দিশেহারা বিএনপি: তারেকের জন্য অপেক্ষা

0
184
Print Friendly, PDF & Email

সরকারের কৌশলের কাছে দিশেহারা বিএনপি এখন তারেকের অপেক্ষায়। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ফেরার প্রহর গুণছেন দলটির নেতাকর্মীরা। নভেম্বরে তারেকের ফেরার চমকদার গুঞ্জন দলে বিরাজমান, তবু এখনই অধীর তারা। তাদের বিশ্বাস, তারেক ফিরলে দলের বেসামাল অবস্থা নিমেষেই কেটে যাবে।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপে দলটির অভ্যন্তরের এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। 

সূত্র জানায়, সিনিয়র নেতারা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন তারেকের, মোকাবেলা করছেন প্রতিকূলতার। কিন্তু জুনিয়রদের অবস্থা ভিন্ন। ক্রমশই তারা উদগ্রীব হয়ে পড়ছেন তারা। নিজেদের সীমিত ক্ষমতা দিয়ে খোঁজখবর করছেন তারেকের। কবে ফিরবেন তারেক, কবে দলের হাল ধরবেন- সেই আলোচনা, জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।

বিএনপির এসব নেতাকর্মীর বিশ্বাস, সরকার তারেককে ভয় পায়। তারেক এলে দলের নেতাকর্মীদের অসহায়ত্ব, হয়রানি, অনৈক্য ও দ্বন্দ্ব ঘুচে যাবে বলে মনে করেন তারা।

সূত্র জানায়, ‘উপযোগী পরিবেশ তৈরি হলে তারেক ফিরবেন’ বলে বড় নেতারা বারবার নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু আশার বাণী নয়, তারেককে চাক্ষুস দেশের মাটিতে চান নেতাকর্মীরা।

সূত্রমতে, নেতাকর্মীদের অনেকেই কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতি না বুঝে দলের সিনিয়র নেতাদের প্রতি অভিমান করছেন। তারা ভাবছেন, নেতারা তারেককে ফেরাতে যথাযথ উদ্যোগ নিচ্ছেন না, তাকে তারা উপেক্ষা করছেন। এই চিন্তায় সিনিয়রদের অনেকের প্রতি মাঝারি ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ।

অন্যদিকে, সিনিয়ররাও এসব হজম করছেন। করছেন তারেকের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ আদান-প্রদানও।

আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, “দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোতে তারেককে ঘিরে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা তা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায় নেতাকর্মীদের মধ্যে। তাকে ফেরানোর উদ্যোগ দেখতে চায় তারা।”

তিনি বলেন, “কর্মসূচি নিয়েও দলের নেতাকর্মীদের এতোটা আগ্রহ দেখি না, যতোটা দেখি তারেকের ব্যাপারে।”

যুবলীগ ও ছাত্রলীগের চাপে কোণঠাসা যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তারেকের পথ চেয়ে রয়েছেন বলে জানান সংগঠনগুলোর একাধিক নেতা।

যুবদলের এক নেতা বলেন, “তারেক যেদিন দেশে ফিরবেন, সেদিন অঘোষিত হরতাল হবে। তাকে স্বাগতমের পরিকল্পনা এখনই গুছিয়ে রেখেছি। তখন দলের শক্তি বাড়বে শতগুণ।”

এই নেতা বলেন, “ম্যাডাম (খালেদা) এখন যা চাইলেও করতে পারছেন না, তারেক ফিরলে সেটাই হবে।”

নির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেন, “যেসব সিনিয়র নেতা তার প্রতি আস্থা রাখতেন না, তারাও নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তারাও এখন তাকে চান। বুঝতে পেরেছেন, তারেক আর যাই হোক দলের সঙ্গে বেঈমানি করবেন না। কারণ খালেদা, তারেক ও বিএনপি আসলে একাত্ম।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, “তারেক কম বয়সে রাজনীতিতে আসেন। মুখে কিছু না বললেও অনেকে সন্দিহান ছিলেন দলে তার ভূমিকা নিয়ে। কিন্তু আজ তাকে দলে বিকল্পহীন নেতা মনে করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “তারেক বিনয়ী ও শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী মানুষ। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিতে এবং দলে তিনি শৃঙ্খলা আনতে চেষ্টা করেছেন সামর্থ্য অনুযায়ী।”

এই নেতা বলেন, “তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। চিকিৎসা ও উচ্চশিক্ষার্থে তিনি বিদেশে আছেন। তার মনটা দেশেই পড়ে আছে। পিতার স্বাধীনতা ঘোষণা ও মায়ের নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে দেশে ফেরার জন্য তিনিও আকুল। সময়মতো তিনি ফিরবেনও।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, “তারেক জনমানুষের নেতা। জাতি তার অপেক্ষায় আছে। তিনি এদেশের রাজনীতিতে উজ্জ্বল নক্ষত্র।”

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, “খালেদা জিয়ার ছেলে বলে নয়, দলে অবদান রেখেই তারেক জনপ্রিয়। তাই সবাই তার অপেক্ষায় রয়েছেন। দেশের চলমান অস্থিরতা লাঘবে তারেকের বিকল্প নেই।”

দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “তারেক সময়মতোই দেশে ‍ফিরবেন, রাজনীতি করবেন।” তারেকের জন্য নেতাকর্মীদের প্রতীক্ষার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “২০০৯ সালে কাউন্সিলররা তারেককে দলের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচন করেন বিপুল করতালির মাধ্যমে। তার বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই।”

দুদু বলেন, “তারেক দলের শ্রদ্ধাভাজন, অবিসংবাদিত ও নন্দিত নেতা। তার প্রজ্ঞা ও দুরদৃষ্টির প্রতি সবার দৃঢ় আস্থা ও অটল বিশ্বাস রয়েছে। শুধু দল নয়, সমগ্র দেশ এখন তারেকের অপেক্ষায়।”

বিরোধীদলীয় নেতার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, “তারেক ইস্যুতে বিএনপিতে কোনো বিভ্রান্তি নেই। জুনিয়ররা তারেকের অনুসারী, মাঝের স্তরের নেতারা তাকে প্রেরণা মনে করেন। আর সিনিয়ররা তার মাঝে নতুন আশা পান।”

দলের মিডিয়া উইং সদস্য সাইরুল কবির খান জানান, গুলশান অফিসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় দলের অনেকেই তাদের কাছে তারেক রহমানের খোঁজ নেন। তারেককে ফেরাতে দলের উদ্যোগ জানতে উদগ্রীব দেখা যায় তাদের।

শেয়ার করুন