আগের দিন বুধবার ওয়াকআউট করে বেরিয়ে গেছে বিরোধী দল। বৃহস্পতিবার বাজেট পেশের সময় তারা যে ফিরছে না তাও নিশ্চিত করেছিলো বুধবার রাতেই। সংসদের স্বাভাবিক নিয়মে তবু তাদের আসনগুলোতে বাজেট বিবরণী বইয়ের ব্যাগ টেবিলের ওপরে রাখা হয়েছে।
টানা ৬ সারিতে সাজিয়ে রাখা ঘিয়া রঙের পাটের ব্যাগগুলোকে তাই নি:সঙ্গই মনে হলো।
এর বিপরীতে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ডান পাশে উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, তার ডানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। এরপরই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের আসন।
স্পিকার তাকে বসে বসেই বাজেট পেশের সুযোগ দিয়েছেন।
শুরুতেই বিদায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে মহাজোট সরকারের সাফল্য ও উন্নয়ন ফিরিস্তি তুলে ধরতে থাকলেন অর্থমন্ত্রী। প্রতিটি খাতে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরার সময় সরকার দলের সাংসদদের টেবিল চাপড়ে সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেলো।
সংসদ নেতা শেখ হাসিনাকে অবশ্য বাজেট বিবরণীতেই মনোযোগী থাকতে দেখা গেলো। মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক সতীর্থদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডান হাতে টেবিল চাপড়াতে দেখা গেলো তাকে।
আর অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার প্রায় পুরো লিখিত বিবরণই ধারাবাহিকভাবে একের পর এক পাতা উল্টে ফলো করতে থাকলেন স্পিকার।
বিরোধী দলহীন সংসদে শুরু হওয়া মহাজোট সরকারের শেষ বাজেট বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ১৬ মিনিটে পেশ করতে শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। প্রথ্ম পর্যায়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট ও ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপনের শিডিউল।
দ্বিতীয় পর্যায়ে সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলী কার্যকরণ ও কিছু আইন সংশোধনের জন্য বিল উপস্থাপন করবেন তিনি।
এবারের বাজেটের আকার হচ্ছে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। তাই নতুন বাজেটে আগের বাজেটের সার্বিক ঘাটতি থাকছে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে অনুন্নয়নমূলক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ২৬ হাজার ৩ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদ ১ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা।
অনুন্নয়ন মূলধন ব্যয় ২০ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা, খাদ্য হিসেবে ২৬৩ কোটি টাকা এবং ঋণ ও অগ্রিম খাতে ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা।
বেলা ৩টা ১০ মিনিটে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী। একই সময়ে স্পিকার এসে আসন গ্রহণ করলে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অধিবেশন শুরু হয়।
অর্থমন্ত্রীকে বাজেট পেশের আহবান জানান স্পিকার।
গত সোমবার শুরু হওয়া বাজেট অধিবেশনের বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিন। প্রতি বছরই এমন দিনে জাতীয় সংসদে বাজেট পেশের রেওয়াজ রয়েছে। এ অধিবেশনের শুরুতে বিরোধী দল যোগ দিলেও সেদিনই ওয়াক আউট করে বেরিয়ে যায়। পরের দিন মঙ্গলবার সংসদে ফিরলেও বুধবার রাতে একই দিনে দ্বিতীয় ও তিন দিনে তৃতীয় দফায় ওয়াকআউটি করে বেরিয়ে যায়। এর পরপরই বাজেট পেশকালে সংসদে না ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করে।