সংসদে বিল পাস, বিএনপির ওয়াকআউট

0
177
Print Friendly, PDF & Email

ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপ বা ইন্টারনেটের যেকোনো মাধ্যমের অপরাধ-সংশ্লিষ্ট আলাপ-আলোচনা এবং এ-সম্পর্কিত স্থির ও ভিডিওচিত্র আদালতে আমলযোগ্য হবে। এই বিধান রেখে আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) বিল ২০১৩ পাস হয়েছে।
বিলটি পাসের প্রতিবাদে বিরোধী দল বিএনপি জোটের সদস্যরা ওয়াকআউট করেন। তাঁরা বলেছেন, সন্ত্রাস দমনে নয়, বিরোধী দলকে দমনে বিলটি পাস করা হচ্ছে। তবে এক মিনিট পর তাঁরা আবার সংসদে ফিরে আসেন। বিলে সন্ত্রাসের সংজ্ঞা আরও বিস্তৃত ও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
বিলটি পাসের আগে বিএনপির সাংসদ মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সন্ত্রাস দমন নয়, বিরোধী দলকে দমনে এ নিকৃষ্ট আইন পাস হচ্ছে। এটি ইতিহাসে কালো আইন বলে চিহ্নিত হবে। এ আইনে পুলিশের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এতে আইনের অপব্যবহার হবে। আমরা এর প্রতিবাদে ওয়াকআউট করছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলের ওপর দেওয়া বিরোধী দলের সদস্যদের জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়।
বিলে কী আছে
বিলের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সন্ত্রাসী ব্যক্তি, সত্তা বা সংগঠনের ফেসবুক, স্কাইপ, টুইটার বা ইন্টারনেটের যেকোনো মাধ্যমের অপরাধ-সংশ্লিষ্ট আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তা অথবা অপরাধ-সংশ্লিষ্ট স্থির ও ভিডিওচিত্র অপরাধের আলামত হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আদালতে উপস্থাপন করতে পারবে। এ বিষয়ে সাক্ষ্য আইনে যা-ই থাকুক না কেন, মামলার স্বার্থে তা আদালতের গ্রহণযোগ্য হবে।
৪০ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা তাত্ক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত করে মামলা রুজু করে তদন্তকাজ শুরু করতে পারবেন।
২৩ ধারায় বলা আছে, যেকোনো মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত যেকোনো ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত ব্যক্তির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য রেকর্ড করার সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি লিখিতভাবে বিবৃতি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাঁকে তা লিপিবদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া যাবে।
২০ ধারার সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ১৮ ধারা অনুযায়ী কোনো সংগঠন নিষিদ্ধ হলে সরকার সেই সংগঠনের কার্যালয় বন্ধ করে দিতে পারবে। জব্দ করতে পারবে তাদের ব্যাংক হিসাব। সংগঠনের সদস্যদের দেশত্যাগে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষে বা সমর্থনে কোনো ধরনের বিবৃতি, প্রচারণা, প্রকাশনা বা বক্তৃতা দেওয়া যাবে না। তাদের আয় ও ব্যয়ের সব উত্স সরকার প্রকাশ করতে পারবে এবং অবৈধভাবে অর্জিত প্রমাণিত হলে সরকার তা বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। ১৮ ধারা অনুযায়ী সরকার যুক্তিসংগত কারণের ভিত্তিতে যেকোনো সংগঠনকে সন্ত্রাসী কাজে জড়িত থাকার দায়ে নিষিদ্ধ করতে পারবে।
৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা সংগঠন বৈধ বা অবৈধ উত্স হতে স্বেচ্ছায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, যেকোনো অভিপ্রায়ে অর্থ বা সম্পত্তি সরবরাহ করলে সেই সম্পত্তি বা অর্থ সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহূত হলে বা সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা সত্তার কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহূত হলে, তা সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে সেই ব্যক্তির সর্বোচ্চ ২০ বছর এবং কমপক্ষে চার বছরের কারাদণ্ড হবে। একই সঙ্গে অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দামের দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা যাবে।
একই আইনে যদি কোনো সত্তা বা সংগঠন অপরাধী সাব্যস্ত হয়, সেই সত্তার বিরুদ্ধে অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থের তিনগুণ পরিমাণ অথবা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। সত্তার প্রধান চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী বা যে নামেই অবহিত হোন না কেন, তিনি সর্বোচ্চ ২০ বছর এবং সর্বনিম্ন চার বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
১১ ধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীন কোনো ব্যক্তি বা সত্তা অপরাধ করার চেষ্টা চালালে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের জন্য ওই ব্যক্তি বা সত্তার প্রধান সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

শেয়ার করুন