গ্রামীণ ব্যাংকের কাঠামো পরিবর্তনের ইচ্ছা নেই: অর্থমন্ত্রী

0
130
Print Friendly, PDF & Email

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের কাঠামো পরিবর্তনে সরকারের কোনো ইচ্ছা নেই। আজ বুধবার জাতীয় সংসদে বিএনপির জ্যেষ্ঠ সদস্য মওদুদ আহমদের গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে দেওয়া বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর বাসসের।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৮ সালের বন্যায় গ্রামীণ ব্যাংক আর্থিক সংকটে পড়লে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এই ব্যাংককে ৪০০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছিল। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের ক্ষুদ্রঋণ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম কো-চেয়ারম্যান ছিলেন। অপর কো-চেয়ারম্যান ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। তিনি বলেন, তখন শেখ হাসিনার সরকারই জাতিসংঘে ক্ষুদ্রঋণ রেজুলেশন উত্থাপন করে।
অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, সরকার কর্তৃক অনুমোদন দেওয়া ও পরবর্তী সময়ে এর কার্যক্রম সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ বিবরণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ পাসের মধ্য দিয়ে সরকারের ৬০ শতাংশ ও গ্রামীণ ব্যাংক গ্রাহকদের ৪০ শতাংশ মালিকানা নিয়ে ব্যাংক হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। ২০০২ সালে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ পরিবর্তন করে ৭৫ ভাগ শেয়ার নারী গ্রাহকদের ও সরকারের শেয়ার ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে আইনটি এ রকমই রয়েছে। এই আইন পরিবর্তনে সরকারের কোনো ইচ্ছা নেই।
অর্থমন্ত্রী জানান, গ্রামীণ ব্যাংক আইন অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের বয়সসীমা ৬০ বছর পর্যন্ত নির্ধারিত আছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যকাল শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ১৯৯১ সালে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় তাঁকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিয়মানুযায়ী এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারকে জানানো হয়নি। ২০০৯ সালে গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়ে গঠিত রিভিউ কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, ড. ইউনূস বেআইনিভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে রয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টেও একই কথা বলা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে তখন ড. ইউনূসকে পদত্যাগ করতে বলা হলেও তিনি পদত্যাগ না করে আদালতে যান। পরে আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি পদত্যাগ করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ড. ইউনূস-পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তিনি থাকাকালে ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের আকার ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপের ফলে এর কাঠামো ও সার্বিক কার্যক্রমে ব্যাপক গতিশীলতা এসেছে। তবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেভাবে গড়ে তুলেছিলেন, সেটা সেভাবেই রয়েছে। সরকার এর কাঠামোর কোনো পরিবর্তন করেনি।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ড. ইউনূস পদত্যাগের পর সামাজিক বিনিয়োগ বিষয়ে ৫৪টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থায়নে পরে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্যারান্টি নিয়ে বিদেশি ঋণে তিনি এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এর মধ্যে গ্রামীণফোন অন্যতম। এ থেকে ড. ইউনূস এ পর্যন্ত কয়েক হাজার কোটি টাকা ‘ডিভিডেন্ট’ পেয়েছেন। অথচ এ টাকা গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রাহকদের পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এক টাকাও তাঁরা পায়নি।
ব্যাংকের একজন পরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই লভ্যাংশ যদি গ্রাহকদের দেওয়া হতো, তাহলে বাংলাদেশে দারিদ্র্য থাকত না। তিনি বলেন, এ বিষয়গুলোর তদন্ত চলছে।
অর্থমন্ত্রী গ্রামীণ কমিশনের রিপোর্ট এবং এর সুপারিশ সম্পর্কে আলোচনার জন্য ডাকা সেমিনারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যোগ না দেয়ার বিষয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সেমিনারে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ না নিয়ে তাঁর সংবাদ সম্মেলন করা ঠিক হয়নি।
এর আগে অধিবেশনের শুরুতে বিএনপির মওদুদ আহমদ পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে গ্রামীণ ব্যাংককে ১৯ ভাগে বিভক্ত না করা, ৫১ শতাংশ শেয়ার সরকারের নামে না নেওয়া, সর্বোপরি এ ব্যাংকের ৮৪ লাখ নারী গ্রহীতার স্বার্থ সংরক্ষণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ ব্যাংকের কাঠামো পরিবর্তন, শেয়ার পরিবর্তন করলে এর অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। তাঁর দল যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে গ্রামীণ ব্যাংককে আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হবে।

শেয়ার করুন