প্রস্তাবিত ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে নিউজপ্রিন্টের ওপর বিদ্যমান ৩ শতাংশ আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে নোয়াব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে নিউজপ্রিন্টের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, বাংলাদেশের সংবাদপত্রশিল্প যখন নানামুখী সংকটের সম্মুখীন, তখন ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে নিউজপ্রিন্টের ওপর বিদ্যমান ৩ শতাংশ আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মুদ্রণশিল্পের জন্য ব্যবহূত প্লেটের আমদানি শুল্ক ৯ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।’
নোয়াব জানিয়েছে, ৩ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে ভ্যাট, কর ও বিমা যুক্ত হয়ে বর্তমানে প্রতি টন নিউজপ্রিন্টের আমদানিতে ২৩ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। প্রস্তাবিত ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের প্রস্তাব কার্যকর হলে এই শুল্কের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৭ থেকে ৫৮ শতাংশ, যাতে সার্বিকভাবে প্রকাশনা ব্যয় ২৮ শতাংশ বাড়বে। ইতিমধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি করা নিউজপ্রিন্টের আমদানি-মূল্যও বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিককালে মুদ্রণ, পরিবহনসহ সব খাতেই সংবাদপত্রের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সংবাদপত্রসেবীদের জন্য গঠিত ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ ঘোষিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেতন-ভাতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। এ অবস্থায় কোনো সংবাদপত্রশিল্পের পক্ষেই নিউজপ্রিন্টের বর্ধিত আমদানি-ব্যয় নির্বাহ করে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।
নোয়াব বলে, ‘আমাদের ভাবতে বিস্ময় লাগে, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহের চলাচল সুনিশ্চিত ও সংরক্ষণে অঙ্গীকারবদ্ধ” সরকার সংবাদপত্রের বিকাশের অন্তরায় সৃষ্টিকারী এমন পদক্ষেপ নিতে পারে। সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলে সংবাদপত্রের অপরিহার্য কাঁচামাল নিউজপ্রিন্টের ওপর অস্বাভাবিক আমদানি শুল্ক চাপিয়ে দেওয়া সরকারের স্ববিরোধী নীতি বলেই আমরা মনে করি।’
নোয়াবের সদস্যরা বলেন, এ ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশি নিউজপ্রিন্ট রক্ষার যে যুক্তি দেখিয়েছেন, তার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। অর্থমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, দেশে ৬৭টি কাগজশিল্প চালু থাকলেও সংবাদপত্রে ব্যবহূত রোল আকারের নিউজপ্রিন্ট উৎপাদন করে মাত্র দু-তিনটি কাগজশিল্প। তদুপরি এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান যে নিম্নমানের নিউজপ্রিন্ট উৎপাদন করে, তা পাঠকের পড়ার উপযোগী নয়। এমনকি তাদের পক্ষে ব্যবহারযোগ্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ নিউজপ্রিন্ট সরবরাহ করাও সম্ভব নয়। দেশি কাগজশিল্পগুলো প্রায়ই বন্ধ থাকলেও সংবাদপত্র প্রতিদিনই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে হয়।
যেখানে দেশি কাগজশিল্প প্রয়োজনীয় ও মানসম্মত নিউজপ্রিন্ট সরবরাহ করতে অক্ষম, সেখানে সেই শিল্প বাঁচানোর নামে আমদানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কী যুক্তি থাকতে পারে—এমন প্রশ্ন রেখে নোয়াব বলেছে, দেশি নিউজপ্রিন্ট যেমন গুণ-মান বজায় রাখতে পারছে না, তেমনি সংবাদপত্রের চাহিদা পূরণেও অপারগ।
নোয়াবের সদস্যরা মনে করেন, দেশে উন্নত মানের নিউজপ্রিন্ট উৎপাদিত হলে বিদেশি নিউজপ্রিন্ট আমদানির প্রয়োজনই হতো না। দেশি কাগজশিল্প চাহিদা পূরণ করতে পারছে না বলেই নিরুপায় হয়ে বিদেশি নিউজপ্রিন্টের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। তাই যত দিন দেশি কাগজশিল্প উন্নত মানের এবং পাঠকের রুচি ও চাহিদামাফিক নিউজপ্রিন্ট উৎপাদন করতে না পারছে, তত দিন নিউজপ্রিন্টের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়ানো কোনোভাবেই সমীচীন হবে না।