ইউনূসের পক্ষে বিএনপির প্রেসনোট

0
165
Print Friendly, PDF & Email

 সরকার গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংসের চূড়ান্ত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে বিএনপি। সরকার গঠিত গ্রামীণ ব্যাংক তদন্ত কমিশন গ্রামীণ ব্যাংকের আইন কাঠামো পরিবর্তনের সুপারিশের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে দলটি।
শুক্রবার বিএনপির তরফ  থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারি ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত আছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জনকারী এ প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করার জন্য বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে উঠেপড়ে লেগেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর এই সরকার প্রতিহিংসার খড়গ সর্বদা ঝুলিয়ে রেখেছে। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের সফলতা এবং এর দক্ষতার মূল কারিগর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অপমান করাই ছিল যেন এই সরকারের প্রধান এজেন্ডা। সেই ধারাবাহিকতায় অন্যায়ভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করার পরও সরকারের জিঘাংসা মিটছে না। এখন আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত নোবেল বিজয়ী গ্রামীণ ব্যাংক নামক এই প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করার চূড়ান্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত গ্রামীণ ব্যাংক তদন্ত কমিশন গ্রামীণ ব্যাংকের আইন কাঠামো পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে।  গ্রামীণ ব্যাংককে চিরতরে নিঃশেষ করার চক্রান্তের এই সর্বনাশা সুপারিশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচিছ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ভিন্নমাত্রার, ভিন্ন আঙ্গিকের একটি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে একটি যুগান্তকারী মডেল হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। বর্তমানে এই ব্যাংক ৮৪ লাখ সদস্যদের মধ্যে এর কার্যক্রম পরিচালিত করছে। এই বিপুল সংখ্যক গরিব মানুষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রামীণ ব্যাংক এক অসাধারণ কর্মকুশলতা ও দক্ষতার দ্বারা আজ এ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। মির্জা আলমগীর বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক স¤পর্কিত তদন্ত কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গরিব মানুষের মালিকানা গায়ের জোরে কেড়ে নেয়া হবে।  দরিদ্র মানুষের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি রুদ্ধ করে  হত দরিদ্র অবস্থায় তাদের ঠেলে দেয়া হবে।
যে অনন্য আইন কাঠামোর মধ্য দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা লাভ করেছে, সেই আইন কাঠামোকে পরিবর্তন করে গ্রামীণ ব্যাংককে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আদলে ১৯টি বা ততোধিক ক্ষুদ্র গ্রামীণ ব্যাংকে পরিণত করা অথবা প্রায়-প্রাইভেট ব্যাংকে পরিণত করার যে সুপারিশ তদন্ত কমিশন করেছে তাতে সরকার ‘নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ করা’র নীতিই অনুসরণ করছেন। এতে নিজ দেশ, দেশের বরেণ্য ব্যক্তি এবং বিশ্বব্যাপী সর্বজন প্রশংসিত দেশীয় প্রতিষ্ঠানকেই অমর্যাদা করা হয়েছে।
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব  গ্রামীণ ব্যাংক তদন্ত কমিশন কর্তৃক ব্যাংকের মালিকানা শতকরা ৫১ শতাংশের বেশী সরকারের মালিকানায় রাখার সুপারিশের প্রস্তাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক  নামক যে খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানটির ৯৭ শতাংশ মালিক মহিলা, সেই ব্যাংকের আইন কাঠামো পরিবর্তন করে সরকার নিজের হাতে পরিচালনা করার যে নীলনক্শা এঁকেছেন তা বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ ব্যাংকের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে পড়বে । মির্জা আলমগীর বলেন, দরিদ্র নারী-পুরুষের নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পথকে বন্ধ করে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই  গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংসের ধারাবাহিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সরকারকে অবিলম্বে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করে সমগ্র বিশ্বের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র মানুষের প্রত্যাশা ও প্রেরণার প্রতিষ্ঠান যা দেশকে গৌরবান্বিত করেছে সেই গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার সকল অশুভ পরিকল্পনা থেকে সরে আসার জোরালো আহবান জানান।

শেয়ার করুন