২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে অবকাঠামো, জ্বালানি ও পর্যটনখাতে বড় ধরনের বেসরকারি বিনিয়োগের ধারণা নিয়ে এসেছিল ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার। প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপ (পিপিপি)নামের এ ধারণা পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মহাজোটের বিগত চার বাজেটে উপস্থাপিত হয়। কিন্তু এতে সাড়া মেলেনি দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের। তবুও থেমে নেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। নতুন বাজেটেও পিপিপি গুরুত্ব পাচ্ছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার আবারো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রায় চার ডজন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
২০১২-১৩ অর্থবছরে নেওয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত না হলেও সরকার নতুন অর্থবছরের জন্য আবারো ৪৪টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পরপর চার বছর যে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল তাও ব্যয় হয়নি। তবে রেলওয়ের খাসজমিতে দলীয় লোকদের বরাদ্দ দিতে নতুন এডিপিতে ১০টি হোটেল তৈরির প্রকল্প রাখা হয়েছে।
পিপিপির প্রকল্পের দিকে কেউ ফিরে তাকায়নি। পিপিপি বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের ব্যর্থতার পরও নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো প্রকল্প। ২০১০-১১ অর্থবছরে ২৩টি, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৪টি ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৩টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। আর চলতি অর্থবছরের পিপিপি খাতের প্রকল্পের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল।
আগের ২০১০-১১ অর্থবছরে পিপিপি খাতে মোট ২৩টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। সেগুলো কাগজেই ছিল, আলোর মুখ দেখেনি। সেখানে পল্লী উন্নয়ন খাতে একটি, বিদ্যুৎ খাতে পাঁচটি, পরিবহন খাতে একটি, ভৌত অবকাঠামো খাতে আটটি, স্বাস্থ্য খাতে পাঁচটি ও সমাজসেবা খাতে তিনটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফাইওভারটির নির্মাণ কাজ চলছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি আবার আগামী অর্থবছরের জন্য নেওয়া হয়েছে।
২০১৩-১৪ সালের এডিপিতে পিপিপির জন্য যে ৪৪টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১৩টি, সেতু বিভাগের চারটি, রেল খাতের ১৭টি, যোগাযোগ খাতের দু’টি প্রকল্প।
রেলওয়ে খাতের ১৭টি প্রকল্পের মধ্যে বেশির ভাগই রেলের ভূমি ব্যবহার করে শপিংমল, পাঁচ তারকা হোটেল ও গেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হবে। এখানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে রেলের জমি ব্যবহার করে দু’টি পাঁচ তারকা হোটেল ও শপিংমল করা হবে। এ ছাড়া কুমিল্লা, লালমনিরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেটে একটি করে হোটেল ও গেস্ট হাউজ করা হবে।
২০১২-১৩ অর্থবছরের পিপিপিতে পরিবহন খাতের প্রকল্প চারটি হলো ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ (জুলাই ’১০-ডিসেম্বর ’১৪), পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে দ্বিতীয় পদ্মাসেতু নির্মাণ (ডিসেম্বর ’১২-জুন ’১৭), ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ (ডিসেম্বর ’১২-জুন ’১৭), কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ (ডিসেম্বর ’১২-জুন ’১৭)। এ প্রকল্পগুলো আবার ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য রাখা হয়েছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পিপিপির উদ্যোগে বড় বড় কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো কোনো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি।
ব্যাপক কর্মসংস্থান ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে বা ২০০৯-১০ অর্থবছর বাজেটে পিপিপির ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর বিনিয়োগ সম্পর্কিত একটি নির্দেশিকা তৈরি করতেই দেড় বছর কেটে যায়। পিপিপির জন্য পৃথক অফিস ও একজন সিইও নিয়োগ করতে লাগে দুই বছর। পিপিপি অফিসে পুরোপুরি জনবল নিয়োগ এখনো হয়নি।
এদিকে এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত ২৪ শতাংশ। যার মধ্যে সরকারি বিনিয়োগ মাত্র ৪ শতাংশ এবং বেসরকারি হলো ২০ শতাংশ। তবে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চাইলে বিনিয়োগ ৩৪ থেকে ৩৫ শতাংশ হতে হবে। এ এক্ষেত্রে পিপিপি একটি কার্যকর কৌশল হতে পারে। পিপিপি বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে বলে নতুন এডিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে।