বিশ্ব মা দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে এ দিবসটি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রসুই ঘরের গণ্ডি পেরিয়ে মায়েরাও ছুটছেন করপোরেট ওয়ার্ল্ডে। করছেন চাকরি। অন্যদিকে বাড়িতে বাচ্চাকে একা রেখে অফিসে গেলে বেশির ভাগ মা একটা অজানা অপরাধবোধে ভোগেন। একা থাকতে থাকতেবাচ্চার মনেও বাসা বাঁধে অভিমান। কি করে ম্যানেজ করবেন এ সমস্যা তা নিয়ে রইল কয়েকটি জরুরি টিপস-
প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় ফাইজাকে ‘টা-টা’ বলতে গেলে কাশফার নিজেরই কান্না পায়। কতইবা আর বয়স ফাইজার? সবে ৫ পেরিয়ে ৬-এ পড়েছে। এখন স্কুল ছুটি, সামার ভ্যাকেশন চলছে। কাজের বুয়াও আজ এক সপ্তাহ হলো বাড়িতে গেছে। সারাটা দিন ছোট্ট ফ্ল্যাটে একা একা বন্দী হয়ে থাকবে মেয়েটা। কাশফার বাড়ি ফিরতে ফিরতে তো প্রায় সন্ধ্যা ৭টা। তার স্বামী সাইদের তো বাড়ি ফিরতে আরও রাত হয়। সাইদ যখন বাড়ি ফেরে ফাইজা তখন গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। শুধু মেয়েকে সঙ্গ দিতে না পারার কষ্ট নয়। সারা দিন অফিসের কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করাও কাশফার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফাইজা ঠিক সময়ে খেয়ে নিয়েছে তো? হঠাৎ কোনো ফেরিওয়ালাকে দরজা খুলে দিল নাকি? হোমওয়ার্ক শেষ না করে নিশ্চয়ই ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি দেখে চলেছে? যতক্ষণ না বাড়ি ফিরে মেয়েকে সুস্থ-স্বাভাবিক দেখছে, এরকম হাজারো অ্যাংজাইটি সর্বক্ষণ ঘিরে থাকে কাশফাকে।
এ গল্পের সঙ্গে কি আপনার গল্পটার বেশ মিল পাওয়া যাচ্ছে। যাবেই না বা কেন? ওয়ার্কিং মাদার বাড়িতে বাচ্চাকে একা রেখে যান। তাই তাদের টেনশনের মাত্রা অন্যদের থেকে বরাবরই একটু বেশি। ফলে মানসিক শান্তির অবস্থা দফারফা। এরকম নানা সমস্যা সমাধানের জন্য রইল কয়েকটি জরুরি টিপস।
নিজের জন্য করণীয় : প্রথমেই বলে রাখা ভালো, সন্তানকে বাড়িতে রেখে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো অপরাধবোধে ভুগবেন না। এ কথা সত্যি, ক্যারিয়ারের জন্য আপনাকে দিনের অনেকটা সময় অফিসকে দিতে হচ্ছে, কারণ সন্তান এবং ক্যারিয়ারের সমান গুরুত্ব রয়েছে আপনার জীবনে। আর ক্যারিয়ার মানে তো এই নয় যে, আপনি সন্তানকে অবহেলা করছেন। আপনার উপার্জন করা অর্থ সন্তানকে সুন্দরভাবে বড় করে তুলতে সহায়ক। এছাড়া আপনার ক্যারিয়ার আপনাকে যে মানসিক সন্তুষ্টি দেয়, তা আপনাকে একজন ভালো মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। আর একজন ভালো মানুষই তো একজন ভালো মা হতে পারেন, তাই না?
* বাড়িতে মা সব সময় কাছাকাছি না থাকলে অনেক সময়ই বাচ্চার মনে ভিত্তিহীন অভিমান বাসা বাঁধে। সে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বোঝাতে হবে আপনার চাকরিটা পরিবার এবং তার ভবিষ্যতের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তার স্কুলে যাওয়ার মতোই আপনার অফিস যাওয়াটাও একই রকম জরুরি, এটা ছেলেবেলা থেকেই তার মনে গেঁথে দিন। একবার তাকে সঙ্গে করে নিজের অফিসে নিয়ে আসতে পারেন।
* বাচ্চার মানসিক সুস্থতা অনেকটাই নির্ভর করে পারিবারিক পরিবেশের ওপর। যেহেতু আপনারা সব সময় তাকে সঙ্গ দিতে পারছেন না, সেজন্য বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি বা অন্য আত্দীয়স্বজনের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন যাতে কোনো ইমার্জেন্সিতে তাদের পাশে পেতে পারেন।
হোম সেফটি : বাড়িতে একা থাকাকালীন বাচ্চাকে স্ট্রিক্ট ইনস্ট্রাকশন দিন সে যেন কাউকে দরজা খুলে না দেয়। আত্দীয়-স্বজন বা নিকট বন্ধু-বান্ধব সবাইকেই আগে থেকে আপনার অনুমতি নিয়ে আপনার অনুপস্থিতিতে আসতে বলুন। অতি পরিচিত হলেও বিনা অনুমতিতে ফাঁকা বাড়িতে না ঢুকতে দেওয়াই ভালো। বাড়ির দরজায় সঠিক উচ্চতায় আই হোল, ডোর চেন এবং ল্যাচের ব্যবস্থা রাখুন।
* বাড়িতে একটা ল্যান্ড লাইন এবং একটা সেলফোন রাখুন যাতে একটা খারাপ হলে অন্যটা ব্যবহার করা যায়। টেলিফোন ডায়রিতে নিজেদের নম্বর, নিকটাত্দীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের এবং অন্যান্য ইমার্জেন্সি নম্বর পরিষ্কার করে টুকে রাখুন। যাতে ইমার্জেন্সিতে সে কাজে লাগাতে পারে।
* বিশ্বাসী না হলে নতুন কাজের লোকের সঙ্গে বাচ্চাকে থাকতে দেবেন না। নতুন কাজের লোক বহাল করার সময় সে আগে যেখানে কাজ করত সেখানে খোঁজ নিন। কাজে যোগ দেওয়ার পর তার কাজকর্ম তত্ত্বাবধান করুন। দেখুন বাচ্চা তার সঙ্গে কমফর্টেবল বোধ করছে কি না।
* বাচ্চা বাড়িতে লাঞ্চ বা খাবার যাই খাক, সেটা যেন গ্যাস জ্বালিয়ে না খেতে হয় সে দিকে খেয়াল রাখুন। মাইক্রোওয়েভ অভেন ব্যবহার করতে শিখিয়ে দিন বা আপনি আগে থেকে খাবার গরম করে রেখে দিন। গিজার, গ্যাস, ইলেকট্রিক ইস্ত্রির মতো গ্যাজেট ব্যবহার না করতে তাকে এনকারেজ করুন।