পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়েছেন আশিয়ান সিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুল ইসলামসহসহ আটজন।
সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) সদস্যকে মারধর, হত্যা চেষ্টা এবং তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তাদের নামে মামলা হয়েছিলো।
মারধরের শিকার হওয়া ডিজিএফআই সদস্যের দায়ের করা ওই মামলায় বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ গত সোমবার তাদের জামিন দেন।
আসামিদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সাবেক বিচারপতি মনসুরুল হক চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট রাজী উদ্দিন সারোয়ার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রোনা নাহরীন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোনা নাহরীন বলেন, ওই দিন নজরুল ইসলাম নামে কোনো ব্যক্তির নাম তালিকাভুক্ত ছিলো না। এই নামে কারো জামিন হয়েছে কি না বলতে পারছি না।
তবে নজরুল ইসলামসহ আশিয়ান সিটির পক্ষের আইনজীবী রাজী উদ্দিন সারোয়ার বলেন, আবেদনকারীদের চার সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। এরপর বিচারিক আদালতে জামিননামা দাখিল করতে হবে।
গত ১৮ জুন আশিয়ান সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলামসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় এ মামলা (মামলা নম্বর-২২(৬)১৩) দায়ের করা হয়। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ডিজিএফআই সদস্য করপোরাল আবু তাহের গুলশান থানায় এ মামলা করেন।
ওইদিন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সোমবার সন্ধ্যায় ডিজিএফআই সদস্য আবু তাহের ও সাইফুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করার সময়ে গুলশান নর্থ এভিনিউ এর ৯১ নম্বর সড়কের দক্ষিণ পার্শ্ব থেকে করপোরাল আবু তাহের ও সাইফুল ইসলামকে আশিয়ান সিটি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও এমডি সাইফুল ইসলামের নির্দেশে মোশাররফ মেম্বার, বদি, সেলিম হাওলাদার, আজমত, বাচ্চু হাওলাদার, জাকির হোসেন, আনছার সদস্য ফারুক, আনছার সদস্য শাহীন, আনছার সদস্য রাজ্জাক, আনছার সদস্য নুর আলম বাধা দেয়।
এ সময় ডিজিএফআই সদস্যরা তাদের পরিচয় দেওয়ার পর তাদের চেয়ারম্যান ও এমডির নির্দেশে গুলশান নর্থ এভিনিউ এর ৪০/২ ইউনিকন প্লাজায় আশিয়ান সিটি অফিসের কনফারেন্স রুমে জোর করে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে মারধর করে।
এজাহারে কর্পোরাল আবু তাহের আরো উল্লেখ করেন, আশিয়ান সিটির অফিসে তাদের আটকে রাখার সময় তারা প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের পরিচয়পত্র দেখালে আশিয়ান সিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও এমডি সাইফুল ইসলামের নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা তাদের মারধর করে। এসময় আনছার সদস্য শাহীন তার হাতে থাকা রাইফেলের বাট দিয়ে দুই জনকে হত্যার উদ্দেশ্যে আবু তাহেরের বাম কান, কোমরসহ দেহের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে মারাত্মক আহত করে। এসময় আশিয়ানের সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র, লোহার রড, হকিস্টিক ব্যবহার করে। সে সময় তাদের দু’জনেরই মোবাইল ফোন ও ডিজিএফআইর পরিচয়পত্র কেড়ে নেয় আশিয়ান সিটির কর্মচারীরা।
রাতে খরব পেয়ে গুলশান থানা পুলিশের একটি দল ইউনিকন প্লাজায় আশিয়ান সিটি অফিস থেকে তাদের উদ্ধার করে।
মঙ্গলবার সকালে আহত ডিজিএফআই সদস্য আবু তাদের নিরাপত্তা পরিদর্শক আব্দুল আজিজ খানের মাধ্যমে গুলশান থানায় লিখিত এজাহারটি পাঠান।
গুলশান থানার ডিউটি অফিসার জাভেদ মাসুদ লিখিত এজাহারটি পেয়ে ৩৪২,৩৫৩,৩৩২,৩৩৩,৩০৭,৩৮৯/৩৪ ও ১০৯ ধারায় মামলাটি এফআইআরভুক্ত করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে এসআই আব্দুল বারিককে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পর পুলিশ আশিয়ান সিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও এমডি সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতারে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয়।