ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া জিপিএ’র ভিত্তিতে কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি দায়ের করেন।
পরে এই আইনজীবী বলেন. আগামী রোববার রিটের শুনানির চেষ্টা করবো।
রিটে জিপিএ’র ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নীতিমালা এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের নোটিসকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে ওই নীতিমালা ও নোটিসের কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয় রিটে। পাশাপাশি ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে কলেজগুলো নিজস্ব নিয়মে যেন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারে- সেই নির্দেশনাও রিটে চাওয়া হয়।
ইউনুস আলী বলেন, জিপিএ’র ভিত্তিতে ভর্তি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা করলেও গত বছর এবং এ বছর উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে নটরডেম কলেজ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করছে।
“এর ফলে শিক্ষার্থী ভর্তিতে দুই নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে, যা বৈষম্যমূলক। এছাড়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী একই গ্রেড পয়েন্ট পাওয়ায় জিপিএ’র ভিত্তিতে ভর্তিতে সমস্যা হতে পারে। জিপিএ সমান হলে অগ্রাধিকারের এক পর্যায়ে নম্বরও বিবেচনায় নেয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ একজন শিক্ষার্থী কোনোভাবেই তার নম্বর জানতে পারে না। তাই এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়।”
ভর্তির আবেদনের শেষ দিনে এ ধরনের রিট শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী ইউনুস আলী বলেন, “শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তো আবেদন করছেই। এখন আমার রিটের আর্জি অনুসারে আদালত আদেশ দিলে সংশ্লিষ্ট কলেজ আবেদনকারী ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা নিবে অথবা নিজেদের নিয়ম অনুসারে ভর্তি করাবে।”
গত ১৪ মে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা সংক্রান্ত সভা হয়। সভায় গত কয়েক বছরের মতো এবারো মাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতেই একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করার সিদ্ধান্ত হয়।
ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে গত ১৮ মে থেকে টেলিটক মোবাইলের মাধ্যমে এসএমএসে এবং সনাতন পদ্ধতির আবেদন শুরু হয়। ৬ জুন পর্যন্ত আবেদনের সময় দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের। পুনঃনিরীক্ষণে যাদের ফল পরিবর্তন হবে তারা ১০ জুন পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে বলে সিদ্ধান্তে বলা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তে ভর্তির আবেদনপত্রের দাম ১২০ টাকা ঠিক হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভর্তির জন্য মনোনীতদের তালিকা আগামী ১৬ জুন প্রকাশের কথা রয়েছে। বিলম্ব ফি ছাড়া ভর্তি ও টাকা জমা দেয়া যাবে ৩০ জুন পর্যন্ত।
এতে বলা হয়, বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের মেধাক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত অথবা জীববিজ্ঞানে প্রাপ্ত জিপিএ বিবেচনায় আনা হবে।
“আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের ভর্তির ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলায় অর্জিত গ্রেড পয়েন্ট বিবেচনা করা হবে।”
নীতিমালায় বলা হয়, স্কুল ও কলেজ সংযুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিজ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে। তিনশ’র বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অনুমতি আছে এমন প্রতিষ্ঠান ইচ্ছে করলে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। তবে পাঁচশ’র বেশি শিক্ষার্থী হলে অবশ্যই অনলাইনে ভর্তি করাতে হবে।
দেশের সব কলেজে মাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও গত বছর রাজধানীর নটরডেম কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
এবারো তারা ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করেছে জানিয়ে নীতিমালা ঘোষণার দিনই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারি।”
পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে হাই কোর্টে যায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। হাই কোর্ট ওই নীতিমালা নটরডেম কলেজের জন্য ৬ মাস স্থগিত করে। পরে গত সোমবার থেকে আবেদনপত্র বিরতণ শুরু করে কলেজ কর্তৃপক্ষ, যা চলে বুধবার পর্যন্ত।
নটরডেম কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের এসএসসিতে জিপিএ-৫, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ-৪ এবং মানবিক বিভাগে জিপিএ-৩.২৫ পেতে হবে। এই তিন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাবেন আড়াই হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী। অধ্যক্ষ জানান, ৭ জুন প্রাথমিকভাবে যোগ্য শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৮ ও ৯ জুন নেয়া হবে আধা ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা।
আগামী ১৪ বা ১৫ জুন ভর্তির জন্য নির্বাচিতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলেও নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ হেমন্ত পিউস জানান।