“রাজা যায় রাজা আসে। ভোট না দিলি রাজা আসপি কী করি। এই দেশে থাকি। ভোট তো দিতিই হবে। ভোট দিতি দিতিই তো বুড়ো হলাম”- কথাগুলো বলছিলেন অশীতিপর সাবিত্রী মিস্ত্রি।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের শেষপ্রান্তে গল্লামারীর ভিতরকার একটা গ্রাম থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে নগরীর বেনী বাবু রোডের ভোট কেন্দ্রে পৌঁছেন তিনি।
শনিবার সকাল ৯টায় ছেলের বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে এই পথ পাড়ি দিতে চার ঘন্টারও বেশি সময় লেগেছে বলে জানান সাবিত্রী।
বছর তিনেক আগেও নগরীর বেনী বাবু রোডের একটা ছাপড়া দোকানের পাশে রাতে ঘুমাতেন তিনি, সারাদিন ঘুরে ফিরে গান গেয়ে শোনাতেন মানুষকে। পরে ছোটছেলে কালীপদ মিস্ত্রী তাকে জোর করে নিজের কাছে নিয়ে যান।
বিকাল ৪টার পর সাবিত্রী মিস্ত্রির সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিলো, তখন ভোট দেয়ার পর খুলনা প্রেসক্লাবের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসে শুকনো পারাটা চিবুচ্ছিলেন তিনি, হাতে ধরা একটা আধপাকা কলা।
এত কষ্ট করে কেন ভোট দিতে এলেন- এই প্রশ্নে সাবিত্রীর ঝটপট উত্তর- “দুনিয়ায় লাভ নাই। লাভের গুঁড়ে বালি। ভোট দিয়ে আমার আর কী লাভ? যারা ভোটে দাঁড়ায় লাভ তো তাগের।”
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শহরের মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ও বিজিবির টহল।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শহরের মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ও বিজিবির টহল।
তারপরও ভোট দেন কেন- জানতে চাইলে ‘রাজা’ নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথাগুলো বলেন তিনি।
পলিথিনে মোড়ানো জাতীয় পরিচয়পত্র খুলে দেখা গেল সেখানে তার জন্মতারিখ ১ নভেম্বর, ১৯২৭। পিতা মৃত আশ্বিনী মণ্ডল, মা মৃত তুলা রাণী মণ্ডল।
স্বামীর খোঁজ জানতে চাইলে বললেন, “সে তো মরছে মুজিবের ভোটের দুই বছর আগে(১৯৬৮)।”
অন্য ছেলেমেয়ের খবর জানতে চাইলে বলেন, বড় ছেলে ধ্রুব মিস্ত্রি ভারতে থাকে। মেয়েও স্বামীর বাড়িতে।
কথা বলতে বলতেই উঠার জন্য তাড়া দিলেন সাবিত্রী।
“অনেক পথ যাতি হবে। শালার ভোটের জন্যি গাড়িও বন্ধ,” বলতে বলতেই হাঁটা ধরলেন তিনি।
আর হাঁটতে হাঁটতেই গেয়ে উঠলেন, “আমার পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী/একদিন ভাবি নাই মনে/পাখির মায়ায় পড়ে কতো ও তার আমার মতো শোক/ ও তার জলভরা দুই চোখ।”