদিন এই অনিয়মের কারণে আমাদের পাকড়াও করেন নি। সেই শোকর গুজার আমরা করি এবং তওবা করি যে নামাজের সামনে দিয়ে আমরা আর হাঁটবো না। আল্লাহ্ তওবা কবুলকারী। আমীন।
দৃশ্য-১০
মসজিদের আর একটি সাধারণ চিত্র, জামাত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রায় সবাই নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে সুন্নত নামাজের নিয়ত করে ফেলি। এটা আল্লাহ’র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পছন্দ করেন নি। একবার আল্লাহ’র মসজিদে থাকা অবস্থায় এক লোক একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সব নামাজ আদায় করলো, আল্লাহ্র হাবিব বললেন, ‘‘সে ফরজ নামাজের সঙ্গে অন্য নামাজের পার্থক্য করলো না’’।
হযরত আবু বকর ইবন শায়বা (রঃ)..হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন ফরজ নামাজ পরে, তখন তার একটু সামনে এগিয়ে বা পেছনে হেঁটে অথবা সে তার ডানে বা বামে সরে নফল নামাজ পড়তে কি অপারগ? (ইবন মাজাহ হাদিস নম্বর-১৪২৭)।
আসুন আমরা এখন থেকে জামাত শেষে একটু ডানে বামে অথবা সামনে পেছনে গিয়ে বাকি নামাজ শেষ করি। মহান আল্লাহ্ আমাদের সে তৌফিক দান করুন। আমীন।
দৃশ্য-১১
যে যতো অভিজাত সে ততো দামি পাঞ্জাবি কোর্তা, পাজামা পড়ে আসে। শীতকাল হলে তো কথাই নেই, দামি শাল, জ্যাকেট আরও কতো ধরনের পোশাক। যতো অভিজাত ততো জমকালো পোশাক। এই পোশাকের বিরুদ্ধতা আলোচ্য বিষয় নয়। তবে পোশাকের জাঁকজমক যে নামাজে ব্যাঘাত ঘটায় তা আমরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আলোচনাতে পাই।
হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি ডোরা বিশিষ্ট চাদর পরে নামাজ পড়ছিলেন, হঠাৎ তাঁর দৃষ্টি ওই ডোরার প্রতি আকৃষ্ট হলো। নামাজ শেষে ওই চাদরটি ঘৃণিত রূপে খুলে ফেললেন ও বললেন, এ চাদরটি আবু জাহমকে ফেরত দাও এবং এর বদলে তার এক রংয়ের মোটা পশমি চাদরটি নিয়ে আস। এ ডোরাগুলো নামাজে আমার পূর্ণ ধ্যান ও মগ্নতার প্রতিবন্ধক হচ্ছিল।
নামাজের মধ্যে আমার দৃষ্টি ওই ডোরাগুলোর ওপর পতিত হয়, তাই আমার আশঙ্কা হয়, চাদরটি এভাবে আমাকে নামাজের মগ্নতা হতে বিরত না করে ফেলে। (বোখারি শরিফ,খণ্ড-১, হাদিস নম্বর-২৪৮)।
নামাজে পোশাকের চাকচিক্য যেন আমাদের মনঃসংযোগে ব্যাঘাত না ঘটায় সে ব্যাপারে আমরা সচেতন থাকবো। কারণ নামাজ একাগ্রতার বিষয়। নামাজ চাকচিক্য নয় সাধারণের শিক্ষা দেয়, অহমিকা নয় বিনয়ের শিক্ষা দেয়।