খালেদা জিয়ার জন্ম ও বংশপরিচয় নিয়ে ‘অশোভন’ বক্তব্যের জবাবে জাতীয় সংসদে আরও আক্রমণাত্মক ভূমিকা নেবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। রাজপথের আন্দোলনের চেয়ে দলটি এখন সংসদের ভেতরে সরকারকে শক্তভাবে মোকাবিলার দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে।
পাশাপাশি গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও সর্বশক্তি নিয়োগ করতে চায় বিএনপি। রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন এবং সর্বশেষ কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফলের ধারাবাহিকতা গাজীপুরেও ধরে রাখতে চায় বিএনপি। সে লক্ষ্যে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করে নির্বাচনী কর্মকৌশল ঠিক করার কাজ চলছে। ভোটারদের মনোযোগ কাড়তে নবনির্বাচিত চার সিটি করপোরেশনের মেয়রদের গাজীপুরে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নানের পক্ষে প্রচারণায় নামানোর চিন্তা রয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে আমরা সব সামর্থ্য নিয়ে ভোটারদের কাছে যাব। আশা করি, চার সিটি নির্বাচনের মতো গাজীপুরেও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবেন।’
বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, ১৭ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা সফর কর্মসূচি ছিল। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে এ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাজীপুরের নেতা আ স ম হান্নান শাহকে নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে দলের আরেকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি করার কথা রয়েছে।
কঠোর জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি: বিরোধী দলের সংসদীয় দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সরকারদলীয় সাংসদ অপু উকিল জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া, তাঁর মা ও পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে তাঁরা চরম ‘কুৎসাপূর্ণ’ ও ‘অশালীন’ মনে করেন। এতে বিএনপির ভেতরে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একই দিন সকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে বিরোধীদলীয় নেতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর প্রায় একই ধরনের বক্তব্য বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আহত করেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সরকারি দলের সাংসদদের এসব বক্তব্যের ‘কঠোর’ জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির সাংসদেরা।
অবশ্য ‘অশোভন’ বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে দলের তিন নারী সাংসদকে বিএনপির চেয়ারপারসন নির্দেশ দিয়েছেন বলে গতকাল সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এ খবর সঠিক নয় বলে ওই তিন সাংসদের মধ্যে দুজন রেহানা আক্তার ও সৈয়দ আসিফা আশরাফী প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, চলতি অধিবেশনের পরবর্তী কার্যদিবসে তাঁরা সরকারি দলকে ‘ভদ্র ভাষায়’ উপযুক্ত জবাব দেবেন।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরকারি দলের সাংসদ অপু উকিল পাকিস্তানি লেখকের ইন্দো-পাকিস্তান ওয়ার অব ১৯৬৫ বইয়ের বরাত দিয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার মা লক্ষ্মী রানী মারমা দার্জিলিংয়ে চা-বাগানের মালিক উইলসনের ‘চাকরানি’ ছিলেন। ওই দিন সকালে বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, ‘যিনি বোতল খেয়ে ঘুমিয়ে, ঘুম থেকেই ওঠেন দুপুর ১২টার পর…।’
রেহানা আক্তার ও আসিফা আশরাফী দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও তাঁর পরিবার সম্পর্কে নোংরা ও কুৎসিত কথাগুলো বলানো হয়েছে। যে কারণে একই দিন প্রধানমন্ত্রীও একই ধরনের ভাষায় কথা বলেছেন।
আসিফা আশরাফী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন জানি সরকারি দলের সাংসদেরা বিরোধী দলের তথ্যভিত্তিক সমালোচনার জবাব না দিয়ে সেক্সুয়াল, ইভ টিজিং, নিম্নমানের ব্যক্তিগত কিছু বিষয়ে খুব উৎসাহী। অপু উকিল যা বলেছেন, এরপর তো আর কিছু থাকে না। কবিতার ওই “…” গালি জায়েজ হয়ে যায়।’
অবশ্য এর আগে সংসদে বিএনপির নারী সাংসদেরাও আক্রমণাত্মক ও ‘অশালীন’ বক্তব্য দিয়েছেন। কোনো কোনো বক্তব্য কার্যপ্রণালি বিধি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।